স্বাস্থ্য সংস্কার প্রতিবেদন সংশোধন চান হোমিও–ইউনানি–আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা
Published: 26th, May 2025 GMT
হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তাঁদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। চিকিৎসার এ তিন খাত নিয়ে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান সংস্কার প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এ প্রতিবেদন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছেন এসব চিকিৎসকেরা।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা এ দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক জাতীয় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মূলত সাংবাদিকদের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
পরিষদের প্রেসিডেন্ট মির্জা লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনে চিকিৎসকদের একক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কমিশনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রতিনিধি নেওয়া হয়নি। কমিশন তাঁদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। এখন কমিশনের প্রতিবেদনে নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিবেদন সংশোধন করার প্রয়োজন আছে।
প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের আগে দুটি উপস্থাপনায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কোন কোন পৃষ্ঠায় হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের সম্পর্কে কী কী ‘ভুল’ তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
কমিশন প্রতিবেদনের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলা আছে, দেশের ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথি এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা নেন। এ পরিসংখ্যান ঠিক নয় বলে দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এর আগে বিভিন্ন জাতীয় জরিপ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশের বেশি মানুষ হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৬০৭টি। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধের বাজার কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার। দেশে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। তাঁদের উপস্থিতি, তাঁদের সেবার কোনো গুরুত্ব পায়নি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। উল্টো প্রতিবেদনের ১১৫, ১২৪ ও ১৩৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, এমবিবিএস এবং বিডিএস ব্যতীত কেউ চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা দিতে পারবেন না।
অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা তো স্বীকৃত চিকিৎসক। তাঁরা কোন পরিচয়ে চিকিৎসা সেবা দেবেন? তিনি বলেন, কমিশনের এ মত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২৩ এবং ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক প্র্যাক্টিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩–এর পরিপন্থী।
অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ বা সনাতন চিকিৎসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন ও ভারতে এর বিশেষ কদর রয়েছে। বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাই মূলত ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের আওতাভুক্ত। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতেও একে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনের ৮৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে গবেষণার ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাপদ্ধতির প্রভাব ও ফলাফল মূল্যায়ন করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পর্যালোচনা ও মূল্যায়নকাঠামো গঠন করতে হবে। এ বক্তব্য হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাপদ্ধতির প্রতি বিরূপ মনোভাবেরই প্রতিফলন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মির্জা লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে, অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এ প্রতিবেদনের সংশোধন চাই।’
আরও পড়ুনচিকিৎসকদের নিয়ে ‘হেলথ সার্ভিস’ করে আলাদা বেতনকাঠামো ও পিএসসির সুপারিশ০৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসকদ র পর স খ য ন অন ষ ঠ ন ইউন ন
এছাড়াও পড়ুন:
আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসকরা
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের বিশেষ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শেষে দেশে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসক দল।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং সফদরজং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের দলটি ঢাকা ছেড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসে এই চিকিৎসক দল।
গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে বহু মানুষ হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই ভারত বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভারতীয় চিকিৎসক দলটি জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে। তারা মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় কারিগরি পরামর্শ প্রদান করেন এবং জটিল কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত বিনিময় করেন।
ভারতীয় চিকিৎসকরা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গৃহীত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ইনস্টিটিউটের বার্ন কেয়ার ইউনিট ও ক্রিটিক্যাল কেস ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দক্ষতার প্রশংসা করেন তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে ভারত আরো চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ দেওয়া হবে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, দেশটির মেডিকেল টিমের এই সফর দুই দেশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও সহানুভূতির চিরন্তন বন্ধনের প্রতিফল।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী