বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে এবার নগর ভবনের সামনের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছেন ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকার দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভে অংশ নেন।

সে সময় তারা ‘শপখ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে টালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান ধরেন।

ইশরাকের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জাফর আহমেদ এই ঘটনার জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে দুই দফা রায় আসার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার ইচ্ছাকৃত দেরি ও প্রশাসনিক টালবাহানার কারণেই দায়িত্ব হস্তান্তর আটকে আছে। আমরা মেয়র বসা পর্যন্ত আছি, রাস্তা ছাড়ব না।’

এদিকে আজ মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়ার ফলে নগর ভবনের সামনের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়, এতে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ইশরাক সমর্থকদের অবস্থানের কারণে হাইকোর্ট মোড় থেকে গুলিস্তানমুখী সড়কে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হতে দেখা গেছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করাতে এসে কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আজিমপুরের রজ্জব আলী বলেন, ‘একদিকে এখানে আসতে অনেক সময় লেগেছে, রিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের পরে আর সামনে যাওয়ার উপায় নেই, পরে হেঁটে নগর ভবনে এসেছি। এসে দেখি সামনে আন্দোলন আর নগর ভবনের সবজায়গায় তালা দেওয়া, কী সমস্যায় পড়েছি বলুন। এভাবে আর কয়দিন থাকবে। কে মেয়র হবে সেটা আমাদের জানা দরকার নেই। আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের সেবা তো খোলা রাখবে, নাকি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন নগর ভবন ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

৫-৬ মিনিটে তরিকুলকে তিনটি গুলি ও ৩৫ কোপ দিয়ে চলে যায় তারা

যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বিল বোকড়ের ২৫০ বিঘার একটি ঘের ইজারার চুক্তি করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে যান নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী সুমন। পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে যাওয়ার পথে স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টিও নেন তারা।

পিল্টুর বাড়িতে প্রবেশ করতেই তরিকুল ও সুমনকে বারান্দায় চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। এর পর পিল্টু ও তরিকুল ইজারার চুক্তি সই করেন। তখন মিষ্টিমুখ করার প্রস্তুতি চলছিল। এমন সময় উপস্থিত হন ছয় তরুণ। তাদের মধ্যে একজন অন্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোদের কী জন্য এখানে এনেছি?’ এ কথা শুনে কেউ কোমর থেকে বের করেন পিস্তল, কেউবা চাপাতি, রামদা, ছোড়া ও চায়নিজ কুড়াল। কিছু বলার আগেই একজন তরিকুলকে জাপটে ধরে মাথায় তাক করেন পিস্তল। এর পর টানতে টানতে নিয়ে যান পিল্টুর ঘরের ভেতরে। এ ঘটনার মধ্যে দুর্বৃত্তদের চোখ এড়িয়ে সুমন পালিয়ে যান এবং পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ততক্ষণে পিল্টুর ঘরে তরিকুলের মাথা, পেট ও ডান কনুইয়ের ওপর তিনটি গুলি করা হয়। সেই সঙ্গে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধারালো অস্ত্রের ৩৫টি কোপ দিয়ে জখম করা হয়। ছয়জনে মিলিয়ে ৫-৬ মিনিটের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে হেঁটেই সুজাতপুরের দিকে চলে যান।

সুমন সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, পাশের বাড়ি থেকে গুলির শব্দ পেয়ে তিনি তরিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম টুলুকে ফোন দেন। পরে পিল্টুর বাড়িতে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তরিকুল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আতঙ্ক কাটেনি

এদিকে তরিকুল হত্যা এবং এর জেরে সনাতন ধর্মাবলম্বী মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পাঁচ দিনেও গ্রামটিতে কাটেনি আতঙ্ক।

স্থানীয়রা জানান, নিজ ঘরে এমন হত্যাকাণ্ড হওয়ার পর পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান পিল্টু বিশ্বাস। অন্যদিকে তরিকুলের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা প্রথমে পিল্টুর বাড়িতে আগুন দেন। এর পর প্রতিবেশী ১৩ পরিবারের ১৮টি ঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার আগে বাড়ির সদস্যদের মারধর ও লুটপাট করা হয়। সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নেন পাশের বিলে। সেখান থেকে দেখতে পান বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ ও চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন। ঘটনার চার দিন পার হলেও বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। কয়েকটি বাড়িতে কয়েকজন নারীকে পাওয়া গেছে। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। মাঠা গোজার ঠাঁই হারিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছে।

কয়েকজন ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়েদাপাড়ার মহিতোষ বিশ্বাসের বাড়িতে চলছিল মতুয়া সম্প্রদায়ের নামযজ্ঞের তোড়জোড়। আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকে এসেছিলেন এতে অংশ নিতে। গ্রামে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। এর মধ্যে এই খুনের ঘটনা ঘটলেও প্রথমে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।

স্থানীয় গৃহবধূ পবিত্রা বিশ্বাস বলেন, ‘হঠাৎ একদল মানুষ বাড়ির মধ্যে ঢুকে শুরু করে তাণ্ডব। খাবারের ডেকচি উল্টে দিয়ে মারধর শুরু করে। তারপর আগুন দেওয়া হয়। তখন সবাই পালাতে থাকেন। এ সময় জানা যায়, মহিতোষ বিশ্বাসের বাড়ির পেছনে পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে তরিকুল খুন হয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে এই তাণ্ডব চলেছে।’

‘পরনের কাপড়ডা ছাড়া কিচ্ছু নেই’

আরেক গৃহবধূ পান্না বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরে টিভি, ফ্রিজ, সোনাদানা, পাসপোর্ট, ওষুধের প্রেসক্রিপশন, নগদ দেড় লাখ টাকা ছিল। এখন আর কিচ্ছু নেই। শুধু বাড়ির ছয়টি মানুষ বেঁচে আছি। পরনের কাপড়ডা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। রান্না করে যে খাব, রান্না করার জিনিসপত্রও পুড়ে গেছে।’

হত্যার পেছনে কারণ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি বিলের বেশির ভাগ জমি ডহর মশিয়াহাটী গ্রামবাসীর। সেখানে ঘেরের জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক তা ছেড়ে দিয়েছেন। এই জমি ইজারা নিয়ে তরিকুল মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। অন্য আরেক ব্যক্তিও ইজারা নিতে চাইলে দু’জনের মধ্যে বিরোধ হয়। মূলত ৫ আগস্টের পর এই ঘেরকে কেন্দ্র করে তরিকুলের প্রতিপক্ষ তৈরি হয়। পিল্টু মূলত তরিকুলকে ঘেরটি নিয়ে দিতে মধ্যস্থতাকারী ছিলেন। সেই ব্যক্তির লোকজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরিকুলকে পিল্টুর বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়।

তরিকুলের ভাই নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সহসভাপতি এবং সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাকির বলেন, ‘ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘের লিজ দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে।’

দুই যুবদল নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নাম প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ, থানা ঘেরাও

তরিকুল হত্যার চার দিন পর সোমবার রাতে তরিকুলের বড় ভাই রফিকুল বাদী হয়ে যুবদলের দুই নেতাসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের সাগর বিশ্বাস এবং সদর উপজেলার রামনগরের ফিরোজ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার অন্য ৯ আসামি হলেন- পিল্টু বিশ্বাস, মশিয়াহাটীর দিনেশ, দুর্জয়, অজিত, পল্লব, গজো ওরফে পবন বিশ্বাস, অতীত মণ্ডল, অভয়নগরের আকরাম আক্তার কোরাইশি পাপ্পু ও মাসুদ পারভেজ সাথী। এ ছাড়া বাড়েদাপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস বাদী হয়ে একই দিন মামলাটি করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে তরিকুল হত্যা মামলায় দুই যুবদল নেতার নাম থাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও করেছে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের এক অংশের নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুপুরে নওয়াপাড়া বাজার থেকে পৌর বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে থানা ঘেরাও করে প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। মামলার এজাহারে থাকা দুই আসামি যুবদল নেতা আকরাম আক্তার কোরাইশ পাপ্পু ও মাসুদ পারভেজ সাথীর নাম প্রত্যাহার করার দাবি জানান। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলা থেকে দুই নেতার নাম বাদ না দিলে অভয়নগরে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণাও দেন নেতারা।

কর্মসূচি নেতৃত্ব দেওয়া সম্প্রতি পৌর বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি বলেন, ‘কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম ত্যাগী নেতা। তার নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা ব্যতীত। এমনকি হত্যার প্রতিবাদে ঘটনার দিন আমার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করি। সেই মিছিলে ছিলেন যুবদল নেতা আকরাম আক্তার কোরাইশ পাপ্পু ও মাসুদ পারভেজ সাথী। অথচ রাজনীতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই দুই নেতার নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত সেটা পরিষ্কার। যেহেতু পাপ্পু ও সাথী আসন্ন উপজেলা ও পৌর যুবদলের সম্মেলনে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলেই বিএনপির একটি পক্ষ নিহতের ভাইদের প্রভাবিত করে এজাহারে নাম দিয়েছেন।’

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, তরিকুল ইসলাম হত্যায় মামলা হয়েছে। দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডহর মশিয়াহাটীর গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিদর্শনে জামায়াত ও বাম গণতান্ত্রিক জোট

মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিতে যান জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও বামগণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রত্যেক পরিবার আর্থিক সহযোগিতা করেন। জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল এই নারকীয় তাণ্ডবে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান। 

বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘ঘেরের নীতিমালা সঠিকভাবে প্রয়োগ হয় না। সে কারণে মাঝে মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়, খুন হয়। আমরা তরিকুলের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। কোনো নিরীহ গ্রামবাসী যেন হয়রানির শিকার না হয়। 

তিনি আরও বলেন, তরিকুলের হত্যাকে কেন্দ্র করে পাড়াটিতে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। 

কঠোরভাবে ঘেরের নীতিমালা প্রয়োগ করতে সরকার ও কর্তৃপক্ষকে আহ্বান ইকবাল কবির। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ