Samakal:
2025-06-01@17:25:13 GMT

চীনে পৌঁছেছে বাংলাদেশের আম

Published: 31st, May 2025 GMT

চীনে পৌঁছেছে বাংলাদেশের আম

প্রথমবারের মতো চীনে রপ্তানি হলো বাংলাদেশের আম। গত ৩০ মে তিন টন আমের প্রথম চালান পৌঁছেছে হুনান প্রদেশের ছাং শা শহরের হুয়াং হুয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরেই শুল্ক ও কোয়ারেন্টিন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র দেয়।

এই চালানের আম চীনের ই-কমার্স, সুপারশপ ও তাজা খাদ্য চেইনে বিক্রি হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন কৃষিপণ্য বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম ধাপে ১০০ টনের বেশি আম রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশি আমের গুণমান ও স্বাদ চীনা ভোক্তাদের মন জয় করতে পারলে ভবিষ্যতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

এর আগে বাংলাদেশি আম প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানি হতো। এবার এশিয়ার বৃহৎ বাজারে প্রবেশে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হলো।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অবৈধ পশুর হাটের আয় মিলেমিশে ভাগবাটোয়ারা

ঈদুল আজহা সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে পশুর হাট বসানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে হাট না বসানো। প্রশাসনিক পর্যায় থেকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের তাগিদ থাকলেও তা উপেক্ষা করে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বসানো হয়েছে জনতার বাজার পশুর হাট। আর তা থেকে ফায়দা লুটছেন রাজনীতির ‘মিলেমিশে’ চক্রের সদস্যরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জনতার বাজার পরিচালনা কমিটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত– প্রতিটি পক্ষের প্রতিনিধি রয়েছেন বড় বড় পদে। এটাকে সঙ্গী করে অবৈধ হাট পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় বিত্তশালীদের সংশ্লিষ্টতায়।
অভিযোগ রয়েছে, দিনারপুর জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সদ্য মনোনীত সভাপতি হচ্ছেন গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ। 
তাঁর সঙ্গে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীরপ্রতীক) এবং গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম বজলু। কমিটির সহসভাপতিদের একজন আবার গজনাইপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহেদ আহমদ।
সম্প্রতি এই হাট নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বাজার পরিচালনা কমিটির লোকজন। হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ এই ঘটনায় মামলা হয়। রোববার গোপলার বাজার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সত্যেন্দ্র দেবনাথ বাদী হয়ে কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুর হাট বন্ধে প্রশাসন মাইকিং ও লিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পরও শনিবার সেখানে হাট বসানো হয়। হাট বন্ধে ঘটনাস্থলে গেলে দায়িত্বরত এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে তর্কে জড়ায় কমিটির লোকজন। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হাটে কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে লুটপাট। হাইকোর্টের রুলনিশি আর প্রশাসনিক জটিলতার মারপ্যাঁচে হাট বসানোর বন্দোবস্ত করে কমিটির লোকজন।
বাজার এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মহাসড়কের পাশে গজনাইপুর ইউনিয়নে প্রতি শনিবার বসছে কোরবানির পশুর এই বিশাল হাট। প্রতিবারে ২০ থেকে ২৫ হাজার গরু উঠছে। বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার পশু। নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে এর বাইরেও রাখা হয়েছে পশুর পাল।
একটি সূত্রে জানায়, প্রতি হাটে প্রত্যয়ন ফির নামে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে; যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। শনিবার হাট বসলে সেটি বন্ধে হবিগঞ্জ জেলা ও নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়ে মহাসড়ক ও বাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
এর আগে জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান ৭ জানুয়ারি জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণের নির্দেশ দেন। ৩১ জানুয়ারি আইন অনুযায়ী বাজার পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সর্বশেষ ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সারাদেশে মহাসড়কের পাশে পশুর হাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
শনিবার হাটে গরু বোঝাই যানবাহন আসতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে ইউএনও রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্‌দ্বীপ তালুকদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন দেলোয়ার, রাজস্ব শাখার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রণজিৎ চন্দ্র দাস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ উল্লাহসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা জনতার বাজার এলাকায় অবস্থান নেন।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনতার বাজারের প্রবেশপথ পানিউমদা, আইনগাঁও, কান্দিগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে গরুবোঝাই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান প্রবেশে বাধা দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্‌দ্বীপ তালুকদারকে লক্ষ্য করে মারমুখী হয়ে ওঠেন বাজার কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রতি হাটে ১০-১৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। বাজার কমিটি বলছে, গত বছর ৯১ লাখ টাকা কালেকশন করে সরকারি ফান্ডে জমা করা হয়েছে। বর্তমানে কালেকশনের টাকা স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে অতিরিক্ত টাকা স্থানীয় মসজিদের ফান্ডে জমা হচ্ছে বলে জানান।
হাটের ব্যাপারে কমিটির সভাপতি বলেন, এখানে সব দলের লোকজন আছে। সবাই মিলেমিশে বাজার পরিচালনা করছেন। প্রতি হাটে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা উঠলেও ছয় মাসে কোন লাভ নেই। হাটের হিসেব রাখেন বিএনপি নেতা কাওসার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন জানান, জানুয়ারি থেকে সরকারিভাবে কোনো কালেকশন হয়নি বাজার থেকে। বাজার কমিটি কালেকশন করে নিজেদের মতো সব নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বাজারের বৈধতা নিয়ে করা হাইকোটের রিট ও রুলের কপি তাঁর হাতে পৌঁছেছে।
আইনের মারপ্যাঁচ, রুলনিশির জটিলতা
সম্প্রতি মহাসড়কের পাশে এই পশুর হাট না বসানোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে এর বিরুদ্ধে বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট করেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে রুল জারি করে, কেন বাজার স্থগিতের আদেশ দেওয়া হলো তার ব্যাখ্যা দিতে বলেন। আইনের মারপ্যাঁচে এই হাট বন্ধ হয়নি, জনতার বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে কোটি টাকার বাণিজ্য। প্রত্যয়নের নামে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ টাকা, তাও কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই। এদিকে রুলনিশি নিয়ে জটিলতার মাঝে পাঁচ মাসে ১৭ দফা হাট বসায় বাজার কমিটি। প্রতিবারই পশু বিক্রয়ের সময় ‘প্রত্যয়ন’ নামে প্রতি ব্যবসায়ীকে দিতে হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি হাটে আদায় হচ্ছে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। 
নরসিংদী থেকে আসা পশু বিক্রেতা রাহিম আলী বলেন, হাটে গরু বিক্রির সময় বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয়ন বাবদ অর্থ আদায় করা হয়। এসব অর্থের কোনো রিসিট দেওয়া হয় না। প্রদানকৃত প্রত্যয়নগুলোর কোনো সরকারি ভিত্তি নেই। এতে করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, হাটটি যেহেতু অনুমোদনহীন, তাই কোনো প্রত্যয়নপত্র বা রসিদের সুযোগ নেই। অবৈধভাবে পরিচালিত হাট থেকে অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণামূলক। প্রশাসনের স্পষ্ট নির্দেশনার পরও হাট বসায় এবং অর্থ আদায়ে কোনো ধরনের বাধা না আসায়, তারা প্রশাসনের নীরবতা ও নিষি্‌ক্রয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অন্য একটি পক্ষ বলছে, প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে কথা হলেও মূলত আইনের মারপ্যাঁচের সুযোগ নিচ্ছে চক্রটি।
বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন, বাজার তাদের মাধ্যমেই পরিচালিত। হাইকোর্টের রুলনিশি জারির পরে তা চলছে। আগে ইউএনও অফিস খাস কালেকশন করত। গত বছর তারা ৯১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছে। আদালত রুলনিশি জারি করেছেন জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আদেশ স্থগিত করে। বাজারের কালেকশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধিকাংশ টাকা হাটের কাজেই খরচ হয়। বাকিটা মসজিদ ফান্ডে দিয়ে দেন। জনগণ তাদের বাজারে বসিয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান জানান, অবৈধ গরুর হাটে প্রশাসনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের জন্য ৩৮ জনের নামে নবীগঞ্জ থানায় মামলা রের্কড হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, বাজারে হাট না বসাতে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার পর তারা মানেননি। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। জোর করে অবৈধ হাট বসিয়ে তারা কয়েক কোটি টাকা লুট করেছেন। মামলার বাদী করা হয়েছে গোপলার বাজার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সত্যন্দ্র দেব নাথ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ