সাগরে গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে
Published: 29th, May 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটারে পর্যন্ত বাড়ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
বিশেষ এ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ২ থেকে ৪ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এর আগের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়, যা পরে আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। আজ বৃহস্পতিবার সেটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিল। আর এর প্রভাবেই এ বৃষ্টি থাকতে পারে সারাদিন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি আজ থাকতে পারে সারাদিন। আগামীকাল শুক্রবারও বৃষ্টি ঝরতে পারে। দেশের চার বিভাগেই বর্ষণের সতর্কবার্তা ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ভারী বৃষ্টির প্রভাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের চার বিভাগের নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বেলা ১টার মধ্যে দেশের ছয় অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ: বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লঞ্চ চলাচল পুনরায় শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা বাতাস, বৃষ্টি এবং নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় বরিশাল নৌবন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তবে এ সময়, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ নরত বর শ ল ন অবস থ ন এল ক য় উপক ল সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।