শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি আদর্শবাদী আন্দোলন যখন গত আগস্টে ক্রম কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়, সে সময় বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ গণতন্ত্রের আসন্ন পুনরুজ্জীবন উদ্‌যাপন করেছিলেন।

এরপর ৯ মাস হতে চললেও অন্তর্বর্তী সরকার সবাইকে হতাশ করেছে, যাঁরা দ্রুত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এখন দেশটির খ্যাতিমান নেতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিচ্ছেন যে যদি তাঁকে তাঁর কাজ করতে দেওয়া না হয় এবং ধীরগতিতে দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন।

আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসকে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাঁকে যখন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার নেতৃত্বে আনা হয়, তখনো রাস্তাঘাটে রক্তপাত চলছিল।
কিন্তু তাঁর সহযোগীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিকাশমান ঐক্যের কারণে তিনি বাধাগ্রস্ত অনুভব করছেন। এই ঐক্য তাঁর নীতিগুলোর সমালোচনা করছে এবং বলছে, তিনি নির্বাচনের পরিকল্পনায় অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগের হুমকি দেন।

মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণের খসড়া তৈরির পর্যায়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁর সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যান্য উপদেষ্টা তাঁকে বোঝান যে তাঁর পদত্যাগে বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীল হবে। ওই কর্মকর্তা ফোনে বলেন যে এ বছর নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অখুশি হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর সমালোচনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছেন।

হাসিনার পুরোনো বিরোধীরা যেকোনো নির্বাচনে জয় পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সেই সম্ভাবনা তত বেশি। শেখ হাসিনার দল লাঞ্ছনার মধ্যে রয়েছে এবং সম্প্রতি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দেশটিতে কার্যত অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটেছে, আর তা ঠিক করার উদ্যোগগুলোও চলছে অগোছালোভাবে। সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের কোনো রাজনৈতিক সমর্থন নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস একজন চমৎকার ব্যাংকার হতে পারেন, প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দারুন হতে পারেন; কিন্তু তাঁর যে ঘাটতি রয়েছে, দিনের পর এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে তাঁর দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই।’ তার বদলে মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর উপদেষ্টাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন বলে মনে করেন মোবাশ্বার হাসান।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যাঁদের তাঁকে সাহায্য করার কথা ছিল, তাঁদের কেউ কেউ তাঁকে উপেক্ষা করছেন বলে অধ্যাপক ইউনূস মনে করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ দেশ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তিনি তাঁর মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করেন না।

গত নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। তবে এই যাত্রাপথে আমাদের অনেক কাজ শেষ করতে হবে।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জোর দিয়ে বলে আসছে যে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের আগে একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর সাবেক এই বিরোধী দল ক্ষমতা লাভের সুযোগ নিতে চায়।

বিএনপি প্রথম দিকে অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নীতিগত নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে দলটি সহযোগিতা বন্ধ করেছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর কর্মকর্তারা দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চান; যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে মানবিক সাহায্যের করিডর চালু করতে চান এবং দেশের প্রধান কর কর্তৃপক্ষকে (এনবিআর) ভাগ করতে চান।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক করা ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেকাংশে প্রায় অসম্ভব কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি নিষিদ্ধ আর অপরটি তড়িঘড়ি নির্বাচন চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূস সময় নিতে চাইছেন বলে মনে হয়।

এতে সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকেরাও বিরক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচন হতে না পারার কোনো কারণ নেই। এটি সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ওই সময় থেকে তাঁর (হাসিনার) সমর্থকদের সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন; কিন্তু তাঁর (শেখ হাসিনা) পুরোনো শত্রু বিএনপিকে তাঁর সে জায়গায় বসাতে ভয় পান তাঁরা। বেশির ভাগ মানুষ এখনো অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখেন।

ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাপক ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা মো.

নাহিদ ইসলাম ছাত্রদের নিজেদের পক্ষে টানার আশায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুজন কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁকে বলেন যে দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং সরকারকে চাপ দিচ্ছে, তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) মনে করছেন, তাঁর পক্ষে কার্যকরভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র জন ত ক পদত য গ সরক র র র জন য ন র জন ব এনপ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ড. ইউনূস থাকুক, তবে ভোট ডিসেম্বরেই চায় বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা সামনে আসার পরও জাতীয় নির্বাচনের পথনকশার (রোডম্যাপ) দাবিতে অনড় বিএনপি। বিএনপির ভেতরের সূত্রগুলো বলছে, তাদের চাওয়া প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস থাকুক, কিন্তু ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করুক।

আবার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও এই মুহূর্তে বিএনপির সমর্থন অনেক জরুরি। শুধু নির্বাচনই নয়, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং সফলভাবে সরকারের দায়িত্ব শেষ করতে এটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকার-ঘনিষ্ঠদের চাওয়া, সমর্থনের ঘোষণাটা বিএনপির দিক থেকে আসুক।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, একান্তই যদি তিনি (ড. ইউনূস) দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে বিকল্প ব্যবস্থা নেবে। পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়।

অবশ্য প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য থাকলেও আজ শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় যাবেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে সন্ধ্যায় সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিরা। যমুনা এবং রাজনৈতিক সূত্র সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামের মতো দলগুলোর সমর্থন আগের মতোই পাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরা সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, তারা গতকাল মিত্র দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। এই দলগুলো আগে থেকেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত। প্রধান উপদেষ্টার বিষয়েও এখন তারা বিএনপির মতকে সমর্থন করছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো নেতা ফেসবুকে এ বিষয়ে মত প্রকাশও করেছেন। বামপন্থি দলগুলো নির্বাচনের রোডম্যাপ চাচ্ছে।

ড. ইউনূসের পদত্যাগের আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিভিন্ন দল পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একাধিক দল নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছে। উত্তেজনা প্রশমনেও কেউ কেউ কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়।

ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট দূরের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। অন্য কথা বলে লাভ নেই। বিচার ও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এনসিপির পর জামায়াতও নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, অনেক ত্রুটি থাকলেও জাতীয় স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন ও সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করলে সবার সন্দেহ-সংশয় কেটে যাবে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে জানান, ড. ইউনূসকে সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তাঁকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র, সংস্কার ও নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনের আগে বিচারের রোডম্যাপ আসতে হবে।

সরকারকে সমর্থন জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন চরমোনাই পীর তথা ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ার বিষয় আছে, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলে দাবি-দাওয়া আদায়ের রাজনীতি ও পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। 

বিএনপির অবস্থান 
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দুষছেন বিএনপি নেতারা। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকার নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নানা ইস্যুতে সময়ক্ষেপণ করছে। তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না। সবার মধ্যে সংশয়, সন্দেহ আর সৃষ্ট বিভেদ থেকে বর্তমান ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা। নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি হলে সংকট আরও গভীর হতে পারে।

বিএনপি এবং তার মিত্র দলগুলো বলছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় আবেগতাড়িত হওয়ার কিছু নেই। নিজের দুর্বলতায় পরিস্থিতি সামলাতে যখন সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হচ্ছে, তখন পদত্যাগের বার্তা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি হুমকি বা চাপ বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইলে, তা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিএনপি কখনও তাঁর পদত্যাগ দাবি করেনি। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে একান্তই যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে বিকল্প ব্যবস্থা নেবে। পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়। তিনি বলেন, ড. ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝবেন এবং জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর সমকালকে বলেন, সরকার যখন নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ তখন তাদের ইমেজ ধরে রাখতে এবং নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি যখন জোরালো হচ্ছে তখন এ ধরনের একটা নাটক তৈরি করে দাবিকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে।

শক্তি দেখিয়েছে বিএনপি
বিএনপি নেতারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংবিধান পরিবর্তন, গণভোট, জুলাই সনদ এবং সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তি সামনে আসে। এর পর সংস্কার এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় বিভক্তি দেখা দেয়।

এ অবস্থায় নির্বাচন, করিডোর, বন্দর, সংস্কার, সেনাপ্রধানের বক্তব্য, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা, সরকারের ছয় উপদেষ্টার পদত্যাগের পাল্টপাল্টি দাবি এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে কর্মসূচিতে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, অবিশ্বাস বেড়েছে।

বিএনপির অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের অবস্থান তুলে ধরতে হয় তাদের। এতে বলা হয়, রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। এখন দলটি মনে করছে, যাই ঘটুক নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করতে হবে।
 
জামায়াত এবং অন্যরা তৎপর 
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনার পর জামায়াত সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানায়।

জামায়াতের এক শীর্ষনেতা সমকালকে বলেন, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। একটি বড় দল সেনাবাহিনীর বক্তব্যকে উৎসাহের সঙ্গে প্রচার করছে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে, তাদেরই ক্ষতি হবে বেশি।

বৃহস্পতিবার রাতেই ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, এনসিপি এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা বৈঠকে বসেন। তারা সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান। যদিও গতকাল গণঅধিকার পরিষদ তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে।

গতকাল এবি পার্টিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সমকালকে বলেছেন, সবাইকে সমঝোতার স্বার্থে নমনীয় হতে হবে। উত্তেজনা প্রশমনই এখন প্রধান কাজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ