ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে ফের অবরুদ্ধ নগর ভবন, সেবা বন্ধ
Published: 1st, June 2025 GMT
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে আবারও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতা-সমর্থকরা। সেই সঙ্গে নগর ভবনের মূল ফটকসহ সব নাগরিকসেবা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানো হয়েছে। কর্মবিরতিতে রয়েছেন নগর ভবনের শ্রমিক ও কর্মচারীরা। ফলে সব ধরনের নাগরিকসেবা বন্ধ রয়েছে।
রোববার নগর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে স্লোগান স্লোগানে মিছিল নিয়ে নগর ভবনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে তারা মূল ভবনের নিচে অবস্থান নেন। এতে নগর ভবন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ‘ইশরাক তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘ইশরাকের শপথ নিয়ে টালবাহানা মানবো না, মানবো না’, ‘ইশরাক ভাই এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
প্রধান ফটকে তালা থাকায় নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিক সেবা। ফলে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
কদমতলী ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম দিপুর নেতৃত্ব প্রায় শ’খানেক নেতাকর্মী নগর ভবনের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইশরাক হোসেন জনতার মেয়র। তাঁর শপথ নিয়ে সরকার টালবাহানা করে অন্যায়ের আশ্রয় নিচ্ছে। আদালত অবমাননা করছে। আমরা শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে আছি। জনতার মেয়রকে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
১৪ মে থেকে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে টানা অবস্থান ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা। একই দাবিতে গেল সপ্তাহে দুই দিন যমুনার সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকা ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই গেজেট বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানো নিয়ে করা আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
২৯ মে বিকেলে মেয়রের পদ বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ইশরাক হোসেন। এ সময় তিনি সরকারে উদ্দেশে বলেন, ‘অবিলম্বে উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে শপথ আয়োজনের ব্যবস্থা করুন। আর এটি আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকারে) শেষবারের মতো প্রতি আহ্বান।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ইশর ক হ স ন ইশর ক হ স ন নগর ভবন র অবস থ ন শপথ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর চালুর প্রস্তাব কমিশনের, আলোচনায় উত্তেজনা
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের উদ্দেশে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কটাক্ষ করে বলেন, ‘২৩ সালে কোথায় ছিলেন?’ তাঁর এ মন্তব্যে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে ক্ষমা চান এহসানুল হুদা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিনের সংলাপের একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, বেলা ১টা ৫০ মিনিটের পরে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না।
উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না। তিনি বক্তব্য শেষ করার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ভোটের সংখ্যানুপাতিকের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাসিন।
তখন সালাহউদ্দিন আহমদ একটি ব্যাখ্যা দেন। তখনই জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ তখনই জাবেদ রাসিন তাঁর প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়াই) এবং এ নিয়ে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়।
তাঁদের দুজনই মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। তখন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ, আজকে যদি সে প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’
তারপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (এহসানুল হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন। আখতার তখন বলতে থাকেন, ‘আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।’
এ পর্যায়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘কারও লোকাস স্ট্যান্ডি (অধিকার/ সামর্থ্য) নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নেই। প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডি আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’ তখন আখতার বলেন, ‘গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।’
আলী রীয়াজ তখন বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’ আখতার তখনো বলতে থাকেন, ‘সবাইক নিয়ে আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা মাঠে নেমে এল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য ওনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি সরি বলেন।’ এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকি এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে আলী রীয়াজ তাঁকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন। তখন জোনায়েদ সাকি কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু মাইক না থাকায় তা শোনা যায়নি। এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ তখন এহসানুল হুদাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে তার জন্য সরি বলেন।’
তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম, ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল? তারপরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’
এরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ঘোষণা করেন। বিরতির সময়ে সম্মেলনকক্ষে এহসানুল হুদাকে আবার আখতারের কাছে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁর সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তখন হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিনক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদেরকে নিয়ে প্রশ্ন করার ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) ছিল না।’ তখন পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, আপনার এটা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। পরে আখতার এহসানুল হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।
আজকে সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ বিধানসম্পর্কিত বিধান; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার; রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব ; তত্ত্বাবধায়ক সরকার; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণসম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আজকে আলোচনা শুরুর সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যেই আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।