বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক (গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স) অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর হলো এশিয়ার সবচেয়ে ইনোভেটিভ (উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন) দেশ। কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুর ধারাবাহিকভাবে প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে।
২০২৪ সালের সূচকে, সুইজারল্যান্ডের অবস্থান ছিল বিশ্বে প্রথম। দ্বিতীয় স্থানে সুইডেন। সিঙ্গাপুরের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়া মহাদেশে প্রথম। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৩টি দেশের মধ্যে ১০৬। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বস্তুত সব দেশই সূচকে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। শ্রীলঙ্কা (৮৯) কিংবা সেনেগালও (৯২) সূচকে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। সূচকে ভারতের অবস্থান ৩৮ এবং চীনের অবস্থান ১১। প্রতি মিলিয়ন (১০ লাখ) মানুষের মধ্যে কতজন গবেষক ও উদ্ভাবক আছে, সে বিবেচনায় ইউরোপের অনেক দেশ চীন থেকে এগিয়ে। যেমন সুইডেনে প্রতি মিলিয়নে প্রায় ৯ হাজার গবেষক ও বিজ্ঞানী পাওয়া যায়।
এশিয়ার মধ্যে সিঙ্গাপুর কী করে উদ্ভাবনে সেরা, সেটা বুঝতে হলে তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়া দরকার। সিঙ্গাপুরের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়সে মাত্র ১৫ বছর পুরোনো। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক তালিকায় প্রথম ২০-৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে স্থান করে নেয়। এশিয়ার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান এটি। প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। প্রায় আড়াই হাজার পিএইচডি স্টুডেন্ট প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। গবেষণা করছে। সেসব স্টুডেন্টদের বয়স ২৫-২৬ বছর। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শেষ করে, ২২-২৩ বছর বয়সেই বেশির ভাগ স্টুডেন্ট পিএইচডি শুরু করেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও নিয়মটা এমনই।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে, পেসিফিক্যাম (PACIFICHEM) নামক একটা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করি। কেমিস্টদের জন্য খুবই পরিচিত এই কনফারেন্স, প্রতি পাঁচ বছর পরপর হাওয়াইতেই অনুষ্ঠিত হয়। স্টকহোম ইউনিভার্সিটি থেকে আমি তখন সবে পিএইচডি শেষ করেছি। সে কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অধ্যাপক ও তরুণ গবেষকদের উপস্থিতি ছিল। যাঁদের সবাই রসায়নের বিভিন্ন শাখার গবেষক ছিলেন। কনফারেন্সের বাইরে, তাঁরা আলাদা করে কয়েকটা আড্ডার আয়োজন করেন। আমারও থাকার সুযোগ হয় সেসব আড্ডায়।
সিঙ্গাপুরের পিএইচডি স্টুডেন্টরা গল্প করছিলেন তাঁদের গবেষণাজীবন কত পরিশ্রমের। কত প্রতিযোগিতার। অধ্যাপকেরা তাঁদের ফান্ডিং নিয়ে গল্প করছিলেন। বলছিলেন, গবেষণার জন্য কালের সেরা সেরা প্রপোজাল না হলে ফান্ডিং পাওয়া কঠিন। তাঁদের সঙ্গে গল্প করে, সিঙ্গাপুরের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে আমার একটা চমৎকার ধারণা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আদলে, সিঙ্গাপুরে আছে জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশন (National Research Foundation), যেটা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীন পরিচালিত। এই ফাউন্ডেশনের খুবই শক্তিশালী একটা সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ড আছে, যারা বস্তুত সারা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সিঙ্গাপুরকে বিজ্ঞান গবেষণা, আবিষ্কার-উদ্ভাবনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। জাতীয় পলিসি তৈরিতে সাহায্য করে। সিঙ্গাপুর তাদের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় করে শুধু গবেষণায়, যেটা জাতীয় শিক্ষার বাজেট থেকে আলাদা।
সিঙ্গাপুরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে অবশ্যই পিএইচডি এবং পোস্ট–ডক্টরাল গবেষণা থাকতেই হবে। শুধু তা–ই নয়, খুব ভালো মানের গবেষণাপত্র (পাবলিকেশন) থাকতে হবে। এমনকি বয়সও একটা বিবেচনার বিষয়। অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর হতে গেলে বয়সে হতে হবে তরুণ। সাধারণত ৩৫-এর নিচে। এবং নিয়োগের পর, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (৫-৭ বছর) যদি কেউ খুব ভালো মানের পাবলিকেশন না করে, তাহলে তাঁর ফান্ডিং ও প্রমোশন অনিশ্চিত হয়ে যায়। শিক্ষকদের অবসরের কোনো সময় নেই। অযথা অযাচিত সময় নষ্ট করার সামান্যতম সুযোগ নেই। রাজনীতি করার তো প্রশ্নই আসে না। তাঁদের লক্ষ্যই হলো বিশ্বমানের গবেষণা করা। বিশ্বমানের আর্টিকেল পাবলিশ করা। শিক্ষকতা ও গবেষণা নিয়েই পুরো কর্মদিবস ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের।
অথচ দুঃখজনক হলো, আমাদের শতবর্ষ বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়টি, আজও বৈশ্বিক তালিকায় ৫০০তম স্থান করে নিতে পারে না। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলে যে উপাধিটি আমরা ব্যবহার করি, সে উপাধি ব্যবহার করেও পৃথিবীর মানুষদের সে প্রতিষ্ঠান চেনাতে পারি না। সিঙ্গাপুর আয়তনে বাংলাদেশের ঢাকা জেলার চেয়েও ছোট। অথচ সে দেশের শুধু একটা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় আড়াই হাজার পিএইচডি স্টুডেন্ট আছে। অথচ আমাদের দেশের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২৫ বছর বয়সী ৫০ জন পিএইচডি স্টুডেন্ট নেই। তাহলে উদ্ভাবনে আমরা কী করে এগিয়ে থাকব?
বাংলাদেশের তরুণেরা কি মেধাবী না? তাঁরা কি আবিষ্কার-উদ্ভাবন ও গবেষণায় বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন না? —অবশ্যই রাখেন। কিন্তু তাঁদের তো প্রশিক্ষণ দরকার। তাঁদের তো মেন্টর দরকার। সে মানের পরিবেশ তাঁদের দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই আঙিনা। অথচ সেখানে কি সে প্রশিক্ষণ তাঁরা পাচ্ছেন? একটা দেশ আবিষ্কার-উদ্ভাবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান শর্ত হলো, সে দেশের একাডেমিক গবেষণাকে শক্তিশালী করা।
দুনিয়ার কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পিএইচডি-পোস্টডক ছাড়া সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ হয় না। অথচ আমাদের দেশে এই নিয়মটাই এখনো জোরালোভাবে চালু হয়নি। নিয়ম চালু হলেই যে রাতারাতি এটা ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, তা কিন্তু নয়। তবে যদি ফোকাসটা থাকে এবং তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভালো গবেষকদের নিয়োগ দেওয়ার চর্চা শুরু হয়, তাহলে হয়তো ১০ বছর পর সেটা আরেও বিস্তৃত হবে। একজন শিক্ষক যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পরও উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা জন্য ৭-৮ বছর সময় ব্যয় করেন, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে সেটা সমাজের জন্য মোটেও টেকসই কিছু বয়ে আনবে না। এই নিয়মগুলো ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনার লক্ষ্য থাকতে হবে।
দেশের একাডেমিক গবেষণার সংস্কৃতি উন্নত না হলে, আবিষ্কার-উদ্ভাবনে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর দেশের একাডেমিক গবেষণার সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো মানের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতেই হবে। তরুণেরা যেন দেশেই পিএইচডি-পোস্টডক করতে পারেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। আর সে জন্য চাই ভালো মানের প্রচুর মেন্টর।
একাডেমিক গবেষণার সংস্কৃতি শক্ত হলে, সেটার প্রভাব বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পড়বে। বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রমোশনে নেই শক্ত কোনো নিয়মনীতি। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নেই আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন। এমনকি একটা ভালো মানের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ড ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ড থাকা খুব জরুরি। এবং সেই বোর্ড গঠিত হয় দেশি-বিদেশি মূল ধারার গবেষকদের দিয়ে। একাডেমিক গবেষণা উন্নত হলে, সেটার প্রভাব প্রাইভেট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও পড়বে। দেশের বড় বড় শিল্পকারখানাতে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ উন্নত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর অনেক ভালো মানের পাবলিকেশন করতে হয়। বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে করতে হয় প্যাটেন্ট। পাবলিকেশন ও পেটেন্ট হলো গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সের একটা মাপকাঠি। বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পেটেন্ট হয় না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক পেটেন্ট বলতে বোঝানো হয়, কোন উদ্ভাবনের পেটেন্ট আবেদন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারটি অর্গানাইজেশনের (WIPO) মাধ্যমে ফাইল করা। যেটাকে পিসিটি অ্যাপ্লিকেশনও (PCT Application) বলা হয়। এতে করে একটি আবেদনের মধ্য দিয়ে, প্রতিষ্ঠানটির সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে আবেদন করার অধিকার অর্জন করা হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর আলাদা করে পৃথক পৃথক সদস্যদেশে আবার আবেদন ফাইল করতে হয়।
কোলাবোরেশন হলো উদ্ভাবন সংস্কৃতির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ও চর্চা। পৃথিবীর অন্যরা কী ভাবছে, কী করছে, কীভাবে ভাবছে, কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে ইত্যাদি বিষয় কোলাবোরেশনের মাধ্যমে মোকাবিলা করা সহজ হয়ে ওঠে। তরুণদের খুব কম বয়স থেকেই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হলো আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা যখন স্নাতক পর্যায়ে থাকে, তখনই বিভিন্ন প্রজেক্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। সেসব কাজ তাঁদের ভিতকে অনেক শক্ত করে। তাঁদের ভাবনার জগৎ, সৃষ্টিশীলতার জগৎ প্রসারিত করে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক শিক্ষার্থীদের ব্যাচলর করার সময়ই ভালো মানের গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
আবিষ্কার-উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকলে সমাজের টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি রপ্তানি আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সমাজ। অতিমাত্রায় বিদেশি পণ্য–নির্ভরতাও কমে না। সুতরাং আবিষ্কার-উদ্ভাবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালা দরকার। এবং কয়েকটা পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমিক গবেষণাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ ব্রেইন-ড্রেইন বন্ধ করতে পারবে না। তরুণেরা দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষিত হচ্ছেন, সেটা খারাপও না। তবে সেটার বিপরীত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করার বদলে, যথারীতি প্রশিক্ষিতদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে। সে জন্য শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। সবাইকে গণহারে বয়সভিত্তিক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ এবং পদোন্নতির নীতিমালা আধুনিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় উন্নত মানের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ড তৈরি করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় একটা নির্দিষ্ট বাজেট ব্যয় করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন সমাজের তরুণদের প্রশিক্ষণে অর্থ ব্যয় করে, সে বিষয়ে চাপ দিতে হবে। একাডেমিক ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গবেষণার দৃঢ় মেলবন্ধন তৈরি করতে হবে।
জাতীয়ভাবে গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রণয়ন করতে হবে। পেটেন্ট ও ভালো পাবলিকেশনের জন্য গবেষকদের ভালো প্রণোদনা দিতে হবে। সর্বোপরি জিডিপির একটা বড় অংশ গবেষণায় ব্যয় করতে হবে এবং সে ব্যয় যেন সঠিক খাতে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কালে, আবিষ্কার উদ্ভাবনে উন্নত না হলে, দেশের বহু ক্ষেত্রের অগ্রযাত্রা শ্লথ হয়ে যাবে।
ড.
রউফুল আলম টেকসই উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক লেখক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অবস থ ন কনফ র ন স র প এইচড র জন য প রথম র একট দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে কম রেজল্যুশনের ভিডিও এখন দেখাবে এইচডি মানে
ভিডিও দেখা মানেই এখন ইউটিউব। একসময় এই মাধ্যমে শুধু ২৪০পি বা ৩৬০পি রেজল্যুশনের ভিডিওই দেখা যেত। সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এইচডি, ফুল এইচডি ও ৪কে রেজল্যুশন। যা ইউটিউবে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে করেছে আরও প্রাণবন্ত। এবার বড় পর্দায় ভিডিওর মান আরও উন্নত করতে গুগল মালিকানাধীন মাধ্যমটি চালু করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর নতুন সুবিধা ‘সুপার রেজল্যুশন’।
নতুন এই সুবিধার মাধ্যমে ইউটিউব স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম রেজল্যুশনে আপলোড করা ভিডিওর মান উন্নত করবে। ২৪০পি থেকে ৭২০পি পর্যন্ত ভিডিওগুলো এআই প্রযুক্তির সহায়তায় রূপান্তরিত হবে এইচডি মানে। বড় পর্দায়, বিশেষ করে স্মার্ট টিভিতে, যাতে ভিডিও ঝাপসা বা বিকৃত না দেখায়, সেটিই এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য।
ইউটিউব জানিয়েছে, ‘সুপার রেজল্যুশন’ ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম বিশ্লেষণ করে ছবির সূক্ষ্মতা ও রঙের ভারসাম্য ঠিক করবে। ফলে পুরোনো বা নিম্নমানের ভিডিও আরও স্পষ্ট ও প্রাণবন্তভাবে দেখা যাবে।
প্রাথমিকভাবে এই সুবিধা ১০৮০পি ভিডিওর জন্য চালু করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি ৪কে রেজল্যুশনেও কাজ করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবহারকারীরা চাইলে এই সুবিধা বন্ধ রাখার সুযোগও পাবেন। এতে ভিডিওর মূল রেজল্যুশন অপরিবর্তিত থাকবে এবং নির্মাতারা আসল ফাইল অক্ষত রাখতে পারবেন।
ভিডিওর মান উন্নয়নের পাশাপাশি ইউটিউব হোমপেজেও আসছে নতুন পরিবর্তন। এখন ব্যবহারকারীরা হোমপেজ থেকেই কোনো চ্যানেলের ভিডিও প্রিভিউ আকারে দেখতে পারবেন। পাশাপাশি মাধ্যমটির ‘শো’ বিভাগ নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে, যাতে ধারাবাহিক সিরিজ বা সম্পর্কিত ভিডিও সহজে দেখা যায়। নির্মাতাদের জন্য বাড়ছে থাম্বনেইল আপলোডের সীমা। আগে যেখানে থাম্বনেইলের সর্বোচ্চ ফাইলের আকার ছিল ২ মেগাবাইট, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ মেগাবাইট। এতে নির্মাতারা ৪কে রেজল্যুশনের উচ্চমানের ছবি থাম্বনেইল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
পাশাপাশি ইউটিউব পরীক্ষামূলকভাবে চালু করছে কিউআর কোডভিত্তিক কেনাকাটার সুবিধা। এই সুবিধা চালু হলে দর্শকেরা ভিডিওতে প্রদর্শিত পণ্যের কিউআর কোড স্ক্যান করে সরাসরি তা কিনতে পারবেন।
সূত্র: টেক্লুসিভ