প্রতিষ্ঠার ৬১ বছরেও নির্দিষ্ট ঠিকানা মেলেনি ইউনিয়ন পরিষদের। তিন গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের নামে জমি থাকলেও নিজস্ব ভবন নেই। যখন যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তাঁর বাড়িই পরিণত হয় পরিষদের কার্যালয়ে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ১ নম্বর কয়া ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। 
স্থানীয়দের ভাষ্য, ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড রায়ডাঙা মৌজায় ২৫ শতাংশ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সুলতানপুর মৌজায় একটি পুরাতন ভবনসহ ৩০ শতাংশ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাড়াদী মৌজায় ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে পরিষদের নামে। কিন্তু আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধের জেরে ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। দ্রুত একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের দাবি জানান তারা।

জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকায় ৩০ শতাংশ জমির ওপর দুই কক্ষবিশিষ্ট পরিষদ ভবন নির্মাণ করেন তৎকালীন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া। সেখানে তিনি পাঁচ বছর পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরবর্তী দুই চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন ১০ বছর এবং সালাউদ্দিন ৫ বছর সেখানে কার্যক্রম চালান। এর পর আমিরুল ইসলাম আমু চেয়ারম্যান হলে তিনি সুলতানপুর থেকে সরিয়ে পরিষদের কার্যক্রম তাঁর নিজ বাড়ি ঘোড়াই ঘাট এলাকায় নিয়ে যান।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মো.

আলী হোসেনের ভাষ্য, স্বাধীনতার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের নির্দিষ্ট কোনো কার্যালয় ও ভবন নেই। যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর বাড়িই পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বানিয়াপাড়া এলাকার আলী হোসেনের বাড়িতে চলছে পরিষদের কার্যক্রম। 
সোমবার দুপুরে দেখা যায়, গড়াই নদীর ঘোড়াই ঘাট এলাকার বানিয়াপাড়া গ্রামে আলী হোসেনের আধাপাকা টিনশেড বাড়ি। বাড়ির প্রবেশপথে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে সংযুক্ত জরাজীর্ণ সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘অস্থায়ী কার্যালয়, ১ নম্বর কয়া ইউনিয়ন পরিষদ, বানিয়াপাড়া।’ একটু সামনে গিয়ে দেখা গেল টিনের খুপরি ঘরে কাজ করছেন এক নারী উদ্যোক্তা। পাশেই দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা ঘর। এটির এক কক্ষে একজন পুরুষ উদ্যোক্তা কাজ করছেন। সেখানে সেবাগ্রহীতাদের জটলা। অপর কক্ষটি চেয়ারম্যানের কার্যালয়। এ ঘরের পাশে অপর একটি ঘরের এক কক্ষে কাজ করছেন পরিষদের সচিব। অপর কক্ষে চেয়ারম্যানের স্বজনদের বাস। 

ইউপি কার্যালয়ে আসা কলেজছাত্র মেহেদী হাসান নাঈম জানালেন, তিনি জন্মের পর থেকে দেখে আসছেন বাড়ি বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলে। এতে মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়। উদ্যোক্তা আব্দুল খালেক বলেন, পরিষদের নিজস্ব ভবন নেই। সেবাগ্রহীতা এসে দাঁড়ানো বা বসার জায়গা পান না। এতে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। 
নারী উদ্যোক্তা হামিদা খাতুন জানান, রোদ ও ঝড়-বৃষ্টিতে টিনের ছাপরা ঘরে বসে সেবা দিতে খুবই কষ্ট হয়। এখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও অরক্ষিত থাকে। দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 
অন্যান্য ইউনিয়নে সমাজসেবা, কৃষি, সমবায়সহ বিভিন্ন দপ্তরের সেবা প্রদানের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে সেবা চালু থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন কমপ্লেক্স না থাকায় ওইসব সেবা হাটে-বাজারে কোনোমতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিষদের সচিব কামরুল ইসলাম শাওন। তিনি বলেন, একজনের বাড়িতে অফিস করা অস্বস্তিকর ব্যাপার। ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এখানে এটা নিয়ম হয়ে গেছে– যখন যিনি চেয়ারম্যান হন, তাঁর বাড়িতেই ইউপি কার্যালয় হয়। এতে অনেক সময় চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষরা সেবা নিতে আসতে পারেন না। অনেকেরই ভোগান্তি হয়।
কুমারখালী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফিরোজ মাহমুদ বলেন, সুলতানপুর হলো কয়া ইউনিয়নের মাঝপথ। যার পূর্বদিকে শ্রীখোল, রাধাগ্রাম, কালোয়া। পশ্চিম দিকে বাড়াদী, বানিয়াপাড়া, লক্ষ্মীকোল। দক্ষিণে উত্তর কয়া, রায়ডাঙা, খলিশাদাহ, কয়া, গট্টিয়া। উত্তর দিকে বেড় কালোয়া সুলতানপর, বাড়াদীর কিছু অংশ। এই স্থানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপিত। এখানেই ইউনিয়ন পরিষদ ভবন হলে মানুষের উপকারে আসবে।
চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন বলেন, তিনটি গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের নামে জমি থাকলেও গ্রামবাসীর ঠেলাঠেলিতে ভবন নির্মাণ হয়নি। এতে জনসাধারণ পরিষদের স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনস্বার্থে উপযুক্ত স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, কুমারখালীতে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে ভবন নেই। খুব দ্রুতই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে কয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হবে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউপ সদস য ভবন ন ই

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে