জুলাইযোদ্ধারা বিষপান করেছেন কি না, তদন্ত করছে সরকার
Published: 27th, May 2025 GMT
চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা আদৌ বিষপান করেছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখছে সরকার। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, ‘জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চারজন জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেছেন। আজকেও একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আপনারা বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে সেবা দিয়েছেন। তারপরও তাঁরা এমন কেন করছেন?
জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘উনারা (জুলাইযোদ্ধা) আদৌ বিষপান করেছেন কি না, খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের সরকারি পর্যায়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে যে উনারা যেটা পান করেছেন, এটা আসলেই বিষ কি না।’
প্রধান উপদেষ্টার এই উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, দীর্ঘদিন কেউ চিকিৎসাধীন থাকলে তাঁর মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁদের মানসিকভাবে যতটা সম্ভব সমর্থন দেওয়ার। এরপরও যদি কারও মধ্যে হতাশা থাকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁরা এ বিষয়ে আরও যত্নবান হবেন এবং তাঁদের যত বেশি সম্ভব মানসিকভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন।
জুলাইযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩৯৩ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ৩৩৮ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে ৪০ জন আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১১ জন জুলাইযোদ্ধা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও রাশিয়ায় গেছেন। তাঁদের চিকিৎসা বাবদ সরকারের ৬১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
আরও ২৮ জন জুলাইযোদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসাধীন, তাঁদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া ও নেপাল থেকে ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে ইতিমধ্যে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন। এই চিকিৎসকদের শুধু যাতায়াত খরচ দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ সরকারের ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৩৪টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৬৩০টি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ৬৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের জন্য ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের ওয়ারিশ নির্ধারণ–সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই উপ-প্রেস সচিব আরও জানান, গণ-অভ্যুত্থানে ‘এ’ ক্যাটাগরির আহত ৪৯৩ জনকে ২ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির আহত ৯০৮ জনকে ১ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটাগরির আহত ১০ হাজার ৬৪২ জনকে ১ লাখ টাকা করে মোট এককালীন ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত শহীদ পরিবারগুলোর সঞ্চয়পত্র প্রদান, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও চেক প্রদান বাবদ মোট ২৮৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনজুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের বিষপান২৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ন কর ছ ন সরক র র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
শিরোপাজয়ী লিভারপুলের সমর্থকদের ভিড়ে উঠে পড়ল গাড়ি, হাসপাতালে ২৭ জন
ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব লিভারপুলের সমর্থকদের ভিড়ে একটি গাড়ি উঠে যাওয়ার ঘটনায় আহত ২৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তবে পুলিশ বলেছে, তারা ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট’ মনে করছে না।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবারের শিরোপা জিতে নিয়েছে লিভারপুল। এই জয় উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লিভারপুল শহরে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এই শোভাযাত্রায় ক্লাবটির হাজারো সমর্থক অংশ নেন। এই সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে একটি গাড়ি উঠে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় লিভারপুল থেকে ৫৩ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ পুরুষকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ভিড়ে উঠে পড়া গাড়িটির চালক ছিলেন তিনি।
ঘটনাস্থলে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। লিভারপুল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, ২৭ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে চারটি শিশু আছে। একটি শিশু ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর।
ঘটনার সময় ভিড়ে থাকা চারজন গাড়িটির নিচে চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গাড়িটি ঢুকে পড়লে লোকজন ছিটকে পড়ছেন।
ঘটনার বিষয়ে সাময়িক ডেপুটি চিফ কনস্টেবল জেনি সিমস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা মনে করছেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে বলে তাঁরা মনে করছেন না। ঘটনাটিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, লিভারপুল দলের খেলোয়াড়রা একটি ছাদখোলা বাসে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি নিয়ে শহরের কেন্দ্র অতিক্রম করার ১০ মিনিট পর ঘটনাটি ঘটে।
লিভারপুলের সিটি কাউন্সিলের নেতা লিয়াম রবিনসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেন, একটি আনন্দমুখর দিনের ওপর অন্ধকারের ছায়া ফেলেছে এই ঘটনা।
ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এই ঘটনার খোঁজখবর রাখছেন জানিয়ে তিনি আহতসহ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
করোনা মহামারির সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল লিভারপুল। তবে তখন উদ্যাপনে বিধিনিষেধ ছিল। তাই এবারের শিরোপা জয় নিয়ে ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।