অপসারিত মেয়র-কাউন্সিলরদের পুনর্বহালে আলটিমেটাম, রংপুর অচলের হুঁশিয়ারি
Published: 28th, May 2025 GMT
রংপুর সিটি করপোরেশনের অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে ঈদের পর রংপুর অচল করে দিতে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সিটি কাউন্সিলরসহ ‘নগরবাসীর পক্ষে’ অপসারিত মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ ঘোষণা দেন। বুধবার সিটি করপোরেশনের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। এতে অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা মানুষ অংশ নেয়।
এর আগে নগরীর শাপলা চত্ত্বর থেকে রংপুর নগরবাসীর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গ্রান্ড হোটেল মোড়, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানী মোড়, পায়রা চত্ত্বর ও টাউনহল সড়ক হয়ে সিটি করপোরেশন ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেন সাবেক মেয়র মোস্তফা ও কাউন্সিলরদের সমর্থকরা। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু, মোখলেছুর রহমান তরু, মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী বেগম, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জাবেদ হোসেন জুয়েল, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম, মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।
তারা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার রংপুর সিটি করপোরেশনকে উন্নয়নবঞ্চিত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিটি করপোরেশন ছাত্র-জনতাকে পানি, ছাতা, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ নানা সহযোগিতা করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও মেয়র-কাউন্সিলররা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সেখানকার কার্যক্রমে কোনো শূন্যতা দেখা যায়নি। তবে সরকার অন্য সিটি করপোরেশনের সাথে রংপুর সিটি করপোরেশনের পরিষদকেও অপসারণ করেছে।
তারা আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন মেয়র। তাই অবিলম্বে অপসারিত পরিষদকে পুনর্বহাল করতে হবে। সিটি করপোরেশনে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিসন সনদসহ নানা সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।
সমাবেশে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে, আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, আমরা এটিকেও সাধুবাদ জানাই। কিন্তু রংপুরে নির্বাচিত পরিষদকে কেন পুনর্বহাল করা হবে না, এটি নগরবাসী জানতে চায়।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে বলব আগামী সাত দিনের মধ্যে সিটি পরিষদকে আগের মতো কার্যকর করবেন বলে প্রত্যাশা করি। আর যদি না করেন তাহলে ঈদের পরে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মঞ্চ বসিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। সবাইকে রংপুর অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ ও মিছিলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এদিকে বিক্ষোভ ও সমাবেশের কারণে নগরীর কাচারী বাজার, পুলিশ লাইন মোড়, টাউনহল সড়ক, সিটি বাজার, পায়রা চত্বরসহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট হয়। চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আলট ম ট ম অপস র ত র রহম ন ক উন স
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।
পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।
এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’
শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’
পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’