জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অধরা থেকে যাচ্ছে
Published: 29th, May 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন যেন অধরা থেকে যাচ্ছে, এ রকম শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিচার ও সংস্কার ছাড়া কেবল নির্বাচনের দিকে গেলে সেটা জনগণ ও গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণা হবে। আমরা সেই প্রতারণা কাউকে করতে দেব না।’
আজ বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে সুবিধা বা ক্ষমতা দিতে কেউ রাজপথে নামেনি, কেউ জীবন দেয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে যদি সরকার ব্যর্থ হয়, যদি কোনো রাজনৈতিক পক্ষ সেখানে বাধা তৈরি করে, তাহলে জনগণ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। আমরা জীবন দিতে আবার প্রস্তুত থাকব।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশে এখন যে সংস্কার ও বিচারের আলোচনা চলছে, বিভিন্ন পক্ষ সেটাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু দেশের নয়, বিদেশ থেকেও নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন যেন অধরা থেকে যাচ্ছে। এ রকম শঙ্কা আমাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলেও অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ লোকদের দায়িত্ব দিতে হবে, যারা সব পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারবে।
সংস্কার ও বিচারের আলাপ ফেলে রেখে অনেক রাজনৈতিক দল শুধু নির্বাচনের কথা বলছে উল্লেখ করে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা স্পষ্টতই চব্বিশের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া। বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে, কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই সংস্কার সম্পন্ন করে ও বিচারকে দৃশ্যমান করে আয়োজন করতে হবে। সংস্কার ছাড়া এবং বিচার না করে যদি নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচন কোনোভাবেই পুরোনো কাঠামো থেকে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখবে না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আখতার বলেন, সরকার যাতে সংস্কার বাস্তবায়ন করে, সে ব্যাপারে আপনারা শক্ত কথা বলুন, যাতে গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের বিচার হয়, সে জন্য সমান্তরালে আওয়াজ তুলুন। বিচার ও সংস্কারের কথা বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচনের কথা বলা হলে জনগণ এটাকে প্রতারণা হিসেবে গ্রহণ করবে।
জাতীয় পার্টির বিষয়েও কড়া বার্তা দেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে জাতীয় পার্টি। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
আখতার বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলি, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনগুলোতে প্রতারণামূলকভাবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়ে জাতীয় পার্টিকেও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি জনগণ ও গণতন্ত্রের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, সে বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত জাতির কাছে কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। তাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনাবোধ নেই। যারা স্বেচ্ছায় এখন পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে দেওয়ার কোনো মানে থাকে না।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, অবশ্যই আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসর জাতীয় পার্টিসহ যে দলগুলো ছিল, সব কটিকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের কমিটি ঘোষণা করেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। প্রকৌশল উইংয়ের সমন্বয়ক করা হয়েছে শেখ মোহাম্মদ শাহ মঈনকে। এই কমিটিতে কয়েকজন যুগ্ম সমন্বয়ক ও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে এটি আরও সংগঠিত আকারে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তরিত হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল আমিন ছাড়াও প্রকৌশল উইংয়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম র জন ত ক অন ষ ঠ ন এনস প র প রক শ সদস য আওয় ম আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব