হাতিরঝিল ভরাট ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করলেন ১৫৭ বিশিষ্ট নাগরিক
Published: 13th, May 2025 GMT
হাতিরঝিল ভরাট ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন ১৫৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ বিষয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁরা আশা করেন, পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল বাঁচিয়ে মাত্র একটি সংযোগ সড়ক বাতিল করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ গতিশীল করা হবে।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ও নাঈম উল হাসান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুরু থেকেই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা পরিবেশগত সংকট এবং জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের জলাধার ভরাটের মাধ্যমে এর শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং পান্থকুঞ্জের প্রায় দুই হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে একদল তরুণ বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে এই উদ্যান ও জলাধার রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। এতে সংহতি জানিয়েছেন বহু মানুষ এবং সংগঠন। অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা পান্থকুঞ্জ পার্কে এসে অঙ্গীকার করেছিলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসবেন। কিন্তু পাঁচ মাসেও সেই সভা না হওয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও গণস্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাতিল করে বাংলাদেশের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে বিশিষ্ট নাগরিকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বিবৃতিতে বলেছেন, সংস্কারের অঙ্গীকার এই সরকারের ভিত্তি, তার বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো কাজ এই সরকার প্রশ্রয় দেবে না।
এই জলাধার ও উদ্যান রক্ষায় কিছু তরুণ ১৫১ দিন ধরে পার্কেই অবস্থান করে অহিংস পরিবেশবান্ধব লড়াই করে যাচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টি, ইঁদুর, মশা, শব্দ, কালো ধোঁয়া—সবকিছু সহ্য করে সাহসী তরুণ প্রজন্ম দেশের একটা সম্পদ জনগণের জন্য বাঁচাতে যে উদাহরণ তৈরি করেছে, অবিলম্বে রাষ্ট্র তাদের সেই অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল রক্ষার দাবি মেনে নেবে, এমনটাই আশা প্রকাশ করেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, ইফতেখারুজ্জামান, শিরীন পারভীন হক, গীতি আরা নাসরীন, শহিদুল আলম, সলিমুল্লাহ খান, নাসির আলী মামুন, রেহনুমা আহমেদ, ফিরোজ আহমেদ, আলতাফ পারভেজ, খুশী কবির, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, শায়ের গফুর, আবু সাঈদ এম আহমেদ, শামসী আরা জামান, সাইফুল হক, আদিল মুহম্মদ খান, সামিনা লুৎফা, মাহা মির্জা প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র চলছে: জামায়াত
আবারও দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণের পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতের এই নায়েবে আমির এ কথা বলেন। জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘নির্বাচন যে তারিখে দিছে, এটা ঠিক আছে। আমরা তার আগেও নির্বাচন চাইছিলাম। ডিসেম্বর হলেও আমরা করতাম। মানুষ আশা করে, এবার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা ইলেকশন চাই, সিলেকশন চাই না।’
বিদেশের ডিজাইনে (ছকে) পরিকল্পিত নির্বাচনের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সমাবেশে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়, কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকারকে আলোচনা টেবিলে বসার জন্য আহ্বান জানান জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, ‘দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবেন না। জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।’
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদেরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সবাই মিলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। অতীতের মতো অংশগ্রহণহীন নির্বাচন করলে এবার বাংলাদেশ টিকবে না, স্বাধীনতা টিকবে না।’
জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ তাহের বলেন, এই সরকারের প্রধান কাজ সংস্কার করা। তারা সংস্কারের জন্যই কমিশন তৈরি করেছে। সে কমিশনের সবাই ঐকমত্য হওয়ার পর সরকার বলে এটির আইনি ভিত্তি নেই। তাহলে সংস্কার হলো কোথায়? তিনি বলেন, যেসব বিষয় ঐকমত্য হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচন হতে হবে।
একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তারা পিআরের পক্ষে। কিন্তু আপনারা যাঁরা বিরোধিতা করছেন, আপনাদের কি বিরোধিতা করার অধিকার আছে?’
জামায়াতের সহকারী সেক্রটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিহ্বা কেটে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিহ্বা কেটে নেওয়ার কথা বলা এই সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারেননি?’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বিজয়নগর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের হাতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।