যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার বলেছেন, ইউক্রেন হয়তো রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে—তিনি এটি মনে করলেও, এ নিয়ে এখন তাঁর সন্দেহ রয়েছে।

ট্রাম্পের এ মন্তব্য কিয়েভের প্রতি নতুন একধরনের সন্দেহ তৈরি করল। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে মুখোমুখি বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

‘তারা (ইউক্রেন) এখনো জিততে পারে। আমি মনে করি না, তারা জিতবে। তবে তারা এখনো জিততে পারে’, গতকাল হোয়াইট হাউসে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প।

তারা (ইউক্রেন) এখনো জিততে পারে। আমি মনে করি না, তারা জিতবে। তবে তারা এখনো জিততে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

গত মাসে ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘদিনের অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে কিছু জমি ছাড়তে হবে এবং দেশটি সব হারানো অঞ্চল রাশিয়ার কাছ থেকে ফেরত পেতে পারে।

কিন্তু গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপ এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প আবারও অবস্থান বদলে কিয়েভ ও মস্কোকে তাদের ‘বর্তমান অবস্থানেই থামতে’ এবং নিষ্ঠুর যুদ্ধ শেষ করতে বলেন।

আরও পড়ুনরাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প১৮ অক্টোবর ২০২৫

গতকাল কিয়েভের অবস্থান নিয়ে তাঁর সংশয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, ট্রাম্প ইউক্রেনের সম্ভাবনা নিয়ে ওই নেতিবাচক মূল্যায়ন করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো বলিনি, তারা জিতবে। আমি বলেছি, তারা জিততে পারে। সবকিছুই ঘটতে পারে। যুদ্ধ অনেকটা অদ্ভুত ব্যাপার।’

গতকাল সকালে জেলেনস্কি বলেন, হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প তাঁকে জানিয়েছিলেন যে পুতিনের বড় দাবি, ইউক্রেনকে তার পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল পুরোপুরি ছাড়তে হবে। পুতিন এখনো এ দাবিতে অনড় আছেন।

গত মাসে ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘদিনের অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে কিছু জমি ছাড়তে হবে এবং দেশটি সব হারানো অঞ্চল রাশিয়ার কাছ থেকে ফেরত পেতে পারে।

এরপরও জেলেনস্কি বৈঠকটি ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; যদিও ট্রাম্প ইউক্রেনকে তাঁর প্রত্যাশিত দূরপাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আরও পড়ুনরাশিয়ার শর্ত মেনে চুক্তি করুন ১৫ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সম্ভাবনার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। এটি দিলে ইউক্রেনীয় সেনাদের রাশিয়ার ভূখণ্ডের আরও গভীরে আঘাত হানার সুযোগ দিত।

কিন্তু পুতিনের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম ফোনালাপের পর ট্রাম্পের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আপাতত তিনি ইউক্রেনকে এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ করতে রাজি নন।

আরও পড়ুনজেলেনস্কিকে চুক্তির পরামর্শ ট্রাম্পের১৮ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিন দীর্ঘ ফোনালাপ, হাঙ্গেরিতে হবে বৈঠক১৬ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামকে নিয়ে ভালো খবর পাব’

‘প্রতিদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসি। প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভালো কোনো খবর পাব।’

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁকে নিয়ে কথাগুলো বলেন মীর জসিম।

আজ রোববার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে কথা হয় মীর জসিমের সঙ্গে। তিনি নিজেকে বিএনপির একজন সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে জানালেন মীর জসিম। তিনি বলেন, প্রতিদিন আশুলিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। অফিসে ঢোকার আগে এক বার হাসপাতালের সামনে আসেন।

মীর জসিম বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নন। তবে খালেদা জিয়ার কারণে তিনি ছোটবেলা থেকে বিএনপিকে সমর্থন করেন।

মীর জসিম বলেন, ‘প্রতিদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসি। প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভালো কোনো খবর পাব। গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রচার হয়, সেগুলো দেখি ঠিকই। কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না। তাই এখানে ছুটে আসি। না এলে ভালো লাগে না। মনের ভেতরে কেমন জানি করে।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে লোকজন ভিড় করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ আছে। তাঁরা এখানে এসে দোয়া করছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

যারা এখানে আসছেন, তাঁরা বলছেন, তাঁদের প্রত্যাশা একটাই—খালেদা জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিএনপির আরেক সমর্থক আনোয়ার হোসেন। তিনি এসেছেন নেত্রকোনা থেকে। আনোয়ার হোসেন বলেন, গত দুদিন ধরে তিনি ঢাকায় আছেন। তিনি মূলত খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতেই এসেছেন। তিনি জানেন, খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ হবে না। তারপরও এসেছেন মনের টানে।

সকাল নয়টা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, ধীরে ধীরে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা এখানে জড়ো হচ্ছেন। তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুনএখনো বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া ১০ ঘণ্টা আগে

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়। এ কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি বলে চিকিৎসক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার অর্থাৎ দীর্ঘ যাত্রার ধকল নিতে শারীরিকভাবে উপযোগী কি না, সেটার ওপর।

আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই ঢাকায় আসবে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স২০ ঘণ্টা আগে

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার নানা শারীরিক জটিলতার মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা ওঠানামা করছে। এর কিছু কিছু কখনো নিয়ন্ত্রিত, আবার হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কিডনির সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল, সেটি বেড়েছে। কিডনির কার্যকারিতা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফুসফুসেরও উন্নতি আছে। তবে তিনি এখনো আশঙ্কা মুক্ত নন।

আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ