হাসপাতালে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’, প্রিয় ঘোড়াটিও মেরে ফেলেছে দুর্বৃত
Published: 18th, May 2025 GMT
কারো মৃত্যুসংবাদ শুনলেই তিনি ছুটে যেতেন কোদাল, ছুরি, খোন্তা নিয়ে। কবর খুঁড়তেন। এ কাজে তার কোনো বিরাম ছিল না, ছিল না এতটুকু অবহেলা। মানুষের অন্তিম যাত্রাকালে সহযোগিতার এই মহান দায়িত্ব তিনি নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি মনু মিয়া। ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ তার আরেক পরিচয়। এই নামেও তিনি পরিচিত।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা ইটনার আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। ৬৭ বছরের জীবনের ৪৯ বছর তিনি গোরখোদকের কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি পারিশ্রমিক কিংবা উপহার কখনও নেননি। নিজ হাতে খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর। মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবাপরায়ণতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠা মনু মিয়ার বাহন ছিল একটি ঘোড়া। এই ঘোড়ার পিঠে চেপেই তিনি আশপাশের গ্রামে গোরখোদকের কাজ করতে যেতেন। সম্প্রতি দুুুুুুুুুবৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঘোড়াটি মারা গেছে। কিন্তু সে কথা মনু মিয়াকে বলতে পারছে না পরিবার।
মনু মিয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরনের জটিল রোগ। আরোগ্য পেতে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা চলছে নিঃসন্তান মানুষটির। সঙ্গে আছেন স্ত্রী রহিমা বেগম। শোকাতুর, অসহায় এই নারী বুঝতে পারছেন না মনু মিয়া কীভাবে প্রিয় ঘোড়া হারানোর শোক সইবেন? তার চেয়েও বড় জিজ্ঞাসা- মনু মিয়ার কোনো শত্রু নাই। এমন পাষণ্ডের কাজ করল কে?
আরো পড়ুন:
বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান হান্নানের সপরিবারে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
মনু মিয়া নিঃসন্তান। ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বাড়িতে ঘোড়াটিকে দেখে রাখার কেউ ছিল না। বাড়িশূন্য থাকায় নির্মম বর্বরতার শিকার হয়েছে ঘোড়াটি। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে মিঠামইন উপজেলার হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামবাসী মাদরাসার পাশের জমিতে ঘোড়াটির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এগিয়ে গিয়ে তারা দেখতে পান বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়া।
প্রত্যক্ষদর্শী এসএম রিজন জানান, মনু মিয়ার ঘোড়ার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তারা ওই গ্রামে যান। গ্রামবাসী তাদের জানান, একই গ্রামে শাওনের একটি স্ত্রী ঘোড়া রয়েছে। ওই স্ত্রী ঘোড়াটিকে মনু মিয়ার ঘোড়াটি আঘাত করেছিল। সেই অপরাধে ঘোড়াটির বুকে তারা ধারালো অস্ত্রের আঘাত করলে ঘোড়াটি মারা যায়। কিন্তু এ কথা তারা মনু মিয়ার স্ত্রীকে জানালেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মনু মিয়াকে জানায়নি। বিষয়টি গোপন রেখেছেন।
রহিমা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘‘তিনি (মনু মিয়া) জীবনে কারো কোনো ক্ষতি করেননি। এতোদিন জানতাম, তাকে মানুষ ভালোবাসে। কিন্তু উনার অসুস্থ অবস্থায় কি করে তার প্রিয় ঘোড়াটিকে মানুষ মেরে ফেলতে পারলো! এই খবরটা তাকে দিলে সে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবে না।’’
একজন নিখুঁত সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে। আশপাশের দু’দশ গ্রামের মানুষ তাকে এক নামে চেনে। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি কারো মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন তিনি সেখানে ছুটে গিয়ে কবর খুঁড়ে দিয়েছেন। বয়স হওয়ায় জমি বিক্রি করে তিনি ঘোড়াটি কিনেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার বলেন, ‘‘মিঠামইন থানার ওসিকে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রুমন//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বৃষ্টিতে নানা স্থানে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি
দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বুধবারও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু জেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়।
কয়েক দিন ধরে চলা বৃষ্টিতে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার এসব নদীর কাছাকাছি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আজও উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামীকাল শুক্রবার বৃষ্টি আরও কমে তাপমাত্রা বাড়তে পারে কিছুটা।
আজ রংপুর ছাড়া দেশের সব বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে এদিন বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। শাহীনুল ইসলাম, আবহাওয়াবিদ, আবহাওয়া অধিদপ্তরভারী বৃষ্টির কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আজ সকাল পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ভারী বর্ষণ এবং এর কারণে ভূমিধসের সতর্কবার্তাও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ এবং এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণেই কয়েক দিন ধরে দেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। এর পরিমাণ ছিল ২৭১ মিলিমিটার। এর বাইরে নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ২০২, চট্টগ্রামে ১৬৯, বরিশালে ১৬০ ও কুমিল্লায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৫১টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি স্টেশনেই বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রংপুর ছাড়া দেশের সব বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে এদিন বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। শুক্রবার বৃষ্টি আরও কমে যেতে পারে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাবে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হবে।
গতকাল টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ে।
ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে প্রধান সড়ক ছাড়া অধিকাংশ সড়ক গতকাল ডুবে যায়। পানি ঢুকে পড়ে অনেক বাসাবাড়িতে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবারের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত করেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, সরকারি আবাসিক এলাকা সড়ক, মাইজদী হাউজিং এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়ক কমপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট পানিতে ডুবে রয়েছে। সড়কের পাশের নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়।
শহরের টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া সরকারি আবাসিক এলাকার সড়কটি অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায়।
চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে তিন দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বৃষ্টিতে নগরের আগ্রাবাদ, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, ইপিজেড ও পতেঙ্গার আশপাশে নিচু এলাকাগুলোয় হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মাইনী নদীর পানি বেড়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। গতকাল সকাল থেকে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠতে শুরু করেছে।
বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণের কারণে নগরের মেজর এম এ জলিল সড়ক (নবগ্রাম রোড), জীবনানন্দ দাশ সড়ক (বগুড়া রোড), করিম কুটির, মুনসুর কোয়াটার, ব্রাউন কম্পাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুসমান পানি জমে পটুয়াখালী জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকায়। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টিতে দ্বীপ জেলা ভোলার ১৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর আমনের বীজতলা, আউশ ধান ও শাকসবজির খেত প্লাবিত হয়েছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, এ বৃষ্টিতে যাঁদের বীজতলায় দু-তিন দিন আগে বীজ বুনেছেন, তাঁদের ক্ষতি হবে।
বৃষ্টিতে যশোর, চাঁদপুর ও কুমিল্লায় অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।