ইয়ান ফ্লেমিংয়ের লেখা ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের সপ্তম উপন্যাসের নাম ছিল গোল্ডফিঙ্গার। তিনি ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির দিকে বইটি লেখেন। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র অরিক গোল্ডফিঙ্গারের সোনা পাচারের রহস্য উদ্ঘাটন করা ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা জেমস বন্ডের কাজ।
গোয়েন্দাদের মতো গোল্ডফিঙ্গারের আরেক রহস্যের জট খুলতে বসেছি। তবে এই গোল্ডফিঙ্গার মানুষ না, একটা গাছ, লতানো গাছ। সোনার মতো উজ্জ্বল কমলা লাল আঙুলসদৃশ ফুল ফোটে সে গাছে। এ জন্যই এ গাছের নাম রাখা হয়েছে গোল্ডফিঙ্গার প্ল্যান্ট বা গোল্ডফিঙ্গার ভাইন।
চৈত্র মাসের ২২ তারিখ, মধ্য দুপুর, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। এই প্রচণ্ড গরমে কিছুই ভালো লাগছিল না। কিন্তু মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের সুলতানপুর গ্রামে প্রকৃতিবন্ধু তানভীরের বাগানে গিয়ে আঙুলের মতো এই ফুলটা দেখে ভালো লেগে গেল। মাসখানেক আগে সাভারে বরিশাল নার্সারিতে এই ফুল দেখেছিলাম। সেই গাছে তখন পাতা ছিল না। নিষ্পত্র ডালে দুটি ফুল ফুটে ছিল। তাই পাতাহীন গাছে শুধু ফুল দেখে গাছটাকে চেনা সম্ভব হয়নি। তানভীর ফুলটির নাম বললেন গোল্ডফিঙ্গার। এ গাছটায় ফুল তো আছেই, সেই সঙ্গে পেলাম অনেকগুলো পাতার দেখা।
গোল্ডফিঙ্গারের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Juanulloa mexicana (সমনাম Juanulloa aurantiaca, অরান্টিয়াকা মানে কমলা) এবং গোত্র সোলানেসি। অর্থাৎ গাছটা আলু-বেগুন গোত্রের। গোল্ডফিঙ্গার প্ল্যান্ট একটি কাষ্ঠল লতানো স্বভাবের বহুবর্ষজীবী পাতাঝরা লতা বা গুল্ম প্রকৃতির গাছ। সাধারণত অন্য গাছের ওপর অবলম্বন করে বাড়তে থাকে। গাছ ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা উপবৃত্তাকার, ৬ থেকে ২২ সেন্টিমিটার লম্বা, শীতকালে পাতা ঝরে যায়, বসন্তে নতুন পাতা গজায়। পাতার বোঁটার কাছে গোড়া ও অগ্রভাগ ভোঁতা বা সূক্ষ্ম। পাতার কিনারা মসৃণ, পাতা ঘন সবুজ, ওপরের পিঠ পশমহীন, কিন্তু নিচের পিঠ তারকাসদৃশ সূক্ষ্ম পশমযুক্ত বা রোমশ। ফুল নলাকার, প্রায় ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, পাপড়ি কমলা, মঞ্জরিতে কয়েকটি ফুল ফোটে। পাঁচটি বৃতি যুক্ত হয়ে মরিচের মতো একটি বিশেষ গড়ন তৈরি করে। বৃতি পঞ্চকোণী শিরযুক্ত, নলাকার, গোড়ার দিকে চওড়া, আগার দিকটা সরু, কমলা রং। বৃতির মুখ থেকে পাপড়িগুলো উঁকি দেয়, বৃতির চেয়ে পাপড়িগুলো কিছুটা লম্বা। গাছটির জন্মভূমি মেক্সিকো। বিদেশের বাগানে সুদর্শন গাছ হিসেবে লাগানো হয়।
এটি Juanulloa গণের উদ্ভিদ। বিশ্বে এ গণের ৮টি প্রজাতি আছে। জুয়ানুল্লওয়া গণের নামটি দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ অনুসন্ধানকারী ১৮ শতকের দুজন স্প্যানিশ বিজ্ঞানী জর্জ জুয়ান ওয়াই স্যান্টালিকা এবং আন্তোনিও ডি উল্লোয়ার নামের স্মারণিক। প্রজাতিগত নামের শেষাংশ মেক্সিকানা নামটি এসেছে এর জন্মভূমি মেক্সিকো থেকে। এর ফল খেয়ে পাখিরা বৃক্ষের ওপর বিষ্ঠা ত্যাগ করে। সেই বিষ্ঠার সঙ্গে যে বীজ থাকে, তা থেকে সেই বৃক্ষের ওপরেই এ গাছ জন্মায় ও বেঁচে থাকে। এ জন্য একে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদও বলা হয়।
নজরকাড়া রং, মোমের মতো আবরণবিশিষ্ট বৃতি, উজ্জ্বল কমলা রঙের বিশেষ গড়ন ও ফুলের দীর্ঘস্থায়িত্ব একে বাগানিদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। গাছ ছেঁটে রাখলে ঝোপালো হয়। ফুলের বৃতি প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত গাছে থাকে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে ফোটা বৃতির ভেতরে থাকা লালচে-কমলা রঙের ফুলগুলো দুই দিনের বেশি থাকে না। মৌটুসি পাখি বা হামিংবার্ড দ্বারা এর পরাগায়ন ঘটে। অর্কিড বা অন্যান্য পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের মতো এ গাছের পাতাও চামড়ার মতো পুরু। পাতার এরূপ গড়ন থাকায় এ গাছ থেকে পানির ক্ষয় কম হয়। ফল ম্লান হলুদ রঙের ও বেরি প্রকৃতির, পাখি ও ছোট প্রাণীরা এর ফল খায় ও দূরবর্তী স্থানে বিষ্ঠাত্যাগের মাধ্যমে বংশবিস্তারে সাহায্য করে। তবে এর ফল মানুষের জন্য বিষাক্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মহাকাশে অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান
মহাকাশে অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’ নামের গ্রহটি নক্ষত্রের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করছে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বড়। চ্যামেলিয়ন নক্ষত্রমণ্ডল থেকে প্রায় ৬২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে গ্রহটি।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, গ্রহটি কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে না। ফলে অনেকটা স্বাধীনভাবে মহাকাশে অবস্থান করছে গ্রহটি। শুধু তা–ই নয়, গ্রহটি তার চারপাশের মহাজাগতিক ডিস্ক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ছয় শত কোটি টন গ্যাস শুষে নিচ্ছে। এমন আচরণ সাধারণত তরুণ নক্ষত্রের মধ্যে দেখা যায়।
গ্রহটির বিষয়ে ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী ভিক্টর আলমেনড্রোস-আবাদ বলেন, মানুষ বিভিন্ন গ্রহকে আপাত শান্ত ও স্থিতিশীল জগৎ হিসেবে ভাবতে পারে। তবে নতুন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা দেখছি মহাকাশে স্বাধীনভাবে ভাসমান গ্রহ বেশ বিস্ময়কর হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চিলির আতাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরির (ইএসও) ভিএলটির এক্স-শুটার স্পেকট্রোগ্রাফের মাধ্যমে গ্রহটির সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নক্ষত্রের মতোই শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র গ্রহটির আচরণকে প্রভাবিত করছে। নতুন গ্রহটির অদ্ভুত এ আচরণ মহাকাশের গ্রহ ও নক্ষত্রের মধ্যকার পার্থক্য কমিয়ে ফেলেছে। এর ফলে গ্রহ ও নক্ষত্র গঠনের প্রক্রিয়া আগে যা ভাবা হয়েছিল, তা পরিবর্তন হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজের বিজ্ঞানী আলেক্স শোলজ জানান, অদ্ভুত গ্রহটি নক্ষত্রের মতো গঠিত সবচেয়ে কম ভরের বস্তু নাকি তাদের জন্মস্থান থেকে ছিটকে আসা বিশাল কোনো গ্রহ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নতুন এই আবিষ্কার আসলে মহাকাশে নক্ষত্র ও গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
সূত্র: এনডিটিভি