সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনুভব করছেন, ঘাড়টা এক পাশে নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। কোনো পেশিতে একটা টান লেগে আছে, যার জন্য নাড়াতে গিয়ে শক্ত লাগছে। ঘাড় এপাশ-ওপাশ করতেও কষ্ট হচ্ছে। এমন হঠাৎ ঘাড়ব্যথা বা ঘাড়ে টান লেগে যাওয়ার মতো সমস্যায় অনেকেই ভোগেন।
হঠাৎ এমন সমস্যা দেখা দিলে ঘরোয়া চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে প্রথমে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। সারা দিনে দুই বেলা বা তিন বেলা ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে গরম সেঁক পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধও সেবন করা যেতে পারে যেমন, পেশি শিথিলায়নের বা ব্যথানাশক, এটা সাময়িক সমাধান।
তবে যাঁরা প্রায়ই এমন সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা নিয়মিত কয়েকটা ব্যায়াম করতে পারেন, যেগুলো এমন ব্যথা এড়াতে দারুণ কার্যকর। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো থাকা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন, প্রচণ্ড ব্যথা থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যথা একটু কমলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।
সহজ তিন ব্যায়াম
১ এই ব্যায়াম বসা বা দাঁড়ানো উভয় অবস্থায় করা যাবে। প্রথমে ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখুন। এরপর থুতনি নামিয়ে আনুন বুকের কাছাকাছি। এ অবস্থায় ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর ঘাড়ের পেশি শিথিল করে ধীরে ধীরে মাথা ওপরে তুলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এবার থুতনি ওপরের দিকে তুলুন যতটা সম্ভব। এ অবস্থায় ১০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর আবার শুরুর অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এভাবে রোজ এক বেলা নির্দিষ্ট সময়ে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন।
২ এই ব্যায়াম করতে হবে দাঁড়ানো অবস্থায়, পা দুটো সামান্য ফাঁক রেখে। হাত দুটি দুই পাশে ঝোলানো অবস্থায় রাখতে পারেন। প্রথমে ডান দিকে মাথা কাত করুন, কান দিয়ে কাঁধ ছুঁতে চেষ্টা করুন। ঘাড়ের পেশিতে টান অনুভব করা পর্যন্ত এই চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে ঘাড় ওঠাবেন না। এ অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার শুরুর অবস্থায় ফিরে আসুন। একইভাবে ব্যায়ামটি করুন বাঁ দিকেও। পুরো ব্যায়ামটি ৮ থেকে ১০ বার পর্যন্ত করতে পারেন, রোজ এক বেলা বা দুই বেলা। ব্যায়ামটি আরও কার্যকর করে তুলতে যখন যে পাশে ঘাড় কাত করবেন, সেই পাশের হাতটি তুলে আনতে পারেন মাথার ওপরে। আঙুল দিয়ে হালকা চাপ দিন মাথায়।
৩ এই ব্যায়াম করতে পারেন বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায়। প্রথমে ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখুন। এবার ডান দিকে (নামাজে সালাম ফেরানোর মতো করে) ঘাড় ঘোরান, যতক্ষণ ঘাড়ের পেশিতে টান অনুভব করেন। এ অবস্থায় ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর শুরুর অবস্থায় ফিরে যান। একইভাবে ব্যায়ামটি করুন বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়েও। পুরো ব্যায়ামটি ৮ থেকে ১০ বার বার পর্যন্ত করতে পারেন, রোজ এক বা দুবার।
মো.
সাইদুর রহমান চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অবস থ য় ফ র ব য য় ম করত ব য য় ম কর এ অবস থ য় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।