জবি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে হচ্ছে বিশেষ কমিটি
Published: 18th, May 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে গঠন হচ্ছে বিশেষ কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্যের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন আরও সদস্য নিতে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণ ও কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ যাতে দ্রুত হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
গতকাল শনিবার ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ সমকালকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কাজ দ্রুত করা হবে। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, দাঁড়ানোর জায়গা নেই, বসা যায় না। এভাবে একটি ক্যাম্পাস চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে।’
৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা চার দিন আন্দোলন করেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি এতে যোগ হয়। এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক ফায়েজ গিয়ে দাবি পূরণের ঘোষণা দেন এবং শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, আশ্বাস অনুযায়ী দাবি পূরণের কাজ শুরু হয়েছে। জবি উপাচার্যকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হল নির্মাণের বিষয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ও ডিজাইন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম সমকালকে জানান, আবাসিক হলের প্রকল্প প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন তারা। সরকার অনুমোদন দিলে নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করবে। খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে।’
সূত্র জানায়, আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকরের বিষয়ে সরকার একমত নয়। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এমন নজির নেই। এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ও নৈতিক দাবিগুলো সরকার পূরণ করবে।’
১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় ২০০৫ সালে। শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা ভুগছেন আবাসন সংকটে। শিক্ষার পরিসর বাড়লেও আবাসন সমস্যার সমাধান হয়নি। কলেজ থাকাকালে যেসব ছাত্রাবাস ছিল, সেগুলোও বেহাত হয়ে যায়। ১৯৮৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলার আব্দুর রহমান হলে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘাতের পর আজমল হল, বাণী ভবন ও এরশাদ হল (বর্তমানে কলাভবন) ছাড়া অন্যগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর কয়েক দফা আন্দোলনে দুটি হল উদ্ধার হয়। ২০১৪ সালেও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তবে সুবিধা করতে পারেননি।
বেদখল হলগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটের ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠার তিব্বত হলের জমিতে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজী সেলিম। বেদখল অন্য হলের মধ্যে রয়েছে– আরমানিটোলার ২৫ দশমিক ৭৭ কাঠায় দ্বিতল ভবন আবদুর রহমান হল, আরমানিটোলার মাহুতটুলীর ৪০ কাঠায় আনোয়ার শফিক হল, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের গোপীমোহন বসাক লেনে এক বিঘা জমিতে নজরুল ইসলাম হল (আংশিক উদ্ধার)। এই হলের বিপরীতে ২৩ কাঠা জমিতে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ও আব্দুর রউফ রহমান হল, রমাকান্ত নন্দী লেনের ৫ কাঠায় আজমল হোসেন হল, বংশালের পুরানা মোগলটুলীর বজলুর রহমান হল।
পুরান ঢাকায় ৭ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। জমির সংকুলান না হওয়ায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস করতে ২০০ একর জমি দেয়। সেখানকার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের পতনের পর কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের বাকি কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী বুঝে পায়নি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫০ কোটি বেশি। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশনে ব্যয় হয় ১১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি। ইউজিসি থেকে ১৫৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আসবে ধরে নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে জবির প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইউজিসির বরাদ্দ ১৫৪ কোটি টাকা, যা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশ কম। শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হারে বাজেট বরাদ্দ চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.
তিনি জানান, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প। অর্থাৎ, মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পের অংশ বিশেষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হলে একনেক দ্রুত অনুমোদন দেবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রহম ন হল প রকল প র রহম ন বর দ দ সরক র ইউজ স
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল