সিলেটে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ২ উপজেলায় বন্যার শঙ্কা, প্রস্তুত আশ্রয়কেন্দ্র
Published: 30th, May 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেটে দুই দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় সিলেটে ১২৩ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সিলেটের দুটি সীমান্ত এলাকা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বেলা তিনটা পর্যন্ত সিলেটের কোনো নদ–নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এরপরও দুই উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সব নদ–নদীর পানি বেড়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি ইসলামপুর পয়েন্টে আজ বেলা তিনটায় ১০ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেটি ছিল ৭ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে গোয়াইনঘাটের ডাউকি নদের পানি জাফলং পয়েন্টে বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেটি ছিল বিপৎসীমার ৫ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে। এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বৃহস্পতিবারের তুলনায় বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানিও ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেওলা পয়েন্টে বেড়েছে। তবে কোনো পয়েন্টেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের কারণে ধলাই নদরে পানি বেড়েছে। এ জন্য উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী বলেন, পাহাড়ি ঢল নিয়ে উপজেলাবাসীর মধ্যে শঙ্কা আছে। জাফলং এলাকায় ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি বেড়েছে। তবে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। উপজেলায় ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র প রস ত ত র খ গ য় ইনঘ ট নদ র প ন ব পৎস ম উপজ ল দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী