বাজেটে পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
Published: 19th, May 2025 GMT
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আসন্ন জাতীয় বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। বাজেটে পাহাড়ি, উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। সরকার ঘোষিত সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে এই ধারা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন এবং সমতাভিত্তিক ওয়াশ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
‘জাতীয় বাজেটে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে এডিপি বরাদ্দ’ শীর্ষক এক প্রাক্-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক ও স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলোর ‘নেটওয়ার্ক অব ওয়াশ নেটওয়ার্কস’ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ওয়াশ সেবার প্রাপ্তি দেশের নাগরিকদের একটি জন্মগত অধিকার। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও সামাজিক উন্নয়ন টেকসই করতে এই সেবাগুলো ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ সরকার ওয়াশ খাতে একাধিক নীতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এসডিপি) ২০১১-২০২৫ এবং ২০২১ সালের জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কৌশলপত্র উল্লেখযোগ্য।
হোসেন জিল্লুর আরও বলেন পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ নিম্নমুখী। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও সেটা কেন হয়, তা পরিষ্কার নয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ওয়াশ খাতে বরাদ্দে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এই সূচকে ধারাবাহিক উন্নতি হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে তা প্রায় ২৩ ভাগ হ্রাস পায়। এ বছরও এই সূচক নিম্নগামী। কমেছে শতকরা ২২ দশমিক ৪৬ ভাগ। এই নিম্নমুখী প্রবণতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ (এসডিজি) এবং জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটিএস ১৭-১৮) অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা।
হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, বৈষম্যের আরেকটি দিক দেখতে পাওয়া যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয়। এর মধ্যে আছে উপকূলীয় এলাকা, চর, হাওর ও পাহাড়। চরাঞ্চলে গত বছর কোনো বরাদ্দই ছিল না। উপকূলীয় অঞ্চলের বরাদ্দও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এ ছাড়া হাওর ও পাহাড়ের বাজেটও কমছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে মাত্র ৭টিতে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ বলেন, বাজেটে পাহাড়ি, উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন প্রকল্পের কারণে বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে এসব এলাকার মধ্যে ন্যায্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
জলবায়ু-সম্পর্কিত ওয়াশ বাজেটের বৃদ্ধির প্রশংসা করে ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার বলেন, ২৫টি মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিভি) এবং এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়াশসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তবে মাত্র ১৩টি মন্ত্রণালয় ওয়াশ খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক ও স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকা, ১৯ মে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক উপক ল য় র জন য বর দ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
আমাদের এক গৃহকর্মীর দাবি, তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, এসএসসি দেননি, তাঁকে যখন আজ সকালে একটি বাংলা পত্রিকার শিরোনাম পড়ে শোনাতে বললাম, তাঁর প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে যখন সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে একজন ছাত্রকে আমার একটি লেখা ক্লাসে পড়ে শোনাতে বলেছিলাম, ইংরেজি লেখাটি পড়তেও দেখি সেই ছাত্রের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। গত সপ্তাহে আমাদের নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বললেন, স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে নতুনভাবে ভর্তি হওয়া কিছু ছাত্রী নাকি নিজের নাম শুদ্ধ করে লিখতে পারছিল না।
সময়ের পরিক্রমায় আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যাও। কিন্তু এই সংখ্যাবৃদ্ধি মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি, যার প্রমাণ উচ্চশিক্ষিত বেকারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডে দেশের পিছিয়ে পড়া অবস্থান। আমাদের শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে। এমনকি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষা ও গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।
মফস্সলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের গরুকে ঘাস খাওয়ানো আর ছাত্রদের পড়ানোর মধ্যে প্রাধিকার নির্ণায়নে যেমন সমস্যা হতে শুনেছি, তেমনি নির্বাচনকালীন পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক কারসাজি, জালিয়াতি আর আপসের সম্মুখীন হতে দেখেছি অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। দীর্ঘকাল ধরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন এবং উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম শিক্ষার পরিবেশকে আরও বিষাক্ত করেছে।
গবেষণায় বরাদ্দ অপ্রতুল ও অবকাঠামোগত ঘাটতিও ব্যাপক। নেই গবেষণায় উৎসাহী শিক্ষকও। ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৮৮ কোটি টাকা, যা এ খাতের বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। আবার বেশির ভাগ সময় শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক পরিচালন ব্যয়েরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয় না।চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেছে। উপাচার্যদের অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের আবাসন–সুবিধার দাবিতে আন্দোলন এবং শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ—এসবই চলমান অস্থিরতার প্রতিফলন।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে দল-মতনিরপেক্ষ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রশাসনিক বা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার যে নীতি, তা আজও উপেক্ষিত। বিগত সরকারের সময় থেকে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের দাবি থাকলেও এ ক্ষেত্রে গড়িমসি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটা তাদের দুর্বলতা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা অবশ্য জানা নেই। কুয়েট ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের অভিযোগে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের জেরেই সরকার তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এসব ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে উপাচার্য নিয়োগে সুপারিশ প্রণয়নে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও অনিয়ম-দুর্নীতি অনেক দিন থেকে অব্যাহত রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০১৬ সালের এক প্রকাশনায় প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, বিজ্ঞপ্তির বাইরে মাত্রাতিরিক্ত নিয়োগ, পরীক্ষার ফল প্রভাবিত করাসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। এমনকি আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদে নিয়োগে ৩-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্যও উঠে আসে ওই প্রকাশনায়। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ইউজিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নিয়ম অমান্য করছে। দুঃখজনকভাবে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এসব ক্ষেত্রে কোনো সংস্কার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা যায়নি। শিক্ষা-গবেষণার অনুকূল পরিবেশও তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
পাশাপাশি পাঠ্যক্রম ও শ্রমবাজারের অসংগতিও একই অবস্থায় রয়ে গেছে, যা কার্যকর শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। সন্দেহ নেই, মানসম্মত উচ্চশিক্ষা মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি তাঁর প্রায়োগিক জ্ঞানের মাধ্যমে দেশ ও অর্থনীতির সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হন। সে জন্য আবার প্রয়োজন শিক্ষার সঙ্গে শ্রমবাজারের চাহিদার সংগতি থাকা। তা না হলে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
এ ক্ষেত্রে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। কেবল পিছিয়ে রয়েছে তা নয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তেমন সংযোগ না থাকাটা বর্তমানে বড় ধরনের সংকটে পরিণত হয়েছে। যে কারণে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৯ লাখ ৬ হাজার, যা ২০২২ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৯ হাজার। শিক্ষিত বেকারের হার ২০২২ সালের ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
এরপরও উচ্চশিক্ষায় নতুন পাঠ্যক্রম যোগ করা ও বিভাগ চালু করা হয়েছে। শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে এগুলো চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগও রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, সেগুলোর একটি বড় অংশই প্রায় অভিন্ন পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে গঠিত। এতে যেমন শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তেমনি শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও বাড়েনি। এ ধরনের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা দিন শেষে রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। তা ছাড়া গবেষণার ক্ষেত্রেও অবস্থা উদ্বেগজনক।
গবেষণায় বরাদ্দ অপ্রতুল ও অবকাঠামোগত ঘাটতিও ব্যাপক। নেই গবেষণায় উৎসাহী শিক্ষকও। ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৮৮ কোটি টাকা, যা এ খাতের বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। আবার বেশির ভাগ সময় শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক পরিচালন ব্যয়েরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয় না। অবকাঠামোগত দিক থেকেও দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে আছে। আবাসন, ল্যাব, ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার—প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংকট প্রকট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকলেও তাদের ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
কাঠামোগত সংস্কার ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ, দলীয় আনুগত্য এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের ঊর্ধ্বে উঠে একাডেমিক জ্ঞান ও দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। এর ফলে একদিকে যেমন দেশের সার্বিক উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি শিক্ষার্থীরাও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য উপযোগী হয়ে উঠবে এবং দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে আসবে। তবে সামগ্রিক বিষয়টি যে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা আর আইনের শাসনের সঙ্গেও জড়িত, তাতেও সন্দেহ নেই। ন্যূনতম মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না করে কোনো জাতি এগোতে পেরেছে বলে ইতিহাস বলে না।
● মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক