আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে উৎপাদনশীল খাতে অগ্রিম আয়কর কমানো হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নতুন বাজেটে অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হবে। মূলত শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে যারা পণ্য তৈরি করে (ফিনিশড প্রোডাক্ট) এমন সব প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার আওতায় পড়বে। এর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ (আইটি) সব খাত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
দেশে উৎপাদনশীল খাত বলতে মূলত পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প, কৃষি এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই সঙ্গে কৃষি, শিল্প, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া ও ওষুধসহ পরিষেবা এবং নির্মাণ খাতও রয়েছে।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উৎপাদনশীল খাতে অগ্রিম আয়কর কমানো হলেও তাতে পণ্যের মূল্যে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে তা ব্যবসার ব্যয় ও অন্যান্য চাপ কমাতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তে ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার অবশ্যই হবে। ব্যবসায়ের ব্যয় বাড়ছে, তাই এটা স্বস্তিদায়ক হবে। কিন্তু বড়ভাবে বিনিয়োগ বা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি দেশের সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’
কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের শিল্প খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও পরে তা আর ধরে রাখা যায়নি। গত কয়েক বছরে দেশের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরে অর্ধেকের চেয়ে বেশি কমে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে আসে।
যদিও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশে উঠবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর আগে ২০২০–২১ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরবর্তী ২০২১–২২ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা অবশ্য সরকারের অগ্রিম আয়কর হ্রাসের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও সার্বিক কর কাঠামো কেমন হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের উৎসাহিত করবে। তবে কর কমানোর হার খুবই কম। তাই সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। আবার সার্বিক কর কাঠামো কেমন হবে, সেটাও দেখতে হবে।’
দেশের অগ্রিম কর আদায়ের ইতিহাস বেশ পুরেনো। ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজস্ব আহরণে এ ধরনের কর আদায়ের চর্চা চলে আসছে। মূলত রাজস্ব আহরণের সহজ পদ্ধতি হিসেবে দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে উৎসে কর হিসেবে বা ব্যবসার টার্নওভার বা লেনদেনের ওপর এ ধরনের কর ধার্য করা হয়। এটি মূলত কাঁচামাল ও পণ্যের আমদানির সময় প্রযোজ্য হয়, যা পরে বার্ষিক আয়কর রিটার্নে সমন্বয় করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, লৌহ বা লৌহজাত পণ্য, সিমেন্ট, সুগন্ধি, কার্বনেটেড বেভারেজ, গুঁড়ো দুধ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা পণ্যের বিপরীতে নেওয়া অগ্রিম আয়কর পরে সমন্বয় করা হয়। তবে সব খাতে এ সুবিধা দেওয়া হয় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপ দনশ ল খ ত প রব দ ধ দশম ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল