বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের করিডোর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে: কাদের গনি চৌধুরী
Published: 19th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়।’
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ’ শীর্ষক গণশক্তি সভা আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ড.
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘যেসব দেশে মানবিক করিডোর পরিচালিত হয়েছে, এমন অনেক জায়গাতেই অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি। অনেক জায়গায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন হয়নি এমন জায়গায় বিবাদমান কোনো কোনো পক্ষ এই প্যাসেজে আক্রমণ করার নজির আছে। এমনকি অনেক জায়গায় মানবিক করিডোরে হামলায় সিভিলিয়ানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আবার কোনো জায়গায় এমন করিডোরে থাকা স্থাপনা উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।তাই এমন করিডোরের রাজনৈতিক ও সামরিক অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে। আবার অস্ত্র পাচার এবং দখল করা এলাকায় জ্বালানি চোরাচালানের জন্যও এই করিডোর ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, মানবিক করিডোরের সফলতা নির্ভর করে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর। যে অঞ্চলে মানবিক করিডর হবে সেখানকার বিবাদমান পক্ষ একমত হলে করিডোর পরিচালনা সহজ হয়। কিন্তু সবাই রাজি না হলে তা ব্যর্থ হয়।’
কাদের গনি চৌধুরী জানান, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধের (নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ) সময় ১৯৮৯ সালে লাচিন করিডোর স্থাপিত হলেও সেটি দুই বছরের মধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছিলো আজারবাইজান সরকার। আবার ১৯৯৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবের মাধ্যমে সেব্রেনিৎসা ছিটমহলকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে ওই বছরেই আরেক প্রস্তাবের মাধ্যমে সারায়েভো, জেপা, গোরাজদে, তুজলা ও বিহাচকেও এর অন্তর্ভুক্ত করে মোট ছয়টি মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু নিরাপদ এলাকাগুলোকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা হবে তার কোনো রূপরেখা ছিল না। ফলে ১৯৯৫ সাল নাগাদ সেব্রেনিৎসায় গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটি ছিল ইউরোপের ভয়াবহ নৃশংসতার একটি। ইয়েমেনের চলমান যুদ্ধের মধ্যে বারবার এমন করিডরের আহ্বান জানিয়েও সফল হয়নি জাতিসংঘ। আফ্রিকার কঙ্গোয় ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং জেনারেল লরেন্ট নকুন্ডার নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করলে জাতিসংঘের প্রস্তাবে গোমা অঞ্চলে একটি মানবিক করিডোর খোলার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত সামরিক নানা বিষয়ে জড়িয়ে ব্যর্থ হয়।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে করিডোর হলে সেখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এখন মিয়ানমার সরকার যদি দেখে এই করিডোরের ফলে আরাকান আর্মি লাভবান হচ্ছে। তখন তারা কী বসে থাকবে? তখনই সমস্যাটা তৈরি হবে। তখন এই করিডোরই আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।’
কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের মানবিক করিডোর মূলত একটি ভূরাজনৈতিক পন্থা। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামরিক হস্তক্ষেপের একটি ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চিন্তা চালু হয়েছে, যেখানে শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং একটি নিয়ন্ত্রিত এলাকা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সামরিক অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হতে পারে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ড র র জন য ন কর ড সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব