দেশের পাঁচ জেলায় আজ রোববার বজ্রপাতে দুই নারীসহ পাঁচজন মারা গেছেন। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক নারী, দিনাজপুরের হাকিমপুরে এক নারী, বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রবাসী যুবক, বরগুনার আমতলীতে কৃষক ও সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সাইংজুরী গ্রামে বজ্রপাতে যোগেশ সরকারের স্ত্রী সূর্য রানী সরকারের (৩২) মৃত্যু হয়েছে। আজ বিকেলে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তাঁর ছেলে বাঁধন (১০), প্রতিবেশী মায়া রানী সরকার (৪০)। আহত দু’জনকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ছেলেকে নিয়ে সূর্য রানী বাড়ির পাশে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গেলে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। এ সময় বজ্রপাত হলে তারা আহত হন। তাদের উদ্ধার করে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সূর্য রানীকে মৃত ঘোষণা করেন।
দিনাজপুরের হাকিমপুরে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে তাসলিমা বেগম (৪৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে উপজেলার খাটিয়াচড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তাসলিমা বেগম ওই গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। অন্যদিকে একই গ্রামে আবু রাহাত সরকার (২৪) নামের এক যুবক বৃষ্টি শুরু হলে পাওয়ারটিলার ঢাকতে গিয়ে বজ্রপাতে আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার আগমুহূর্তে তাসলিমা মাঠ থেকে গরু আনতে যাচ্ছিলেন। বাড়ির কিছুটা দূরে পৌঁছালে বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যদিকে, একই গ্রামেই রাহাত পাওয়ারটিলার ঢাকতে গেলে বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে ইউনুস খান (২৬) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার বলেশ্বর নদীতে গোসল করতে গেলে বজ্রপাতে আহত হন তিনি। স্থানীয়রা উদ্ধার করে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইউনুস খান রায়েন্দা গ্রামের সায়েদ খানের ছেলে।
বরগুনার আমতলীতে ঘাস কাটতে মাঠে গিয়ে বজ্রপাতে বেল্লাল খান (৩২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বেল্লাল ওই গ্রামের আতাহার খানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশের মাঠে ঘাস কাটার সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে বেল্লাল মাঠের পানির মধ্যে লুটিয়ে পড়েন। দূর থেকে দেখতে পেয়ে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জের শাল্লায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে সেলিম মিয়া (৩০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোরে উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম আটগাঁও গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা]
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস