প্যারাগ্লাইডারে গেলেন মেঘের রাজ্যে, বেঁচে ফিরলেন অলৌকিকভাবে
Published: 30th, May 2025 GMT
এ যেন এক অবিশ্বাস্য বিষয়। রুদ্ধশ্বাস এক ঘটনা ঘটে গেছে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কিলিয়ান পর্বতের আকাশে। প্যারাগ্লাইডার পেং ইউজিয়াং দুর্ঘটনাবশত ৮ হাজার ৫০০ মিটার (২৭ হাজার ৮০০ ফুট) ওপরে উঠে গিয়েছিলেন। পৌঁছে গিয়েছিলেন মেঘের রাজ্যে, যেখানে শ্বাস নেওয়ার মতো অক্সিজেন থাকে না। তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে।
৫৫ বছর বয়সী প্যারাগ্লাইডার পেং ইউজিয়াং কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার ওপরে কিলিয়ান পর্বতে নতুন যন্ত্রপাতির পরীক্ষায় ছিলেন। আচমকা ‘ক্লাউড সাক’ নামে পরিচিত বিরল ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ তাঁকে প্রায় পাঁচ হাজার মিটার ওপরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
গত শনিবার ওই মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড হচ্ছিল পেংয়ের গ্লাইডারে লাগানো একটি ক্যামেরায়। ফুটেজটি চীনের জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ডাউইনে (টিকটকের চীনা সংস্করণ) ভাইরাল হয়ে গেছে।
ওই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পেং গ্লাইডারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাঁর মুখ আর শরীরের বিভিন্ন অংশ বরফে ঢাকা, জমে আছে পাতলা বরফকণা।
পেং চায়না মিডিয়া গ্রুপকে বলেন, ‘এটি ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা ছিল। চারপাশে শুধুই সাদা। আমি কোনো দিকে দেখতে পারছিলাম না। এমনকি কম্পাস না থাকলে আমি বুঝতেই পারতাম না, আমি কোন দিকে যাচ্ছি।’
পেং বলেন, ‘আমি নামতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু পারছিলাম না। সেই বাতাস আমাকে কেবল ওপরেই তুলে নিচ্ছিল, কেবল ওপরেই যাচ্ছি। একসময় আমি মেঘের গভীরে ঢুকে যাই।’
পর্বতারোহীদের কাছে পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মাউন্ট এভারেস্টের ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন পেং। সেই উচ্চতায় অক্সিজেনের ঘনত্ব এতটাই কম থাকে যে মানুষ সহজেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে প্যারাগ্লাইডিং করেন পেং। তিনি বলেন, আকাশ থেকে নামার সময় সম্ভবত তিনি কিছুক্ষণ অচেতন ছিলেন। তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের মুহূর্ত ছিল, গ্লাইডারটি যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় নেমে আসছিল।
পেং জানান, ওইদিন আকাশে ওড়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। কেবল মাটিতে দাঁড়িয়ে প্যারাশুট ঠিক আছে কি না, আরামদায়ক আছে কি না, সেগুলো যাচাই করছিলেন। হঠাৎ এক দমকা হাওয়া তাঁকে মাটি থেকে তুলে নেয়। তারপর সেই হাওয়া আরও তীব্র হয়ে একসময় তাঁকে আকাশে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। পেংয়ের উড্ডয়ন অনুমোদিত না হওয়ায় তাঁকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ যেন মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা এক মানুষের গল্প—মেঘের অতল গহ্বর থেকে জীবনের দিকে ফিরে আসা এক অবিশ্বাস্য যাত্রা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।
চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।
স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।
এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।
মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।
নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”
এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।
মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”
আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”
ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।
তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।
রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।
মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়?
সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।
এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।