তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি
Published: 4th, November 2025 GMT
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে দাবি করে ১৪ বছর আগে দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
বিএনপির মহাসচিবের করা এ-সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের এ রায় আইনের দৃষ্টিতে রায় নয়। আইনগতভাবে তা রিভিউর অপেক্ষা রাখে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ সপ্তম দিনের মতো শুনানি হয়। আগামীকাল বুধবার আবার শুনানি হবে। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
‘ভোটাধিকার হরণ সংকটের কারণ’
বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে আপিলের পক্ষে শুনানিতে আজ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসও অংশ নেন। বিচারপতি খায়রুল হক দেওয়া রায় ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন’ দাবি করে তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি নন এবং তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ এই সময়ে অনির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। এই রায় স্ববিরোধী। বিচারপতি খায়রুল হক শুধু আদালতের প্রতি নয়, বরং পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—ওই রায়ের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এই আইনজীবী বলেন, দেশের মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনগণকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, যখন কোনো রায় হয়, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আপিল বিভাগ যে রায়ই দেন না কেন, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তাতে এই আপিল বিভাগের রায়ের প্রভাব পড়বে না। বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তা তার পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপ ল ব ভ গ ব চ রপত আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান আজ শনিবার এই আদেশ দেন।
বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাঁকে সিএমএম আদালতের ৯তলার এজলাসে নেওয়া হয়।
হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ২০০ টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হিরো আলমের মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলার বাদী রিয়া মনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।’
এর আগে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তাঁর সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারেই হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৩ জুন হাতিরঝিল থানায় রিয়া মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। ওই সময়ে হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। এতে বাদীর শরীরে জখম হয়। এ সময় তাঁর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনরিয়া মনির মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার২ ঘণ্টা আগে