আনফেয়ার, আই ওয়ান্ট টু চ্যালেঞ্জ: ফারুক
Published: 30th, May 2025 GMT
‘রাতের আঁধারেই কাজটা করে ফেলতে হলো। এতো রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপন। এটাও সম্ভব। আনফেয়ার। আই ওয়ান্ট টু চ্যালেঞ্জ।’ – কথাগুলো বলছিলেন বিসিবির সদ্য বিদায়ী সভাপতি ফারুক আহমেদ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়ন পেয়ে কাউন্সিল হয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হন ফারুক। পরবর্তীতে পরিচালকরা তাকে বেছে নেয় সভাপতি হিসেবে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই চেয়ারে আর থাকা হচ্ছে না ফারুকের। নিজেদের কোটায় পরিচালক পদে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে এনএসসি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর এই প্রজ্ঞাপন দেয় এনএসসি। যা নিয়ে মুঠোফোনে রাইজিংবিডি-কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখান ফারুক আহমেদ, ‘‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। যারা আমাকে গুরুত্ব দিয়ে এতো বড় পজিশনে নিয়ে আসল, তারাই আমাকে কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। আমি অবশ্যই ফাইট করবো। এভাবে ছেড়ে দিলে হবে না। আমি আনচ্যালেঞ্জেড যেতে দেব না। শেষ দেখেই ছাড়ব।’’
ফারুককে সরিয়ে দেয়ার যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে তা আইসিসির চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখানে স্পষ্টই সরকারী হস্তক্ষেপ হয়েছে। অতীতে এরকম হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ওপর সাময়িক নিষেজ্ঞা এসেছিল। বাংলাদেশও হয়তো সেই পথেই হাঁটছে। কেননা তার পদচু্যতের বিষয়টি আইসিসিকে এরই মধ্যে অবগত করেছেন ফারুক, ‘‘আইসিসিকে জানিয়েছি। আশা করছি তারা নিয়মের মধ্যে থেকে যেটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত সেটাই জানাবে।’’
এছাড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে নিজের জন্য সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করতে হবে। কোনো উপায় নেই।’’
প্রসঙ্গত, দুটি স্পষ্ট কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করেছে। প্রথমত, তার বোর্ডের ৮ জন পরিচালক (বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ) অনাস্থা প্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, বিপিএলের অনিয়ম তদন্তে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে ফারুককেই দায় দিয়েছেন এনএসসি গঠিত কমিটির সদস্যরা।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফারুকের নামে ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগে অনাস্থা আনা যায় তাঁদের বিরুদ্ধেও
ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে দেওয়া অনাস্থা প্রস্তাবে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আট পরিচালক। যার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফারুক আহমেদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিসিবি পরিচালক হিসেবে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, পুরো স্ক্রিপটটা যেন লেখাই ছিল! পরশু রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুককে জানালেন, সরকারের ‘ঊর্ধ্বতন মহল’ তাঁকে আর বিসিবি প্রধান পদে ‘কন্টিনিউ’ করতে চাচ্ছে না। ফারুক জানতে চাইলেন, ‘কেন?’ কোনো উত্তর পাননি। এরপর কাল দুপুরে ফারুক সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। কারণ, কেন তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা তাঁকে দেওয়া হয়নি।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে সংবাদমাধ্যমে এল ফারুকের বিরুদ্ধে উপদেষ্টার কাছে দেওয়া আট বিসিবি পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাব। পরপরই এল বিপিএল নিয়ে গঠন করা সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন। বিপিএলের সঙ্গে অনেকের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে সবকিছুর দায় ফারুককে দেওয়া হয়েছে। এরপর কাল রাতেই এনএসসি বিসিবি পরিচালক হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে।
আরও পড়ুনকাউন্সিলর অনুমোদন পেয়েছেন আমিনুল, বিকেলে বোর্ড সভা১ ঘণ্টা আগেঅস্ত্র সব তাক করাই ছিল। ফারুক নিজ থেকে হার মেনে নিলে এত কিছু হয়তো হতো না। সেটা করেননি বলেই একটার পর একটা অস্ত্র ছুড়ে একপেশে খেলায় মেতে উঠে তাঁকে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ করা হলো এবং সেটা কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে।
ফারুক বোর্ডে এনএসসির মনোনীত পরিচালক ছিলেন। কোনো সমস্যা থেকে থাকলে আগে এনএসসি সেসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু অদৃশ্য কোনো জাদুবলে এনএসসি সে পথে যায়নি।
অনাস্থা প্রস্তাবে আনা অভিযোগগুলোকে ফারুক বলেছেন ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগ। অর্থাৎ গত ১২ বছরে পরিচালকেরা নিজেরা যা যা করেছেন, সব এখন ফারুকের নামের পাশে জুড়ে দিচ্ছেন। যদি তা–ই হয়, অনাস্থা তো এই পরিচালকদের বিরুদ্ধেও আনা যায়!
তার আগে বরং একটু বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে দেখা যাক কী আছে আট পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাবে, যেটির এত শক্তি?
ফারুক স্বেচ্ছাচারী, কর্তৃত্ববাদীবাংলাদেশের ক্রিকেটে ফারুককে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, তাঁরা জানেন ফারুক কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং স্পষ্টভাষী একজন মানুষ। কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় তাঁর আচরণে রূঢ়তা প্রকাশ পায়। আট পরিচালক ফারুকের এই চরিত্রকেই হয়তোবা স্বেচ্ছাচারী ও আধিপত্যবাদী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন অনাস্থা প্রস্তাবে।
কিন্তু এই আট–নয় মাসে ফারুকের ‘স্বেচ্ছাচারী ও কর্তৃত্ববাদী’ আচরণ কি আওয়ামী লীগের সময়ের সাবেক বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের চেয়ে বেশি ছিল? স্বেচ্ছাচারী, কর্তৃত্ববাদী, আধিপত্যবাদী—এসব শব্দ তো নাজমুল হাসানের সঙ্গেই বেশি যেত, যাঁর বোর্ড সভায় ভিন্নমত প্রদানের সুযোগ ছিল না বলে ফারুকের প্রতি অনাস্থা আনা পরিচালকেরাই বিভিন্ন সময় বলেছেন। কই তখন তো তাঁরা কেউ নাজমুল হাসানের প্রতি অনাস্থা আনেননি? উল্টো হীরক রাজার পারিষদের ব্যক্তিত্বহীন সদস্যদের মতো সবকিছুতে ওপর–নিচ মাথা নেড়ে গেছেন।
বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ