রংপুর সিটি করপোরেশনের অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে ঈদের পর রংপুর অচল করে দিতে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সিটি কাউন্সিলরসহ ‘নগরবাসীর পক্ষে’ অপসারিত মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ ঘোষণা দেন। বুধবার সিটি করপোরেশনের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। এতে অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা মানুষ অংশ নেয়। 

এর আগে নগরীর শাপলা চত্ত্বর থেকে রংপুর নগরবাসীর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গ্রান্ড হোটেল মোড়, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানী মোড়, পায়রা চত্ত্বর ও টাউনহল সড়ক হয়ে সিটি করপোরেশন ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেন সাবেক মেয়র মোস্তফা ও কাউন্সিলরদের সমর্থকরা। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু, মোখলেছুর রহমান তরু, মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী বেগম, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জাবেদ হোসেন জুয়েল, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম, মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ। 

তারা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার রংপুর সিটি করপোরেশনকে উন্নয়নবঞ্চিত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিটি করপোরেশন ছাত্র-জনতাকে পানি, ছাতা, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ নানা সহযোগিতা করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও মেয়র-কাউন্সিলররা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সেখানকার কার্যক্রমে কোনো শূন্যতা দেখা যায়নি। তবে সরকার অন্য সিটি করপোরেশনের সাথে রংপুর সিটি করপোরেশনের পরিষদকেও অপসারণ করেছে।

তারা আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে  লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন মেয়র। তাই অবিলম্বে অপসারিত পরিষদকে পুনর্বহাল করতে হবে। সিটি করপোরেশনে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিসন সনদসহ নানা সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।

সমাবেশে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে, আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, আমরা এটিকেও সাধুবাদ জানাই। কিন্তু রংপুরে নির্বাচিত পরিষদকে কেন পুনর্বহাল করা হবে না, এটি নগরবাসী জানতে চায়। 

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে বলব আগামী সাত দিনের মধ্যে সিটি পরিষদকে আগের মতো কার্যকর করবেন বলে প্রত্যাশা করি। আর যদি না করেন তাহলে ঈদের পরে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মঞ্চ বসিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। সবাইকে রংপুর অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।

এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ ও মিছিলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। 

এদিকে বিক্ষোভ ও সমাবেশের কারণে নগরীর কাচারী বাজার, পুলিশ লাইন মোড়, টাউনহল সড়ক, সিটি বাজার, পায়রা চত্বরসহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট হয়। চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আলট ম ট ম অপস র ত র রহম ন ক উন স

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে