অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে হবে। আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালের বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাঁকেও অব্যাহতি দিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাঁদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয়, নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাঁদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।’

খন্দকার মোশাররফ নতুন দল–সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের নাম উল্লেখ না করলেও আগের দিন কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনরত বিএনপির নেতা–কর্মীদের অবস্থানে যোগ দিয়ে দলটির নেতা ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। এই উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় মন্তব্য করে ইশরাক বলেছিলেন, ‘তাই এটাকে (উপদেষ্টা পরিষদকে) পরিবর্তন করতে হবে।’

আজকের সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গতকালের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও একই বিষয় নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি তাঁদের ও সরকারকে বিব্রত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায় উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে।’

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রসংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণ–অভ্যুত্থান করেছে, সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে’ বলে উল্লেখ করেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শিগগিরই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, জন–আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যে সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে তাঁরা মনে করেন।

জুলাই ছাত্র–গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সে কারণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ (রূপরেখা) ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সর্বোচ্চ জন–আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’

এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা বিষয়গুলো বিএনপির আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মতো উপেক্ষিত হলে তা দুর্ভাগ্যজনক হবে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ ক্ষেত্রে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ন র ই সরক র র প রক র য় র জন ত ক ব এনপ র উপদ ষ ট অন য য় ন কর ছ কম ট র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানালেন জামায়াত আমির

দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মাদ ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানান জামায়াত আমির।

রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ