ওমরাহর, ইহরাম, তাওয়াফের ফরজ এবং ওয়াজিব
Published: 29th, May 2025 GMT
মসজিদুল হারামের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থানটি হিল নামে পরিচিত। এই হিল অথবা মিকাত থেকে ইহরামের নিয়ত করে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে।
৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত সময় ছাড়া বছরের যে কোনো সময় ওমরাহ পালন করা যায়। হজের পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরুহ। (আল-বাহরুল আমিক, ৪/২০২১)।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব
ওমরাহর ফরজ ২টি: ইহরাম ও তাওয়াফ।
ওমরাহর ওয়াজিব ২টি: সাঈ ও হলক করা।
নারীদের ইহরাম
নারীদের ইহরাম একটু ভিন্ন। নারীদের ইজার ও রিদা পরতে হয় না; বরং নারীরা যে কোনো রঙের বা প্রকারের কাপড় পরতে পারেন। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোনোভাবেই যেন এমন ধরনের কাপড় না পরা হয়, যাতে পর্দা নষ্ট হয়।
ইহরামের ফরজ ২টি: নিয়ত করা ও তালবিয়া পড়া।
ইহরামের ওয়াজিব ২টি: মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা।
তাওয়াফ
তাওয়াফের ফরজ ৩টি: ১.
তাওয়াফের ওয়াজিব ৬টি: ১. শরীর পাক রাখা। ২. হেঁটে তাওয়াফ করা। ৩. হাতিমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করা। ৪. তাওয়াফের সাত চক্কর পুরো করা। ৫. তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করা। ৬. তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়া।
তাওয়াফের সুন্নত ৪টি: ১. হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে তাওয়াফ শুরু করা। ২. প্রথম তিন তাওয়াফে রমল করা (বীরের মতো চলা)। ৩. প্রতি চক্করে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা। ৪. তাওয়াফ ও নামাজ শেষে জমজমের পানি পান করা।
সাঈ
সাঈ মানে সাতটি দৌড়। সাঈ করার সময় সবুজ বাতির নিচে পুরুষেরা দৌড়াবেন। নারীরা স্বাভাবিকভাবে চলবেন (বাদায়েউস সানায়ে, ২/৪৮০)।
সাঈর ওয়াজিব: ১. ওজর না থাকলে হেঁটে সাঈ করা। ২. সাত চক্কর পুরো করার পর মাথা মুণ্ডন করা।
ওমরাহর কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে হবে, যেমন তাওয়াফ করা, নামাজ আদায় করা, জমজমের পানি পান করা, সাঈ করা (সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো), মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হজ স ঈ কর র ফরজ ইহর ম ওমর হ
এছাড়াও পড়ুন:
টুকিটাকি দরকারি পরামর্শ
ছয়বার আজান
মক্কায় আপনি ছয়টি আজান শুনতে পাবেন। প্রথম আজানটি আসলে তাহাজ্জুদের; তবে তাহাজ্জুদের নামাজে কোনো জামাত হয় না।
সঙ্গে ছাতা রাখুন
মক্কার তাপমাত্রা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। তাই দিনের বেলায় সব সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন।
মিনা ও আরাফাতে মোবাইল ফোন
তুলনামূলকভাবে অনেক মানুষ মিনা ও আরাফাতে অবস্থান করেন বলে হজের সময় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায় না।
সিমকার্ড
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড কিনে নিলেই ভালো। আর হোটেলে ওয়াই-ফাই থাকে, সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, সৌদি আরবে বেশির ভাগ সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারের ভিডিও কল কাজ করে না।
কেনাকাটা
মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত সমস্যা তেমন হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কেনা ভালো।
দমে শোকর বা কোরবানি
কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সৌদি সরকারের স্বীকৃত ব্যবস্থা আছে। মসজিদের পাশের বুথ থেকে ৭২০ সৌদি রিয়ালে কুপন কেনা যাবে। এতে সময় বাঁচে এবং নিরাপদও। এর বাইরে দেওয়া হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খাবার
মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। মক্কার হোটেলগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল— সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে খাবার কিনে আনাও যায়।
প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম
সাধারণত ১ ভরি (১১.৬৬ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৮০০ রিয়াল, খেজুর কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১০০ রিয়াল, জায়নামাজ প্রতিটি ৫ থেকে ২০০ রিয়াল, প্রতিটি টুপি ১ থেকে ১০০ রিয়াল ও তসবিহ ১ থেকে ১০০ রিয়াল। (* ১ রিয়াল = ৩২.৪৬ টাকা। পরিবর্তনশীল।)
জানাজার নামাজ
মক্কায় প্রায় প্রতিটি জামাতের নামাজের পরেই কারও না কারও জানাজা হয়। এগুলো অবশ্যই আদায় করুন।
মদিনায় যাওয়া
মদিনায় মসজিদে নববিতে অবশ্যই নামাজ আদায় করবেন, প্রতি ওয়াক্ত জামাতের সঙ্গে। রিয়াজুল জান্নাতে ঢোকার জন্য আগেভাগেই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। এ ব্যাপারে আপনার এজেন্সির সহায়তা নিন।
মক্কার কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান
জাবালে নুর
মক্কায় কাবা শরিফের কাছেই জাবালে নুর বা হেরা পর্বত। এ পর্বতে ওঠানামা বেশ কঠিন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিয়মিত এ পর্বতে ওঠানামা করতেন।
জাবালে রহমত
আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রহমতের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
নামিরাহ মসজিদ
হজের দিন আরাফাতে নামিরাহ মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। মসজিদটিতে ছয়টি মিনার, তিনটি গম্বুজ ও ১০টি প্রধান প্রবেশপথ রয়েছে।
জান্নাতুল মা’আলা
জান্নাতুল মা’আলা মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি মক্কার বিখ্যাত কবরস্থান। এখানে রয়েছে বিবি খাদিজা (রা.)-এর কবর।
মসজিদে জিন
জান্নাতুল মা’আলা কবরস্থানের কাছে মসজিদে জিন। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, জিনরা এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একাধিকবার এসেছেন।
মকা জাদুঘর
মক্কা উন্মুল জুদ এলাকায় কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা। তার পাশে দুই মসজিদে ব্যবহৃত পুরোনো জিনিসপত্র দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
হজযাত্রীর রোজনামচা
হজযাত্রীরা ৪০ থেকে ৫০ দিন সৌদি আরবে অবস্থান করেন। এর মধ্যে জিলহজ মাসের ৭ থেকে ১২ তারিখ হজের আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ থাকে। আর আছে মদিনায় মসজিদে নববিতে আট দিন ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। বাকি দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি আর স্বাভাবিক জীবনযাপনে কাটে হজ পালনকারীদের।
হজ পালন করতে গিয়ে মক্কা-মদিনায় সাধ্যমতো ইবাদত করা ভালো। তাই একজন হজযাত্রীর নিজস্ব রোজনামচা বা রুটিন থাকা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা– স্থান, কাল, পাত্রভেদে সুবিধামতো আমলগুলো করার চেষ্টা করবেন। সব নামাজ মক্কায় থাকলে মসজিদুল হারামে আর মদিনায় অবস্থান করলে মসজিদে নববিতে জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা।
ভোররাত : তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়। মক্কা-মদিনায় জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করা। তাওয়াফ করা, জমজম পানি পান, কোরআন তিলাওয়াত করা।
সকাল : জমজমের পানি পান, সকালের নাশতা খাওয়া, ঐতিহাসিক স্থানে বেড়ানো, ব্যক্তিগত কাজ বা বিশ্রাম।
দুপুর : জামাতে জোহরের নামাজ আদায়। জমজমের পানি পান, দুপুরের খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া।
বিকেল : জমজমের পানি পান, মক্কা-মদিনায় জামাতে আসরের নামাজ আদায়।
সন্ধ্যা : জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায় করা। তাওয়াফ করা, জমজমের পানি পান, কোরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহর জিকির করা।
রাত : মক্কা-মদিনায় জামাতে এশার নামাজ আদায়। তাওয়াফ করা। জমজমের পানি পান, নফল নামাজ আদায়, বিতরের নামাজ আদায় করা। রাতের খাবার খাওয়া। ঘুমানোর প্রস্তুতি। আল্লাহর জিকির করা।