কখনো হাতে ধরা থালায়, আবার কখনো ট্রেতে রাখা থালা-বাটিতে রেস্তোরাঁগুলোতে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা হয়। কিন্তু খাবার-পানীয়, থালা-বাটি-চামচ সাজানো আস্ত টেবিল মাথায় করে অতিথিদের সামনে হাজির হওয়ার কথা কখনো শুনেছেন কী।

দারুণ দক্ষতায় কাজটি করে নিজের রেস্তোরাঁয় আসা অতিথিদের রীতিমতো চমকে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাং জিন-গিউ। রাজধানী সিউলের কাছে উইদং ভ্যালিতে তাঁর রেস্তোরাঁটি এখন পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।

রেস্তোরাঁর রান্নাঘর থেকে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ অতিথিদের টেবিল পর্যন্ত খাবারসহ একটার পর একটা থালা-বাটি আনতে ক্যাংকে বেশ কয়েকবার রান্নাঘর থেকে খাবারের জায়গায় রাখা টেবিল পর্যন্ত যাতায়াত করতে হতো। বারবার এই হাঁটাহাঁটি ৫৫ বছর বয়সী ক্যাংয়ের পছন্দ হচ্ছিল না, হাত-পায়ে ব্যথাও হচ্ছিল। এই ঝামেলা এড়াতে অভিনব এক উপায় খুঁজে বের করেন তিনি।

ক্যাং আগে টেবিলের ওপর খাবারদাবার, থালা-বাটি-চামচ সব সাজান। এরপর আস্ত টেবিল মাথায় তুলে নিয়ে অপেক্ষমাণ অতিথির সামনে হাজির হন।

ক্যাং ১০ জনের জন্য ‘ফুল কোর্স’ খাবার পরিবেশন করা আছে, এমন একটি লম্বা টেবিল মাথায় নিয়ে চলতে পারেন। টেবিলের ওজন কিন্তু নেহাত কম নয়। খাবার ভর্তি এমন একেকটি টেবিলের ওজন ৩৬ কেজি পর্যন্ত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম এসবিএস বলেছে, ক্যাং প্রতিদিন অন্তত দেড় শ বার খাবারসহ টেবিল মাথায় নিয়ে অতিথিদের সামনে হাজির হন। তিনি এমনকি টেবিল মাথায় নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামাও করতে পারেন।

ক্যাং বলেন, আগে তিনি হাতে করে খাবার বহন করতেন। তাঁর হাত ব্যথা করতে শুরু করলে তিনি মাথায় করে টেবিল বহনের বুদ্ধি বের করেন।

কীভাবে মাথার ওপর টেবিলের ভারসাম্য রাখেন, সেই রহস্যও প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, তিনি মাথার ঠিক মাঝখানে নয়, বরং মাথা কিছুটা কাত করে টেবিল বহন করেন।

অনেক অতিথি ক্যাংয়ের এই বিশেষ দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জও করে বসেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোট এবং হালকা টেবিল মাথায় নিয়েও অতিথিরা তাঁর মতো করে খাবার বহন করতে পারেন না বলে দাবি করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এবার হালদায় মিলেছে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম

হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবার পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভারী বৃষ্টিপাত আর আর পাহাড়ি ঢল নামায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা কার্প জাতীয় মাছগুলো। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রায় তিনশ’ নৌকা নিয়ে মাছ ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপড়ের মানুষ। এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা।

হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাহমান হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, অইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীরপাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার ডিম সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকেই ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলেন, তারা অধিক পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’

বৃহস্পতিবার রাত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল পষর্ন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দুইপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে হালদা নদীর আমতুয়া অংশে প্রথমে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। পরবর্তীতে নদীর বিভিন্ন অংশে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।

জানা যায়, হালদার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দুইপাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম আহরণকারীরা এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।

হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিসসমকালকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত দুইটার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা  ডিম সংগ্রহ করেছি।’

ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে।’

হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।

রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দুইদফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।

জানা যায়, বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। অভিজ্ঞ এই লোকজন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় এসব ডিম থেকে রেনু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে সারাদেশের মাছ চাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি। তারপরও এসব রেণু সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তবে এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দন পর রেণু ফুটবে। নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে এখন। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে পোনা বিক্রি শুরু করা হবে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারি ও হ্যাচারি মালিকর।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ