সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বাড়ছে
Published: 1st, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। গতকাল শনিবার রাতেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। জেলা শহরের পাশে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এ সময় জেলায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। আগামী কয়েক দিনও একই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আছে। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৪১০ মিলিমিটার। এই ঢলের পানি ভাটিতে নামলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাউবোর তথ্যমতে, রোববার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ছিল ৬ দশমিক ৮৭ মিটার, যা বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচে। গতকাল একই সময়ে তা ছিল ৬ দশমিক ৭৮ মিটার। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৮ দশমিক ৮০ মিটার।
সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই ও খাসিয়ামারা নদীগুলোর পানি বাড়ছে। মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে, যা বন্যার সৃষ্টি করে। ঢলের পানি প্রথমেই প্রবেশ করে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চলে।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জুয়েল আহমদ বলেন, উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামছে। পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে।
বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি হিসেবে তাহিরপুর উপজেলায় ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের তালিকা ও জরুরি যোগাযোগের নম্বর প্রচার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি ও ঢলের কারণে পানি বাড়ছে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’
জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, প্রতিটি উপজেলায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব উপজেলা সাধারণত আগে প্লাবিত হয়, সেগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির বিবেচনায় কিছু শুকনা খাবার, ওষুধ, মোমবাতি ঘরে মজুত রাখতে হবে। গোলার ধান, কাপড়চোপড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতিও সতর্ক থাকতে হবে।
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র পর স থ ত প রস ত ত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ