একটি মেয়ের মুখে ছিল আলোর রেখা। সে পর্দায় কথা বলত, সংলাপে হাসত, কাঁদলে দর্শক ভুলে যেত ওটা অভিনয়। চলচ্চিত্রের আলোকিত জগতের সেই মেয়েটিকে ভক্তরা ‘নুসরাত ফারিয়া’ নামে চেনেন। সম্প্রতি তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তাল। না, কোনো সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নয়, গতকাল রবিবার দুপুরে আকাশ ছোঁয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তাকে আটকে দেওয়া হয়। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি। সোমবার আদালতের নির্দেশে এই নায়িকাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। 

দেশের একদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রবাহ, অন্যদিকে শৈল্পিক সমাজে এ ঘটনায় অস্বস্তির ঢেউ। শিল্পের মানুষগুলো বিব্রত। তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনের সময় যেমন সোচ্চার ছিলেন, এবারও তেমনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা কেউ রাজনীতিক নন। তারা শিল্পী। কাজ করেন পর্দায়, কাগজে, কণ্ঠে। এসব তারকা ও কলাকুশলীরা ফারিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সোমবার (১৯ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

সেখানে তিনি লেখেন, “আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য।” 

নির্মাতা আশফাক নিপুণ কথা না ঘুরিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনো রকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া বা পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।”

আজমেরী হক বাঁধন ফেসবুকে লিখেছেন, “কি এক লজ্জা! ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটির কিছুই করার ছিল না.

.. এটা অগ্রহণযোগ্য।”

অভিনয় কি অপরাধ? প্রশ্ন তুলেছেন খায়রুল বাশার। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ খায়রুল বাশার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “সে অভিনেত্রী। রাজনীতি করেন না। তাহলে সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয়ের দায়ে কেন তাকে হেনস্তা করা হলো? সরকারি আয়োজনে কোনো শিল্পী অংশ নিলে, ভবিষ্যতে যদি অন্য সরকার তাকে দোষারোপ করে তবে শিল্পীরা কোথায় দাঁড়াবে?”

“চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কেউ দোসর হয় না” বলেছেন পরিচালক শিহাব শাহীন। সহজ বক্তব্য এই পরিচালকের “নুসরাত ফারিয়াকে আজগুবি মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।”

তার এই পোস্টে একজন মন্তব্যে লেখেন, ‘তিনি স্বৈরাচারের দোসর।’ জবাবে শিহাব লেখেন, “একটি সিনেমায় অভিনয় করলেই কেউ দোসর হয়ে যায় না।”

 তরুণ র‍্যাপার তাবীব মাহমুদ মনে করিয়ে দেন— “নুসরাত ফারিয়া কোনো সহিংসতা চালাননি, তিনি কোনো মিছিলেও ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মেয়ের ভেতরেই একেকজন হাসিনা আছেন।’ যেহেতু তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাই আবেগে বলেছেন। তিনি বুঝতে পারেননি শিল্পীদের কোনো রাজনীতিতে ঘেঁষতে নেই।’’

তার এমন পোস্টে কেউ হেসেছেন, কেউ প্রশংসা করেছেন।

অভিনেতা-পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন ক্ষোভ চাপতে পারেননি। তিনি লিখেছেন, “ফারিয়ার জায়গায় আমিও হতে পারতাম। শিল্পীদের ডাকলে তারা যাবে— এটাই তো স্বাভাবিক। এখন কি আমরা সেই ডাককেও ভয় পাবো?’’

ঢাকা/রাহাত//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা: ফারুকী

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সোমবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুইদিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল।’

ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা অনেকদিন ধরেই ছিল উল্লেখ করে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নার্ভাসনেস থেকেই হয়তোবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না।’

স্ট্যাটাসে ফারুকী আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব- এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নুসরাত ফারিয়া ইস্যুতে প্রশ্ন নিলেন না উপদেষ্টা ফারুকী
  • নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের সমালোচনায় হাসনাত
  • নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা: উপদেষ্টা ফারুকী
  • নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা: ফারুকী
  • নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনা বিব্রতকর: ফারুকী