Prothomalo:
2025-09-18@00:38:02 GMT

ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি

Published: 31st, May 2025 GMT

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাদা কোয়ার্টারের সামনেই বড়সড় খেলার মাঠ। ওখানেই হয় বুয়েটের কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত। বাসার সামনের জামাতেই ছেলেদের নিয়ে শরিক হই। দুপুরে মুগদাপাড়ায় আমার পৈতৃক বাড়িতে যাই। রাতে গোপীবাগ, আর কে মিশন রোডে শ্বশুরবাড়ি হয়ে ফেরত আসি বুয়েটের বাসায়। বহু বছর হলো, এ রকমই আমার ঈদের দিনের রুটিন।

ছোটবেলায় ঠিক কবে প্রথম ঈদের মাঠে গিয়েছিলাম মনে নেই। প্রথম যে ঈদের স্মৃতি বেশ মনে আছে, সেটি সম্ভবত ১৯৭৩ সালের। ক্লাস টুতে পড়ি। ঢাকায় তখন ঈদের প্রধান জামাত হতো পল্টন ময়দানে। এই ময়দানে এখন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। আব্বা বরাবরই আমাদের ভাইদের নিয়ে ঈদের প্রধান জামাতেই শরিক হতেন। সেই বছরও তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন পল্টন ময়দানে। জামাতের ইমাম ছিলেন জাতীয় নেতা আওয়ামী লীগের একসময়কার সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ।

নামাজ শেষে বঙ্গভবনে গেলাম। তখন সেখানে এত নিরাপত্তার বালাই ছিল না। চারদিকে চার ফুট উচ্চতার দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সামনের রাস্তাটি তখন জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আগত জনতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। সবাইকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। দুজন প্রবীণ ব্যক্তি আমাকে আদর করে ঈদ মোবারক জানালেন। পরে জানলাম দুজনই মন্ত্রী। একজন এ এইচ এম কামরুজ্জামান, অপরজন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। তখনকার পরিবেশ ছিল এমনই।

সেদিন বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বড় চাচাতো ভাইদের সঙ্গে গেলাম মেলায়। কমলাপুর রেলস্টেশনের যে জায়গায় এখন কাস্টমসের কনটেইনার ডিপোর অফিস, সেই জায়গাটি তখন ছিল পুরোপুরি ফাঁকা মাঠ; স্থানীয় লোকদের খেলাধুলা করা আর হাওয়া খাওয়ার জায়গা। এই জায়গায় বিভিন্ন উৎসবের সময় মেলা বসত। নানা স্বাদের ও রঙের বাতাসা-কদমা, খই আর মুড়ি-মুড়কি-মুরলিতে মেলা ছিল ভরপুর। মাটি, কাঠ ও রংবেরঙের কাগজের খেলনা ছিল আমাদের মতো ছোটদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।

মেলায় এক লোক নিয়ে এসেছিল অটোমেটিক স্টিমার। টিনের তৈরি। চলে কেরোসিনে; পানিতে ভাসিয়ে কেরোসিন ভেজানো সলতেয় আগুন ধরিয়ে দিলে টিনের স্টিমারটি চলতে পারত। ওটি ছিল আমার দেখা প্রথম অটোমেটিক মেশিন। আমার ছোট্ট মনে রাজ্যের বিস্ময় এনেছিল যন্ত্রটি।

আমাদের বাসা রেলস্টেশনের কাছে হওয়ায় অনেক ভিক্ষুক আসত। ঈদের দিনে এক ভিক্ষুক এলে কিছু একটা খাবার দিয়ে তাঁকে বিদায় দিই। খুশি হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বাবা, এটা কি সেমাই?’ জবাবে বলেছিলাম, না। ব্যাপারটি আমার কাছে অবাক লেগেছিল। লোকটি সেমাই চেনে না। আব্বা যখন ঘটনাটি শুনলেন, আমাকে মৃদু বকা দিলেন, কেন আমি তাঁকে সেমাই দিলাম না।

তখন সাদাকালো টিভির যুগ। শুধু বিটিভি। সেই টিভিও আমাদের মহল্লায় ছিল না। পরে যখন টিভি এল, দেখলাম ওটা একটা বড়সড় চারপেয়ে বাক্সের মতো। এখনকার মতো এত হালকা–পাতলা নয়।

ঈদের দিন রাতে সেই টিভিটি আবার বাড়ির উঠানে টেবিলের ওপর বসিয়ে দেওয়া হতো। ঈদের ছায়াছবি ও বিশেষ অনুষ্ঠান মহল্লার ছেলে–বুড়ো আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে দেখতাম। বাসার ছাদে টিভির অ্যানটেনা ঠিকমতো সেট করা না গেলে মাঝেমধ্যে ছবিও ভালো আসত না। তারপরও আমাদের আনন্দের কমতি ছিল না।

কোরবানির ঈদকে আমরা বলতাম বকরিদ। বকরিদে কমলাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট বসত। বাড়ির বড়রা হাটে হাটে ঘুরে গরু–ছাগল কিনে আনতেন। আমাদের ছোটদের কাজ ছিল বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু–ছাগল দেখে বেড়ানো। কোরবানির পর গরুর শরীর থেকে একধরনের পাতলা পর্দা নিয়ে মাটির কলসির ভাঙা মাথায় টান টান করে লাগিয়ে দিতাম। দু–এক দিন পর সেটি শুকিয়ে গেলে তৈরি হতো ঢোল। সেই ঢোলের আওয়াজে ঈদের পরের কয়েক দিন সারা মহল্লা থাকত সরগরম।

তখন আমাদের সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশ। মানুষের হাতে এত অর্থকড়ি ছিল না। ঈদের দিনে তাই ছিল না এত জৌলুশ। তবে মানুষের মধ্যে সহজ–সরল আন্তরিকতায় ভরপুর সামাজিক বন্ধন ছিল অনেক বেশি।

ড.

মাহবুবুর রাজ্জাক, অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র দ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ