বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে আজও অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

সোমবার সকাল ১১টা থেকে নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থক ও করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা।

নগর ভবনের ফটকগুলোতে এখনও তালা ঝুলছে। ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও ‘ঢাকাবাসীর ব্যানারে’ ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। মিছিল শেষ হলে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আবার স্লোগান দিচ্ছেন এ সময় ‘দাবি মোদের একটাই মেয়র ছাড়া অফিস নাই’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘রাজপথের ইশরাক ভাই আমরা তোমায় ভুলি নাই’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।

এই কর্মসূচির কারণে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের বাসিন্দাদেরও ব্যাপক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো.

বেলায়েত হোসেন বাবু বলেন, ‘দুই দফায় কোর্ট রায় দেওয়া স্বত্বেও ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তিনি শপথ নিতে পারছেন না। জনগণের ভোগান্তির জন্য মূলত উপদেষ্টা দায়ী।’

ইশরাকের এক সমর্থক বলেন, ‘জনগণের মেয়র ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা তাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। তবে শুনেছি, তাকে শপথ পড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। আমরা চাই, কোনো হেলাফেলা না করে দ্রুতই তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হোক।’

বিক্ষোভের কারণে গত ১৫ মে থেকে নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ দেওয়ার কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুনুর রশিদ।

এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৪ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর এ রিট মামলার ওপর মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেয় বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এরপর ওইদিন বিকেলে শপথ পড়ানোর জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন ইশরাক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ন গর ক স ব নগর ভবন নগর ভবন র অবস থ ন ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় ৭০ জনের বেশি নিহত

গাজায় তীব্র খাদ্যসংকটের মধ্যে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। গতকাল বুধবার এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এ উপত্যকার হাসপাতালগুলো দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে আরও ৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।

গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্যমতে, গতকাল উত্তর গাজায় ঢুকতে থাকা ট্রাকগুলো থেকে ত্রাণ নেওয়ার জন্য জিকিম পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এ ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। আহত হন ৬৪৮ জনের বেশি।

এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে তথাকথিত মোরাগ করিডর এলাকায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স।

চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে গাজায় ত্রাণসহায়তা বিতরণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ কার্যক্রম শুরু করে। বিতর্কিত এ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশের চরম নিরাপত্তাহীনতার কারণে ফাউন্ডেশনটি জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল২৯ জুলাই ২০২৫

গাজায় এমন সময় এসব হামলা হচ্ছে, যখন ত্রাণ সংস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সেখানে ব্যাপক হারে খাদ্যসংকট বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছেন। বিশেষ করে গাজার শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি অনাহারে রয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ উপত্যকায় অপুষ্টিতে এ পর্যন্ত ১৫৪ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৮৯টি শিশু। তাদের অধিকাংশই গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছে। গত মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

গাজায় যাঁরা বেঁচে থাকার লড়াই করছেন, তাঁদের একজন জিহান আল-কুরআন। তিনি তাঁর ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন। মেয়ের দিকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ওর পেটের দিকে তাকান! কোনো মাংস নেই, শুধু হাড়-খাবারের অভাবে। এক মাস ধরে এক টুকরা রুটিও জোটেনি।’

আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ২৯ জুলাই ২০২৫

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএয়ের মুখপাত্র আদনান আবু হাসনা আল–জাজিরাকে বলেন, গাজায় ঢুকতে দেওয়া অতি সামান্য ত্রাণের বেশির ভাগই মানুষের পৌঁছায় না।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় মানুষের খাদ্যের মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রয়োজন। অথচ গত চার দিনে সেখানে মাত্র ২৬৯টি ট্রাক প্রবেশ করেছে।

আরও পড়ুনএবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ