সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভেজাল ঠেকিয়ে এর মর্যাদা ধরে রাখাটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সম্মিলিতভাবে সেই চেষ্টাটুকু করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। ‘সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি এবং মধু সংগ্রহ, বিপণন ও ভেজাল প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও অংশীজনদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা জানান তাঁরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনার গ্র্যান্ড দরবার পার্টি সেন্টারে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটির আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খুলনা কার্যালয়।

আরও পড়ুনগা ছমছম বাঘের রাজ্যে মহাঝুঁকির মধু আহরণ১৫ ঘণ্টা আগে

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খুলনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্র মুনাফার আশায় এতে ভেজাল মিশিয়ে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হচ্ছে, শিশুদের জন্মের পরপরই মুখে মধু দেওয়া। কিন্তু মধুতে ভেজাল থাকলে জন্মের পর শিশুটির ভেজাল খাওয়ার মধ্য দিয়েই তার জীবন শুরু হয়, এটা নির্মম কাজ। ভেজালের কারণে এখন এমন অবস্থা যে মানুষ মধু কেনার সময় প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, খাঁটি হবে তো?’

মধুতে ভেজাল মেশানোকে আত্মঘাতী কাজ উল্লেখ করে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছেই যখন কেউ মধু চান, তখন ভয়ে ভয়ে দিই। কারণ, নিজে গিয়ে তো মৌচাক কেটে মধু আনা হয় না। কারও মাধ্যমেই নিতে হয়, তাঁরা যে ভেজাল দেয়নি তার নিশ্চয়তা কী! আসলে মধুতে ভেজাল মেশানো চরম আত্মঘাতী একটি কাজ। মধু সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত সবক্ষেত্রে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।’

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু, এখন বছরে ১০০ টন মধু কেনাবেচা করেন তিনি৩১ মিনিট আগে

দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন জানিয়ে মধু গবেষক সৈয়দ মইনুল আনোয়ার বলেন, জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর নতুন ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই—তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাজ ভোক্তার হাতে খাঁটি জিনিস তুলে দেওয়া। সারা দেশের মধুওয়ালারাও তাদের সহযোগী হয়ে সেই কাজটি করবেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বিদেশেও এ মধু রপ্তানি করা সম্ভব। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য মধুর এই বাজার ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না।

মধুর সুনাম ধরে রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড.

শেখ জুলফিকার হোসাইন জানান, প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার হার বেশি হলে মধুতে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা কমবে।

বেশি লাভের আশায় ভেজাল হচ্ছে মধু

এদিকে আজ শুক্রবার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মুদি, কাপড়, মুঠোফোনে টাকা লেনদেন, ওষুধ, ফল, পান-সিগারেট এমনকি জুতার দোকানেও সুন্দরবনের খাঁটি মধু দাবি করে বোতলে ভর্তি মধু বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকারভেদে প্রতি কেজি মধু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা চাইছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মৌয়ালদের মোটা অঙ্কের টাকা দাদন দেন। তাঁরা মৌয়ালদের মধুর সঙ্গে চিনির সিরা ও অন্য উপকরণ মিশিয়ে বন থেকে লোকালয়ে আনতে বলেন।

উপজেলার একাধিক মৌয়াল জানান, বনে মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে গরান ও খলসি ফুলের মধু হয়। মৌসুম শেষের দিকে কেওড়া ফুলের মধুর মৌসুম। কিন্তু বনে গরান ও খলসি এই দুই জাতের গাছের সংখ্যা কম। আগের মতো মধুও পাওয়া যায় না। তাই একশ্রেণির অসাধু মৌয়াল বেশি লাভের আশায় ভেজাল মধু বানানোর জন্য বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে বস্তাভর্তি চিনি ও বড় বড় পাতিল নিয়ে বনে যান।

আরও পড়ুনক্ষুদ্র এক পতঙ্গের ওপর টিকে আছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ২০ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গা ছমছম বাঘের রাজ্যে মহাঝুঁকির মধু আহরণ

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু, এখন বছরে ১০০ টন মধু কেনাবেচা করেন তিনি
  • দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সুনাম
  • গা ছমছম বাঘের রাজ্যে মহাঝুঁকির মধু আহরণ