দেশে-বিদেশে আইসিইউতে ১ বছর, অবশেষে চোখ খুললেন জব্বার
Published: 1st, June 2025 GMT
এক বছর পরে চোখ খুলেছেন সৌদি প্রবাসী শ্রমিক আবদুল জব্বার সরদার (৪৫)। তবে দুই চোখ এখনো খুলতে পারেননি। কেবল বাম চোখ খুলে তাকিয়েছেন। এতেই তার পরিবার উচ্ছ্বসিত। আবদুল জব্বার সড়ক দুর্ঘটনার পরে সৌদি আরবে টানা এক বছর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।
দেশে এনেও গত ২৬ মে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শনিবার (৩১ মে) তাকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে দেয়া হয়েছে। আইসিইউ থেকে বের করার সময় তিনি এক চোখ মেলে তাকান।
হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, আবদুল জব্বার সরদার একেবারে কঙ্কাল হয়ে গেছেন। ওখানে এক বছর ইউসিইউতে ছিলেন। তার শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি দরকার। মাথায় একটা অস্ত্রোপচার লাগবে। তিনি আশা করছেন, এরপরই জব্বারের জ্ঞান ফিরতে পারে।
আরো পড়ুন:
জোড়া মাথার দুই কন্যাশিশুর জন্মের আগেই মৃত্যু
শ্রীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেওয়ার পরদিন থেকেই অনুপস্থিত চিকিৎসক
তিনি আরো জানান, তার গলার মধ্যে ‘ট্রাকিওটমি টিউব’ ঢোকানো রয়েছে। সেটা সৌদি আরবেই আইসিইউতে ভর্তির পরে ঢোকানো হয়েছে। এই পাইপটা আর কয়েকদিন পরে বের করে নেয়া হবে। তাহলে তিনি কথা বলতে পারবেন। এখন পাইপের কারণেই কথা বলতে পারছেন না।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার হিরানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা জব্বার সরদার। তিনি কৃষিশ্রমিক ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। দুর্ঘটনার পর থেকে তার স্ত্রী আদরি খাতুন স্বামীকে দেশে ফেরানোর জন্য পাগালের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। এমনকি ইউএনও অফিসে ঢোকার জন্য তাকে ২২ দিন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তার চোখে একটাই স্বপ্ন ছিল, স্বামী চোখ মেলে তাকাবেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি সৌদি আরবে যান। সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার পর বিমানবন্দর নামলেই তাকে ক্লিনারের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি বুঝতে পারেন, দালালেরা তাকে বিমানবন্দরের ক্লিনার হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিন বছর পর শূন্য হাতে তাকে বিমানবন্দর থেকে বিদায় করে দেয়া হয়।
হঠাৎ দেখা পাওয়া এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরে অন্যত্র কাজ পেলেও সুদিনের আর দেখা পাননি জব্বার। এক বছর আগে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এই খবর পেয়ে স্বামীকে ফেরাতে সরকারের এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ছোটাছুটি শুরু করেন স্ত্রী। তার চেষ্টায় অচেতন অবস্থায় দেশে ফিরেছেন জব্বার সরদার।
শনিবার (৩১ মে) রাতে রামেক হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাবার মাথার কাছে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন মেয়ে জলি আরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘আব্বা আমাকে চিনতে পারচে। আমি কথা বুলছি, তখন একখানি মুখটা হাসির মতোন করল। কথা বুলার চেষ্টা করছে।’’
স্ত্রী আদরি খাতুন জানান, দুর্ঘটনায় পড়লে তাকে ফিরিয়ে আনার মতো টাকাও বাড়িতে ছিল না। ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা জোগাড় করে বিদেশে গিয়েছিলেন জব্বার সরদার। সেই ঋণও শোধ হয়নি। তার স্বামী ধারণা করেছিলেন, সৌদি আরবে পুলিশ ধরলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। তিনি নিজে থেকে পুলিশের কাছে ধরা দেন। কিন্তু পুলিশ তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তাকে আবার ছেড়ে দেয়। এরপর নিরূপায় হয়ে জব্বার সেখানকার একটা নদীর ধারে বসে কাঁদছিলেন। পকেটে তখন ভাত খাওয়ার একটি টাকাও ছিল না।
এ সময় তাকে দেখে অপরিচিত একজন লোক খাবার দিয়ে যান। কয়েক দিন পর লোকটি জানতে চান, কী হয়েছে, বসে কাঁদেন কেন। পরিচয় হয়। লোকটা রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা এলাকার মানুষ। নাম মোয়াজ্জেম। তিনি ভারতীয় একটি মালিকের টাইলস কারখানায় জব্বারকে একটি কাজ জুটিয়ে দেন। সেখানেই কাজ করছিলেন। এই অবস্থায় গত বছর ১০ মে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তাকে উদ্ধার করে সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করে এক বছর পর তিনি স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
আদরি জানান, স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে যা টাকা পয়সা লেগেছে সবই ধার। তিনি আশা করছেন, তারা স্বামী সুস্থ হলে সব ধার শোধ করে দেবেন। আদরি বলেন, বিমানবন্দর থেকে এনে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে সাত ঘণ্টা রাখতেই ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। তখন নিরূপায় হয়ে ২৫ হাজার টাকায় অক্সিজেনসহ গাড়ি ভাড়া দিয়ে গত ২৪ মে রাজশাহী আসেন। প্রথম দিন আইসিইউতে বেড পাওয়া যায়নি। পরদিন ২৫ মে বেড পান। জব্বারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে তার পরিবার।
প্রবাসী কর্মী বা তার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসে আহত ও অসুস্থ কর্মীকে দেশে ফেরত আনা এবং হাসপাতালে ভর্তিতে সহায়তা করার কার্যক্রম রয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের। জব্বারের স্ত্রী আদরি এ জন্য গত ১৩ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন। কিন্তু আর্থিক সহায়তা পাননি।
জানতে চাইলে বোর্ডের সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ) মাইন উদ্দিন বলেন, ‘‘জব্বারের পরিবার গত জানুয়ারিতে আবেদন করেন। পরে আমরা তার দেশে ফেরানোর বিষয়ে দূতাবাসে চিঠি দিই। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল দূতাবাসে একটি তাগিদপত্র দিয়েছি। পরে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। এখন তার পরিবার চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারে। জব্বার নিবন্ধিত শ্রমিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দিতে পারব।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র পর ব র আইস ইউত দ র ঘটন এক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।
সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।
নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত