‘রাতের আঁধারেই কাজটা করে ফেলতে হলো। এতো রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপন। এটাও সম্ভব। আনফেয়ার। আই ওয়ান্ট টু‌ চ‌্যালেঞ্জ।’ – কথাগুলো বলছিলেন বিসিবির সদ‌্য বিদায়ী সভাপতি ফারুক আহমেদ।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়ন পেয়ে কাউন্সিল হয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হন ফারুক। পরবর্তীতে পরিচালকরা তাকে বেছে নেয় সভাপতি হিসেবে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই চেয়ারে আর থাকা হচ্ছে না ফারুকের। নিজেদের কোটায় পরিচালক পদে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে এনএসসি।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর এই প্রজ্ঞাপন দেয় এনএসসি। যা নিয়ে মুঠোফোনে রাইজিংবিডি-কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখান ফারুক আহমেদ, ‘‘আমার সঙ্গে অন‌্যায় হয়েছে। যারা আমাকে গুরুত্ব দিয়ে এতো বড় পজিশনে নিয়ে আসল, তারাই আমাকে কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। আমি অবশ‌্যই ফাইট করবো। এভাবে ছেড়ে দিলে হবে না। আমি আনচ‌্যালেঞ্জেড যেতে দেব না। শেষ দেখেই ছাড়ব।’’

ফারুককে সরিয়ে দেয়ার যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে তা আইসিসির চোখে শাস্তিযোগ‌্য অপরাধ। এখানে স্পষ্টই সরকারী হস্তক্ষেপ হয়েছে। অতীতে এরকম হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ওপর সাময়িক নিষেজ্ঞা এসেছিল। বাংলাদেশও হয়তো সেই পথেই হাঁটছে। কেননা তার পদচু‌্যতের বিষয়টি আইসিসিকে এরই মধ‌্যে অবগত করেছেন ফারুক, ‘‘আইসিসিকে জানিয়েছি। আশা করছি তারা নিয়মের মধ‌্যে থেকে যেটা গ্রহণযোগ‌্য সিদ্ধান্ত সেটাই জানাবে।’’  

এছাড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন‌্য রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তিনি। তার ভাষ‌্য, ‘‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে নিজের জন‌্য সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করতে হবে। কোনো উপায় নেই।’’

প্রসঙ্গত, দুটি স্পষ্ট কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করেছে। প্রথমত, তার বোর্ডের ৮ জন পরিচালক (বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ) অনাস্থা প্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, বিপিএলের অনিয়ম তদন্তে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে ফারুককেই দায় দিয়েছেন এনএসসি গঠিত কমিটির সদস্যরা।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।

অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’

অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান

এনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।

জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’

আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।

এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগে

এনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’

আরও পড়ুনঅনুশীলনে বলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের মৃত্যু২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ