পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি:
Published: 20th, May 2025 GMT
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না।
মঙ্গলবার (২০ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে তার প্রশাসনের ভূমিকার জন্য একাধিকবার কৃতিত্ব নেওয়ার পরেও ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই বক্তব্য এসেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখার জন্য ট্রাম্পকে ইতিমধ্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রে মেট রোভ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে যাচ্ছে ‘ইউআইইউ মেরিনার’ দল
গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছিল ভারত। পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। কিন্তু পরবর্তীতে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল সোমবার (১৯ মে) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এসেছে এবং অন্য কোনো দেশ আলোচনায় জড়িত ছিল না।”
ডন বলছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস একজন সিনিয়র সংসদ সদস্যের বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
‘ওয়াশিংটন ভারত-পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করেছে’ ট্রাম্পের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে বিক্রম মিশ্রি বলেন, “নয়াদিল্লির সাথে আমেরিকার নিয়মিত আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো মধ্যস্থতা হয়নি।”
রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর ৩১ সদস্যের সংসদীয় প্যানেলের সামনে এটি ছিল মিশ্রির প্রথম উপস্থিতি। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে, সংসদ সদস্যরা পররাষ্ট্র সচিবকে অসংখ্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ‘সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক স্তরে নেওয়া হয়েছে’। যার অর্থ তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা নেই।
সংসদীয় প্যানেলের আলোচনার সময় মিশ্রির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভারত সরকার কেন ট্রাম্পকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখছে এবং যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি খণ্ডন করছে না।
সূত্রের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, মিশ্রি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বৈঠকে একজন সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চান, “ট্রাম্প প্রকাশ্যে কমপক্ষে সাতবার দাবি করেছেন যে, তিনি যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করেছেন। ভারত কেন নীরব ছিল?”
আরেকজন জানতে চান, ‘ভারত কেন ট্রাম্পকে বারবার এই কথা বলার সুযোগ দিয়েছে।”
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, “সাংসদরা যে ধারণাটি পেয়েছেন তা হলো, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত করেনি এবং আমেরিকার এটি ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে ভারতও জড়িত ছিল না।”
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর বলছে, “মিশ্রি জানিয়েছেন, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তার মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় করেছেন এবং কোনো সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে নয়, যেখানে ভারত তার বক্তব্য তুলে ধরতে পারত।”
ক্যামেরার সামনে অধিবেশন চলাকালীন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ‘অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক’ করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র পরর ষ ট র ত র পর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ