শি জিংপিংয়ের সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাৎ করলেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান
Published: 10th, May 2025 GMT
২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সাক্ষাৎ করেছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা সামরিক নেতার জন্য এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সঙ্গে সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।
শুক্রবার রাশিয়ার বিজয় দিবস উপলক্ষে মস্কো সফরের সময় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মিন অং হ্লাইং। সেসময় তিনি মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর মানবিক সহায়তা পাঠানোয় চীনকে ধন্যবাদ জানান। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রের বরাতে ‘দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ইরাবতীর
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান চীনকে ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দেশটির অবস্থানকে সমর্থন করার জন্য’ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং মিয়ানমারকে ‘জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলতে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি দেশটির সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। মিয়ানমারকে চীনা নাগরিক ও প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সীমান্ত অপরাধ দমনেও ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করেন। এরপরই দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত বহু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি চীনঘনিষ্ঠ বলে ধারণা করা হয়।
মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তবে তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে মিয়ানমারের সহিংসতা প্রভাব ফেলতে পারে বলে চীন উদ্বিগ্ন। তাই বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা সরকারের মধ্যস্থতায়ও ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন মিয়ানমারের বড় মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও, দেশটির সীমান্তবর্তী কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে। বিশেষ করে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী বেইজিং।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান হিসেবে রাজধানী নেপিদোতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মিন অং হ্লাইং।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী
২০১০ সালে ঢাকায় এসেছেন বান্দরবানের মেয়ে জৌপারী লুসাই। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, ঘুণাক্ষরেও অভিনয়ে আসার কথা ভাবেননি। ২০১২ সালে এনটিভির টেলিফিল্ম শেষ বলে কিছু নেই দিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান জৌপারী। তখন বিএএফ শাহীন কলেজে পড়তেন। এক বন্ধুর কাছে শুনলেন টেলিফিল্মে এক কিশোরী চরিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান। পরে অডিশন দিয়ে টিকে যান।
নিজেকে প্রথমবার ছোট পর্দায় দেখে রীতিমতো আপ্লুত হয়েছিলেন। সেই সময়ের অনুভূতিকে অনেকটা ‘প্রথম প্রেমে পড়ার’ মতো বললেন এই তরুণ অভিনেত্রী। টেলিফিল্মটি প্রচারের পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন, যেটি তাঁকে অভিনয়ে অনুপ্রাণিত করেছে।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ থেকে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের আলোচিত সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এ মিমি চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন জৌপারী। এটি ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেলনাছবির বিজ্ঞাপন করেছিলাম, সেখানে নির্মাতা সাদ ভাইও ছিলেন।’ খেলনাছবির সূত্র ধরেই সিনেমাটিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ২০১৭ সালে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন, ২০১৮ সালে শুটিং করেন।
জৌপারী লুসাই বলেন, ‘সিনেমাটি করার আগে অভিনয় নিয়ে খুব একটা বুঝতাম না। সিনেমাটি করার পর অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিই। তখন মনে হয়েছিল অভিনয় চালিয়ে যাব। সঙ্গে অভিনয় শিখবও।’
বঙ্গ অরিজিনাল সিরিজ বিএনজি-তে অভিনয় করে তরুণ দর্শকের কাছে পৌঁছেছেন জৌপারী। আরেক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সারভাইভ-এও মূল চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘বিএনজি ও সারভাইভ দুটি কাজের জন্যই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। দুটি কাজ দেখে অনেকে আমাকে চিনেছেন।’
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে কোন কাজটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলবেন? জৌপারী বলেন, ‘আসলে এটা আমার পক্ষে বলা কঠিন। প্রতিটা কাজই মন থেকেই করি। আমি কাজ করে যেতে চাই, কাজটাকে ভালোবাসি।’
এর মাঝে অভিনয়ে নিজেকে শাণিত করতে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের কর্মশালায় অংশ নেন জৌপারী। জামিল আহমেদ নির্দেশিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি-এ একজন নির্যাতিতা পাহাড়ি নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ইরা
২২ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া চরকির ফ্ল্যাশ ফিকশন পারফেক্ট ওয়াইফ-এ একজন জাপানি তরুণী ইরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জৌপারী। ফিকশনটি পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ফিকশনটি মুক্তির পর ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমার পরিচিতদের মধ্যে যাঁরা কাজটা দেখেছেন, তাঁরা সবাই চরিত্রটা পছন্দ করেছেন। অনেকে বলেছেন, তুমি রোবট না মানুষ।’
সেলিমের পরিচালনায় এবারই প্রথম কাজ করেছেন তিনি। কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো। কারণ, উনি আসলে অ্যাক্টিংটাকে দারুণভাবে ডিল করেন। খুবই আরাম করে আমি কাজ করেছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক অনেক ম্যাটার করে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যে রকম আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেভাবে ইচ্ছা তুমি করো, ঠিক একইভাবে আমি বলব যে এই চরিত্রটা (ইরা) করতে গিয়ে আমি আমার মনে হয়েছে যে আমি আরও বেশি এনজয় করেছি।’
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান
ওটিটি, প্রেক্ষাগৃহের সিনেমা থেকে টিভি নাটক—সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন জৌপারী। তিনি বলেন, ‘টিভি হোক, ওটিটি হোক কিংবা সিনেমা—সব মাধ্যমেই অভিনয় করতে চাই।’
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এর পর আর কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। মাঝে এনামুল করিম নির্ঝরের একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন, তবে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি।
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে চান জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমি অভিনয়ের কোন স্টেজে আছি, জানি না। তবে অভিনয়টা আমার প্রফেশন। আমার প্যাশনের জায়গাও। আমি এটা সারা জীবন করে যেতে চাই।’
সামনে কী করছেন? তিনি বলেন, এখনো কোনো কাজ চূড়ান্ত হয়নি, তবে কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে। যদি সবকিছু কনফার্ম হয়, তাহলে তো সামনের বছর দেখা যেতে পারে।
জৌপারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজমে পড়াশোনা করেছেন।