গ্রিন টি আমদানিতে নীতি সহজ করা দরকার
Published: 21st, May 2025 GMT
প্রথম আলো:
চায়ের চাহিদায় বেশ মন্দাভাব চলছে। এর কারণ কী?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চা পানের পরিমাণ কমছে। কারণ হলো এক. চা তৈরির উপকরণের দাম বাড়তি। খরচ বাড়ায় দুধ বা রং–চায়ের চাহিদা কমেছে। দুই. এখন লিকার চা পানে ঝুঁকছে মানুষ। লিকার চায়ে চা–পাতার ব্যবহার দুধ–চায়ের তুলনায় অর্ধেকের কম। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় বছর দুয়েক ধরে চা খাতে মন্দাভাব চলছে। সব মিলিয়ে চায়ের চাহিদা এখনো চাঙা হয়নি।
প্রথম আলো:চাহিদা কমলে চা–শিল্পে কী প্রভাব পড়বে?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চাহিদা কমলে নিলামে চা বিক্রি কমে যায়। কারণ, নিলামে ক্রেতারা কতটুকু চা কিনবেন, তা নির্ভর করে চায়ের চাহিদার ওপর। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে অনেক চা অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব চা এখন নতুন নিলামে তোলা হচ্ছে। চাহিদা কমলে দিন শেষে এটা চা–শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রথম আলো:চা–শিল্পের সুরক্ষায় ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল গত মৌসুমে। এবার ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর আলোচনা আছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া ভালো উদ্যোগ। এটা ঠিক, নিলামে দাম কত হবে, তা নির্ভর করে চায়ের চাহিদা, সরবরাহ ও মানের ওপর। মানসম্মত না হওয়ায় গত মৌসুমে সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়ও অনেক চা বিক্রি হয়নি। এসব চা–বাগানের মালিকেরা এখন মান বাড়াতে সচেষ্ট হবেন। আবার মান ভালো হওয়া সর্বোচ্চ স্তরের চেয়ে বেশি দামে চা বিক্রি হয়েছে গত মৌসুমে।
ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ টেকসই করতে হলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন নিলাম থেকে যাঁরা চা কেনেন, তাঁরা সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করছেন। তবে যাঁরা চোরাই পথে চা সংগ্রহ করছেন, তাঁদের এই মূল্য সংযোজন কর দিতে হচ্ছে না। অর্থাৎ নিয়ম মেনে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ জন্য যাঁরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে।
প্রথম আলো:আপনি ইস্পাহানি গ্রুপের চা বিভাগের দায়িত্বে আছেন। কয়েক বছর ধরে ইস্পাহানি গ্রুপ গ্রিন টি বাজারজাত করে আসছে। গ্রিন টির বাজার এখন কেমন?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চায়ের নিলামে গ্রিন টি পাওয়া যায় না। কারণ, যে কয়েকটি বাগানে গ্রিন টি উৎপাদিত হয়, তারা সেগুলো নিজেরাই বাজারজাত বা রপ্তানি করে থাকে। ফলে ইস্পাহানি উন্নত মানের গ্রিন টি আমদানির মাধ্যমে দেশে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে আসছে। ছোট হলেও এই চায়ের বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। তবে আমরা বৈধভাবে আমদানি করলেও অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ, বাজারে বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডের চা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব গ্রিন টি আমদানিতে অনুমতি নেওয়া হচ্ছে কি না, তার তদারকি দরকার। অথচ আমরা আমদানিতে ৯২ শতাংশ শুল্ক–কর দিচ্ছি। কেজিপ্রতি ছয় ডলার ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর এই শুল্ক–কর আদায় করছে কাস্টমস। আমদানি হলেও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে দেশে মূল্য সংযোজন হচ্ছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বিদেশি গ্রিন টির একচেটিয়া বাজার ছিল বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল ও নামকরা কফিশপে। সরকার আমদানির সুযোগ দেওয়ায় এখন সেখানে ইস্পাহানি ব্র্যান্ডের গ্রিন টি জায়গা করে নিচ্ছে। বৈধভাবে যাঁরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে গ্রিন টি আমদানি করে, তাদের জন্য নীতিমালা আরও সহজ করা দরকার।
প্রথম আলো:চায়ের নতুন নিলাম মৌসুম শুরু হয়েছে। কেমন হতে পারে এ মৌসুম?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: এবার শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কম ছিল। তবে এখন বৃষ্টির কারণে ফলনের ঘাটতি কমে আসছে। শুরুর দিকে নিলামে তেজিভাব থাকে। নতুন মৌসুমেও চা বেচাকেনায় তেজিভাব রয়েছে। চায়ের যে মন্দাভাব আছে, সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আশা করি, আগামীতে চায়ের চাহিদা বাড়বে।
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান, চেয়ারম্যান, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি)
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাসুদ মিলাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হ মঈন দ দ ন হ স ন ন য নতম ম ল য প রথম আল করছ ন দরক র র ওপর আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সন্দ্বীপে খালের দখল নিয়ে বিরোধে দশম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু, পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে খালের দখলকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো. রিফাতুর রহমান (১৭)। সে উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামসেদুর রহমানের ছেলে। রিফাত মগধরা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। সে স্থানীয় কোরাইল্যা খালে বাঁধ দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল।
ছেলের ওপর হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে দায়ী করেছেন রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান। পুলিশের মিথ্যা তথ্যের জন্য ছেলেকে উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।
জানা গেছে, গত সোমবার (১৯ মে) উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের একটি খালের দখল নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের হামলায় গুরুতর জখম হয় রিফাত। মঙ্গলবার বেলা একটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।
রিফাতের বাবার অভিযোগ, চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী তাঁর ছেলেকে বাড়ির কাছ থেকে ধরে নিয়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের দুই সদস্য তাঁকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
প্রথম আলোকে রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান বলেন, ‘ছেলেকে রাজু বাহিনী আটকে রাখলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ আমাকে বলেছে, তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আরও অনেক পরে।’
রিফাতের বাবার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
ছেলের ওপর হামলা ও মৃত্যুর জন্য সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীকে দায়ী করেন রিফাতের বাবা। তাঁর অভিযোগ, শওকত আলীর নেতৃত্বে তাঁর ছেলের ওপর হামলা হয়েছে। রিফাতকে আটকে রাখার স্থানে তিনি শওকত আলীকে দেখেছেন।
অভিযুক্ত শওকত আলীর বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কল ধরেননি।
এলাকায় মাদক, দখলবাজি ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলে প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে জামসেদুর রহমান বলেন, ‘রাজু বাহিনী (শওকত আলী) ১৯ মে রাত আটটায় আমার বাড়ির কাছে থেকে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে চার ঘণ্টা আটকে রাখে। তার অপরাধ, সে বাড়ির পাশের খাল দখলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ছেলেকে আটকে মারধর করা হচ্ছে শুনে আমি মগধরা-সারিকাইত সীমান্তে বেড়িবাঁধে যাই। তখন সেখানে উপস্থিত পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেন, রিফাতকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ আমার ছেলে তখনো সেখানে আটক ছিল।’
পুলিশ কেন এমনটা বলেছে? আপনার কী মনে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে জামসেদুর রহমান বলেন, ‘কেন এমন মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, আমি বুঝতে পারতেছি না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথার গভীর আঘাতে দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণে রিফাতের মৃত্যু হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে ছেলেকে বাঁচানো যেত। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার ওসি এ কে এম সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই দাবি সঠিক নয়। পুলিশের দায়িত্ব ভুক্তভোগীকে (ভিকটিমকে) দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। খবর পাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মগধরা ইউনিয়নের কোরাইল্যা খাল নামে পরিচিত একটি খালের দখল নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের কিছু কর্মীর মধ্যে রেষারেষির সৃষ্টি হয়। খালটি শওকত আলীর অনুসারী আলমগীর নামের এক যুবদল নেতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইজারা নেন। স্কুলপড়ুয়া রিফাত খালে বাঁধ দেওয়ার বিরোধিতা করলে তার সঙ্গে কয়েকজনের তর্ক হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান ও তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে জামসেদুর রহমান ও শওকত আলী ভিন্ন ভিন্ন নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।