সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসে পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারে জনবল নিয়োগের ৪৮তম বিশেষ বিসিএস হবে এ সিলেবাসে। বুধবার সিলেবাস প্রকাশ করে পিএসসি বিধিমালার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
নতুন সিলেবাসে মোট ১১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও গাণিতিক যুক্তিতে ২০ নম্বর করে ১০০ এবং মানসিক দক্ষতায় প্রশ্ন থাকবে ১০ নম্বরের। মেডিকেল সায়েন্সের পার্ট-১-এ প্রি অ্যান্ড প্যারা ক্লিনিক্যালে ৫০, পার্ট-২-এ ক্লিনিক্যালে ৫০, ডেন্টাল সায়েন্সের পার্ট-১-এ অ্যানাটমি ও ডেন্টাল অ্যানাটমিতে ৫০ এবং পার্ট-২-এ ওরাল সার্জারি অ্যান্ড অ্যানেসথেশিয়ায় পরীক্ষা ৫০ নম্বরে।
সিলেবাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলা, ইংরেজি ও গাণিতিক যুক্তি বিষয় আগের মতো থাকলেও বদল হয়েছে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। এতে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে।
সিলেবাসটি ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের জন্য হলেও এর অনেক কিছু আগামীতে রাখা হবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়গুলো নতুন সিলেবাসে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপানসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস।
আগের সিলেবাসে বাংলাদেশ বিষয়াবলির ১ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি’ অংশে ছিল ‘প্রাচীনকাল হতে সমসাময়িক কালের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস; ভাষা আন্দোলন; ১৯৫৪ সালের নির্বাচন; ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৬; গণঅভ্যুত্থান ১৯৬৮-৬৯; ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন; অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; স্বাধীনতা ঘোষণা; মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলি; মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল; মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা; পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়।’
নতুন সিলেবাসে বিষয়গুলোর বিস্তারিত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদের শিরোনাম ঠিক থাকলেও বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস: আধুনিক যুগ (১৭৫৭ থেকে অদ্যাবধি)।’ এর পর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ শিরোনামে বিস্তারিত অংশে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের গঠন, ভূমিকা ও কার্যক্রম, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পারস্পরিক সম্পর্কাদি, সুশীল সমাজ ও চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ এবং এদের ভূমিকা’ ঠিক রেখে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-পরবর্তী এবং সংস্কার প্রস্তাবনা’ যুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সিলেবাসে যুক্তকে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক বলছেন পিএসসির সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির এক সদস্য বলেন, সিলেবাসে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান না এলে তা হতো অস্বাভাবিক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৫ থেকে ২০ বছর পরও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য এ অংশ বিসিএসের সিলেবাসে সমান অর্থবহ থাকবে।
‘বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি’ অংশে বিস্তারিত বর্ণনা বাদ দেওয়াকে কৌশল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাস তো বাদ দেওয়া যায় না। যা যা ঘটেছে, তার সবই ইতিহাসে রয়েছে এবং থাকবে। এ জন্য ১৭৫৭ থেকে অদ্যাবধি কথাটি যুক্ত করে পুরো ইতিহাস আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে আগের পাঁচটির সঙ্গে ‘সিভিল সার্ভিসের গোড়াপত্তন এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস’ শিরোনামে নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে এটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিলেবাসটি পরবর্তী সময়ে বহাল থাকবে কিনা– প্রশ্নে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘বিশেষ বিসিএসের জন্য বলে এখানে কিছু বিষয় নেই। সাধারণ বিসিএসে সেগুলো থাকবে। সিলেবাস সংস্কারের কাজ চলছে। ৪৯তম বিসিএস থেকে হয়তো সেটি সাধারণ সিলেবাস হিসেবে কার্যকর হবে।’
সূত্র আরও জানায়, ৪৮তম বিশেষ বিসিএস চলতি বছরেই শেষ করতে চাইছে পিএসসি। জুনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ছয় মাস সময় পাবে। এ ব্যাপারে পিএসসির ওই সদস্য বলেন, এক বছরের কম সময়ে বিশেষ বিসিএস শেষ করার নজির রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন ব শ ষ ব স এস য ক ত কর শ ষ কর আগস ট প এসস
এছাড়াও পড়ুন:
আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিত : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিত। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।
আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের দক্ষতানির্ভর বাংলাদেশ, যেখানে তরুণরা তাদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। তরুণদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কলেজ অডিটরিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে 'তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণ' বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও শিক্ষক আরিফ মিহিরের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাশফাকুর রহমান, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। মূখ্য আলোচক ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আরও বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলনের কারণে আজ আমরা বাংলায় কথা বলছি। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের স্বাধীনতা তরুণদের হাত ধরেই এসেছে।
তরুণরাই আগামীর দিক নির্দেশক। জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের পরে যখন পুলিশ ছিলোনা তখন তরুণরাই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে এবং বাজার মনিটরিং করেছে। সাথে তারা নিজেরাও আইন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে।
তিনি বলেন, তরুণদের শিক্ষার সাথে সাথে কারিগরি শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে।
এছাড়া অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, দূর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সকল ক্ষেত্রে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তরুণদের হাত ধরেই জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রে যেন বৈষম্য ও স্বৈরশাসন তৈরি না হয়। তরুণদের সকল ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।