২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ফল বাতিল করে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণার পর আদালতের বিচারককে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে যখন রায়টি হয় তখনই সরকারের একজন উপদেষ্টা জজ সাহেবকে ফোন করেন। কেন এই রায়টি দেওয়া হলো তা জানতে চেয়ে বিচারককে এক ধরনের হুমকি প্রদান করে। যেহেতু অফিশিয়াল প্রমাণ নাই এ কারণে এতদিন সবাইকে কিছু বলি নাই। কিন্তু পরবর্তীতে এরকম রিপোর্ট পেয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশমুখ কাকরাইল মসজিদ মোড়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন।

ডিএসসিসির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে মৎস্য ভবনে অবস্থান করা সমর্থকরা সন্ধ্যার পর চলে গেলেও কাকরাইলের সড়কে এখনও আছেন বাকিরা। সন্ধ্যার পর সমর্থকদের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন এই বিএনপি নেতা। মধ্যরাতেও বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার সমর্থকরা।

ইশরাক হোসেন বলেন, রায়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর পর তাদের বিজ্ঞ আইনজীবী প্যানেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তারপর পুরো কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া যেতে পারে।  আমরা শুনেছি উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ফোন করে চাপ প্রয়োগ করেছে ফাইলটি যেন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। 

তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে যখন গেল তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলো এখানে মতামত দিলে আমার পক্ষেই দিতে হবে; বিপক্ষে দেওয়ার সুযোগ নেই। যার কারণে আইন মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করলো মতামত দিল না। তখন নির্বাচন কমিশনের যে ১০ দিনের সময়সীমা, তার মধ্যে তারা গেজেট প্রকাশ করল। এরপর নির্বাচন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আমি যাতে শপথ নিতে না পারি, তাতে তারা হস্তক্ষেপ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ইশরাক বলেন, এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জনগণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

এই উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ইশরাক। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদকে রদবদল করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আদালতের রায় পাওয়ার পর থেকে পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করতে গিয়ে এখানে প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান সরকার পুরোপুরি নিরপেক্ষ নন। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা রয়েছেন, যারা বিশেষত বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছেন এবং আমাদের বাধাগ্রস্ত করছেন। এ রকম একটি রাজনৈতিক মনোভাবসম্পন্ন অথবা একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সফট কর্নার রয়েছে এ রকম যদি একটি সরকার থাকে, তাদের অধীনে কোনো দিনও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে তারা তাদের দলে গিয়ে রাজনীতি করুক, সংগঠন করুক, তাদের স্বাগতম, কোনো সমস্যা নাই।

এর আগে সন্ধ্যায় ইশরাক বলেন, এই সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজনের রয়ে গেছে। এই দলের প্রতি আমাদের অনেকে আশাবাদ ছিল। তাদের দু’জন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে মেয়র হিসেবে আদালতের দেওয়া রায়ের ওপর তারা হস্তক্ষেপ করছে। এখনই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করছি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কোনো শত্রুতা নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ইশর ক হ স ন পদত য গ সরক র র উপদ ষ ট ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

অবশেষে স্থগিত আলোচিত সেই কবরস্থানের নির্বাচন!

দেশজুড়ে আলোচিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পাবনার চাটমোহর উপজেলার কবরস্থানের সভাপতি পদের নির্বাচন স্থগিত করেছেন স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

বুধবার (২১ মে) বিকেলে কবরস্থান নির্বাচন কমিশন প্রধান ও কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার এ তথ্য জানিয়েছেন ।

তিনি জানান, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন,   ‘‘আগামী ২৪ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশংকায় আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছি। দুই একদিনের মধ্যে গ্রামের প্রধানবর্গ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে বসে সমঝোতার মাধ্যমে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দিবো। ’’ 

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান,   ‘‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সেখানে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে বলে জেনেছি। এই নির্বাচন ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে তারা নিজেরা যদি সবার সম্মতিতে একটা গ্রহণযোগ্য কমিটি দিতে পারে তাহলে সেটাই ভালো হয়। তবে কেউ যদি এ নিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় আইনগত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো। ’’ 

সভাপতি পদের প্রার্থী উপজেলা যুবদলের এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‌‌  ‘‘নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এখন সবাই যদি বসে আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি বানায় করুক তারা। আমি আর এর মধ্যে নাই। যাকে সভাপতি বানায় বানাক আমার কোনো আপত্তি নাই। আমি আর কমিটির মধ্যে থাকবো না। অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অনেক হুমকিও আসছে। সেগুলো আর বলতে চাইনা। ’’ 

অপর প্রার্থী মূলগ্রাম ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এর আগে, চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সভাপতি কে হবেন? এমন বিষয় নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুইটি পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এলাকাবাসীরা দাবি জানান, ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক। পরে থানার ওসির পরামর্শে সভাপতি পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তারপর গঠন করা হয় সাত সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ঘোষণা করা হয় তফসিল। দুইজন প্রার্থী জামানত দিয়ে মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দেন। যাচাই বাছাই শেষে তাদের দুজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। দেওয়া হয় প্রতীক বরাদ্দ। আব্দুল কুদ্দুস ছাতা ও শরিফুল ইসলাম ছাতা প্রতীক পান। দুই প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে যায় এলাকা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থণা করেন প্রার্থীরা। তৈরি হয় নির্বাচনী আমেজ। এলাকাবাসীর মাঝেও দেখা দেয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চাটমোহর উপজেলাসহ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচনের খবর। তবে এ নিয়ে এলাকায় বিএনপির দুই দ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাও বিরাজ করতে থাকে। মানুষের মাঝে সংশয় এবং উৎকণ্ঠা দেখা দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

ঢাকা/শাহীন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ