ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধে দায়িত্বশীল ভূমিকায় পাকিস্তান
Published: 30th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সরাসরি হামলা-পাল্টা হামলার পর যুদ্ধবিরতি হলেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ভিন্ন এক যুদ্ধ রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতশাসিত কাশ্মীরে বন্দুক হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটিকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে নয়াদিল্লি। অন্যদিকে, ইসলামাবাদ এখন বিশ্বের সামনে ভারতের বক্তব্য উল্টে দিয়ে নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার সমর্থক হিসেবে তুলে ধরছে। পাশাপাশি আগ্রাসী হিসেবে নয়াদিল্লি উত্তেজনা বাড়াতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সর্বশেষ গত বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারত আন্তরিক হলে যে কোনো বিষয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজারবাইজানের লাচিনে এক ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে শাহবাজ বলেন, ভারত যদি সন্ত্রাসবাদ দমনসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা করে, দু’দেশের বাণিজ্য পুনরায় শুরু হতে পারে।
তিনি বলেন, আমি সম্পূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, আমরা এই অঞ্চলে শান্তি চাই। এর জন্য জরুরি মনোযোগ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজন এমন বিষয়গুলো নিয়ে টেবিলে আলোচনা করা। জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে এবং কাশ্মীরের জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে কাশ্মীর সমস্যাও সমাধান করা যেতে পারে।
১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য গণভোটের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু আট দশক পরও তা এখনও হয়নি।
দুই দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর থেকেই শীর্ষ নেতারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন এবং নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। ভারত একটি বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচার শুরু করেছে। নয়াদিল্লি ৩০টিরও বেশি দেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। তারা পাকিস্তানকে ভারত ও ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলার জন্য দায়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগ এনেছে। বিপরীতে, পাকিস্তানের বর্তমান সফরের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহবাজ, সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
তারা তুরস্কের পাশাপাশি ইরান, আজারবাইজান ও তাজিকিস্তান সফর করছেন। তারা বিষোদ্গার ছড়ানোর পরিবর্তে সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ ও সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আলোচনার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। সূত্র: আল-জাজিরার
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।