কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। রোববার দুপুরে কুলিয়ারচর বাজারে হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব।

অসুস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন- ব্যাংক ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, কর্মকর্তা সিয়াম রহমান, হোসনা বেগম, সৌমিক জামান খান ও সিকিউরিটি গার্ড কামাল মিয়া। অচেতন আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, আজ রোববার দুপুর দেড়টায় হঠাৎ কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকে কয়েকজন গ্রাহক এসে দেখতে পান ব্যাংকের ভিতর ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী অসুস্থ বোধ করছেন। এসময় তারা বমিও করছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, ব্যাংকের মধ্যে ‘বিষাক্ত দুর্গন্ধ’ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অজ্ঞান হয়ে যায়। এসময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুইজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চারজনকে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা দুইজনকে কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে তারা দুইজনও বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। বর্তমানে তারা ৬ জনই বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ ভুলন জানান, ‘৬ কর্মকর্তা দিয়ে ব্যাংকটি পরিচালিত হয়। এদের মধ্যে ২ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ। ব্যাংকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষাক্ত গ্যাসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আমরা এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। তবে যতটুকু বুঝতে পেরেছি ব্যাংকে কোনো লুটপাট হয়নি।’

এ বিষয়ে আরেক ব্যাবসায়ী কামরুল ইসলাম মুছা বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। এসে সিয়াম ও হোসনা নামের দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার অবনতি দেখলে তাদের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।’

এ বিষয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমিসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুলিয়ারচর থানা পুলিশ ও বাজিতপুর ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসেন। এখানে এসে কয়েকজন কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি এখানে কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তবে ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে। ব্যাংকটি আপাতত বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, ‘বাজিতপুর আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-শাখা কুলিয়ারচর ব্যাংকটি। দুপুরে যে কোনো এক সময় ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীরা অজ্ঞান হয়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ভর্তি রয়েছেন। যতটুকু জানতে পেরেছি তাদের অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করেছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের অক্সিজেন দিলে কিছুটা সুস্থ হন। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে তাদের কী ধরনের চেতনানাশক দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংক তালাবদ্ধ করে রেখেছে খোলার পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে আইএফআইসি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ ক ল য় রচর স ব স থ য কমপ ল ক স ল ইসল ম ম ক ল য় রচর কর মকর ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৪ সালে আইএফআইসি ব্যাংকের লোকসান ১২১ কোটি টাকা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংক ২০২৪ সালে ১২১ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। প্রায় এক দশক ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে এসেছে, সালমান এফ রহমান পদে থাকার সময় ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ তুলে নেন। এর ফলে লোকসানে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকটি।

গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন হয়। এতে কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেবে না।

ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ৬৩ পয়সা লোকসান হয়েছে। আগের বছর শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫৬ পয়সা আয় হয়েছিল। সর্বশেষ বছরে সমন্বিতভাবে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৩ টাকা ৪৮ পয়সা, যা আগের বছর ৩ টাকা ৩৬ পয়সা ছিল। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৮ টাকা ১৬ পয়সা।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ জুলাই।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৩০০ কোটি টাকা ও ২০২২ সালে ৩৪৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৮২ কোটি টাকা বা ৩৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংকে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছিলেন সালমান এফ রহমান। ব্যাংকটি থেকে ২০২০ সালে ৪৪০ কোটি টাকা নিলেও ২০২১ সালে কোনো টাকা নেননি। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এই সময়ে প্রায় তিন হাজার টাকা তুলে নেন। এতে ব্যাংকটিতে ৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা আটকে পড়েছে। আরও বিভিন্ন নামে ব্যাংকটি থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সুবিধাভোগী তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালে আইএফআইসি ব্যাংক কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে। এই অর্থের বড় অংশ দ্রুত নগদে তুলে নেওয়া হয়। সন্দেহ হওয়ায় ব্যাংকটির এসব ঋণ পরিদর্শনে একটি দলকে পাঠানো হয়। তবে সেই কর্মকর্তারা ব্যাংকটিতে পৌঁছামাত্র সালমান এফ রহমান গভর্নরকে ফোন করে চাপ দেন। পরপরই সেই দলটিকে কাজ না করে ফিরিয়ে আনা হয়। তখনই বুঝতে পারি, এই ঋণের সুবিধাভোগী বেক্সিমকো গ্রুপ। এর পর থেকে ব্যাংকটির ওপর তদারকি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিদায়ী বছর থেকে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেনারেটরের গ্যাসে অজ্ঞান হন আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা: পুলিশ
  • বগুড়ায় আইএফআইসি ব্যাংকের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ
  • কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকে অচেতন পাওয়া গেল ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে
  • কিশোরগঞ্জে হঠাৎ অসুস্থ ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী
  • ব্যাংকের ভেতরে পড়ে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, করছিলেন বমি
  • ২০২৪ সালে আইএফআইসি ব্যাংকের লোকসান ১২১ কোটি টাকা