বিলে চাষাবাদ ও সেখান থেকে ফসল বাড়িতে নেওয়ার একটিমাত্র রাস্তা। বছরের পর বছর সে কাঁচা রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতে কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। ভোগান্তির শেষ থাকে না কৃষকদের। 

একটি সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েও লাভ হয়নি। অগত্যা বাধ্য হয়ে নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি ইট বালি ফেলে রাস্তা নির্মাণ শুরু করলেন গ্রামবাসী।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌরনগর-বিন্যাবাড়ি গ্রাম সংলগ্ন মাদারি ফকিরের বাড়ি থেকে ছয় আনির বিল অভিমুখে রাস্তাটি শনিবার (৩১ ম) থেকে নির্মাণকাজ শুরু করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘের কাঁচা রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিলে চাষাবাদে যাতায়াত ও ফসল আনা-নেওয়ার জন্য এটি একমাত্র রাস্তা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে রাস্তাটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। বৃষ্টি হলেও কাদা পানিতে চলাচল দায় হয়ে যায়। গরু-মহিষের গাড়ি ফসল নিয়ে বিল থেকে আসতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নিজেদের প্রয়োজনে ইট-বালি ফেলে রাস্তাটি নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাদুল হক বলেন, “ছয় আনির বিলে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চাষাবাদ করেন। এই ফসলই এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু বিলে যাতায়াতে কৃষকের ভোগান্তির শেষ নেই, অবহেলিত। গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। অনেকে আহত হয়েছে। রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে আমরা স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কাজ হয়নি। তাই আমরা গ্রামবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করছি।”

৮ নম্বর ওয়ার্ড এর সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, “আমাদের এই মাঠে প্রচুর ফসল জন্মে। এখানে অনেক জমি আছে। কিন্তু মাঠের ফসল আমরা ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারি না। গরু-মহিষের গাড়ি কন আর ভ্যান গাড়ি কন, কোনো গাড়ি এখান দিয়ে যাতায়াত করতে পারে না। বিল থেকে মূল সড়কে উঠতে পারে না। কাদার মধ্যে হাবুডুবু খায়। ফসল নষ্ট হয়। এই কারণে আমরা নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটা নির্মাণ করলাম।”

স্থানীয় কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, “আমাদের এই সড়কটা খুব খারাপ। কৃষকরা বিল থেকে ধান কেটে গাড়িতে আনার সময় বিপদে পড়ে। কাদা পানিতে গাড়ি নষ্ট হয়। আবার নিচু বিলের রাস্তা থেকে উঁচু মুল সড়কে উঠাতে পারে না। আশপাশের মানুষ ডেকে এনে সবাই মিলে গাড়ি ঠেলে উপরে তুলতে হয়। এ সময় কেউ বা আহত হয়। এইরকম কষ্ট হয়। দেখলাম যখন কোনো জায়গা থেকে কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না, তখন গ্রামের মানুষ সবাই পরামর্শ করে নিজেরাই টাকা দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করছি।”

স্থানীয় বিআরডিবির গ্রুপ ম্যানেজার শাহীন আলম বলেন, “এই ছয় আনির বিলে সরকারি বিআরডিবির অনুমোদিত পাঁচটি গভীর নলকূপ আছে। এছাড়া প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি আছে। বিলের সমস্ত ফসল কৃষকরা এই একটা রাস্তা দিয়েই উত্তোলন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে রাস্তাটি অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বার গেছেন, তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের সবাই চাঁদা তুলে, অনেকের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এলাকাবাসীর প্রচেষ্টা বা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমি রাস্তাটি সরেজমিন গিয়ে দেখব। সেখানে একটি সাবমারসিবল সড়ক করতে কেমন কী লাগবে সেটি যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’’

ক্যাপশন: নিজেদের উদ্যোগ আর অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা মেরামত করছেন গ্রামবাসী।

ঢাকা/শাহীন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র মব স ল সড়ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কারও ওপর আক্রমণ হলে যৌথভাবে জবাব দেবে পাকিস্তান ও সৌদি আরব

পাকিস্তান ও সৌদি আরব ‘কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই করেছে। বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ চুক্তি সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে সেটাকে দুই দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে দেখবে রিয়াদ ও ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদের ইয়ামামা প্রাসাদে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজ শরিফের বৈঠক হয়। সেখানে দুই নেতা চুক্তিতে সই করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ জোরদার করার লক্ষ্যে দুই দেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিজেদের সুরক্ষিত করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি অর্জনের জন্য উভয় দেশের অভিন্ন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে এই চুক্তিতে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসলামাবাদ ও রিয়াদের মধ্যে ‘প্রায় আট দশকের ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব...ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি সংহতির বন্ধন...অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার’ ভিত্তিতে এ চুক্তি সই করা হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলেছে, দু্ই পক্ষ ও তাদের প্রতিনিধিদল উভয় দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছে। একই সঙ্গে দুই পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এর আগে সৌদি আরব সফররত শাহবাজ শরিফ ইয়ামামা প্রাসাদে পৌঁছালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সৌদি যুবরাজ। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ