দৃশ্যমান হচ্ছে মুক্তারপুর-পঞ্চবটি দ্বিতল সড়ক, খুলে যাচ্ছে স্বপ্নের দুয়ার
Published: 4th, May 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ আরও সহজ ও দ্রুত করতে নির্মিত হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত মুক্তারপুর-পঞ্চবটি দ্বিতল সড়ক। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এ সড়কের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৬ সালের শেষের দিকে পুরো কাজ সম্পন্ন হবে। কাজ শেষ হলে খুলে যাবে স্বপ্নের দুয়ার। অবসান হবে দীর্ঘদিনের যানজট ও সীমাহীন দুর্ভোগ।
নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করতে এখন দ্বিতল সড়কে চলছে ডেস্কস্ল্যাব বসানোর কাজ। পাইল, পিয়ার ও ডেস্ক প্যানেলসহ প্রকল্প জুড়েই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দিনরাত প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিরলস প্রচেষ্টায় দৃশ্যমান হয়ে উঠছে দ্বিতল সড়কটির অধিকাংশ অবকাঠামো।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে রাজধানীর সহজ যোগাযোগের জন্য পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়নে পঞ্চবটি মোড় থেকে ছয় লেনে ৩১০ মিটার করে ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ দুই দিকে প্রসারিত হবে। পাশাপাশি পঞ্চবটি মোড় থেকে শীতলক্ষ্যা-৩ সেতুর গোলচত্বর হয়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত হবে চার লেন সড়ক। এর মধ্যে পঞ্চবটি থেকে চর সৈয়দপুরের শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেন সড়ক হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি দুই লেন নিচতলায়। মুক্তারপুর সেতু থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত ১০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে তিন ধরনের সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হচ্ছে ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। নিচতলা ফ্রি হলেও দোতলা সড়কে চলাচলে লাগবে টোল।
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মুক্তারপুর-পঞ্চবটি দ্বিতল সড়কের কাজ
প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর যানজট এড়িয়ে এই সড়কে যোগাযোগের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনির।
তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা জেলার সাথে সুষ্ঠু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। চট্রগ্রাম সিলেট থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন ঢাকার ভিতর দিয়ে না গিয়ে এ সড়কে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের যোগাযোগ এবং অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত করতে প্রকল্প এলাকায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মো.
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মুক্তারপুর-পঞ্চবটি দ্বিতল সড়কের কাজ
তিনি জানান, ২ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই পথে যানবাহনের গতি বাড়বে প্রায় পাঁচ গুণ। প্রকল্পটি জিওবি এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২০ সালে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র ক জ দ র ত গত ত শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
আমানত রক্ষা করা ইসলামের সামাজিকতার সৌন্দর্য
আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান আত্মকেন্দ্রিকতার প্রভাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসলামের একটি মৌলিক মূল্যবোধ—‘আমানত’—চিন্তা ও চর্চা থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে।
অথচ আমানত শুধু একটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক ধারণা নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত আত্মিক ও নৈতিক দায়িত্ব, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষের ওপর অর্পণ করেছেন।
পবিত্র কোরআনে এই আমানতের গুরুত্ব অত্যন্ত জোরালোভাবে বর্ণিত হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত জুলুমকারী ও মূর্খ।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২)
এই আয়াতে আমানতের মর্যাদা ও এর ওজনের গভীরতা প্রকাশ পায়। আল্লাহর এই দায়িত্ব মানুষের ওপর অর্পিত হওয়া তার বিশেষত্বের প্রমাণ, তবে এটি একই সঙ্গে তার জন্য একটি বড় পরীক্ষা।
নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল।সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২আমানতের ব্যাপকতা‘আমানত’ শব্দটির অর্থ শুধু আর্থিক বা সামাজিক বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি ব্যাপক ধারণা, যা মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমানতের মধ্যে রয়েছে:
ব্যক্তিগত আচরণে সততা: কথায়, কাজে ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সত্যবাদিতা।
সামাজিক দায়িত্ব: পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন।
পরিবেশের প্রতি যত্ন: আল্লাহর সৃষ্টির খিলাফা হিসেবে প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা।
আধ্যাত্মিক আনুগত্য: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ও তাঁর আদেশ পালন।
আমানত একটি ইবাদতের অংশ, যা শুধু দুনিয়ার জন্য নয়, বরং আখিরাতের জবাবদিহির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে।
আরও পড়ুনইসলামে আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব২২ জুলাই ২০২২নবী–যুগে আমানতের উদাহরণইসলামের প্রাথমিক যুগে নবীজি (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদিনার সমাজ আমানতের একটি জীবন্ত উদাহরণ। মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।
এই সম্পর্ক শুধু সম্পদের বণ্টন নয়, বরং পারস্পরিক দায়িত্ব ও বিশ্বাসের একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এমনকি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর আনসারি ভাই সা’দ ইবনে রাবী (রা.) তাঁর সম্পদের অর্ধেক এবং এমনকি তাঁর স্ত্রীদের একজনকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই ত্যাগ ও বিশ্বাস আমানতের প্রকৃত চিত্র। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭৮০)
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।এই ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে মদিনার সমাজে একতা, সহানুভূতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, যা আজও মুসলিম সমাজের জন্য একটি আদর্শ।
আধুনিক সমাজে আমানতের অবক্ষয়দুর্ভাগ্যবশত, আজকের সমাজে আমানতের চর্চা দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, গোষ্ঠীবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদগুলোতে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বিভেদ, পারিবারিক স্বার্থপরতা এবং একে অপরের প্রতি সন্দেহ সমাজের ঐক্যকে ভঙ্গ করছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায়, অসৎ আচরণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসের অপব্যবহার।
এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও ‘নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা’ একটি নতুন সামাজিক আদর্শ হয়ে উঠেছে। মানুষ অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এটি শুধু সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ: আল্লাহ তা’আলা মানুষকে এই পৃথিবীর খলিফা বানিয়েছেন, যার মধ্যে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বও অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু আজকের উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস, নদী ও বাতাসের দূষণ এবং প্রাণপ্রবাহের ক্ষতি আমানতের এই দিকটিকে উপেক্ষা করছে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার পর পৃথিবীতে পুনরায় বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)
প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো এটিকে সংরক্ষণ করা, অপচয় রোধ করা এবং সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা।
আরও পড়ুনপ্রলোভনের এই যুগে নিজেকে রক্ষার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫আমানতের নষ্টের ভবিষ্যদ্বাণীনবীজি (সা.) আমানতের অবক্ষয় সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন: ‘মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৫)
এই হাদিসটি একটি গভীর সতর্কবাণী। এটি ইঙ্গিত করে যে একটি সময় আসবে যখন বিশ্বস্ততা এতটাই বিরল হয়ে পড়বে যে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী আধুনিক সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে স্বার্থপরতা ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬আমানতের পুনর্জাগরণের উপায়আমানতের মূল্যবোধকে পুনরায় জীবন্ত করতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে:
সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা: কথা ও কাজে সততা বজায় রাখা এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।
দায়িত্বশীলতা ও সততা: পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ।
ন্যায়পরায়ণ আর্থিক আচরণ: ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততা।
প্রকৃতির প্রতি যত্ন: পরিবেশ সংরক্ষণ, অপচয় রোধ ও সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা।
পারস্পরিক সহযোগিতা: সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য গড়ে তোলা।
আমানত শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত, যা আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্যের প্রকাশ। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। আমানতের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে আমরা একটি দয়ালু, ন্যায়ভিত্তিক ও ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এটি আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।
আরও পড়ুনআখিরাতে বিশ্বাস সত্কর্মের অনুপ্রেরণা০৪ মে ২০১৮