বেতন-বোনাস না পাওয়ায় সড়কে অবস্থান শ্রমিকদের
Published: 1st, June 2025 GMT
বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে সাভারের হেমায়েতপুরে সড়ক অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকরা। এ কারণে গতকাল রোববার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভকারীরা বসুন্ধরা পোশাক কারখানার শ্রমিক। তারা জানান, বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় সম্প্রতি পুলিশ ওই কারখানার মালিক শহীদুল্লাহকে হেফাজতে নেয়। তিনি এপ্রিলের বকেয়া বেতন ১ জুন ও মে মাসের বেতন ৪ জুন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রোববার এপ্রিলের বেতন তুলতে গিয়ে শ্রমিকরা জানতে পারেন, কারখানার মালিক পলাতক। এতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি নেন তারা। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিকেল ৩টার দিকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়ক অবরোধ করেন। বৃষ্টিতে ভিজেই সেখানে অবস্থান করেন রাত ৮টা পর্যন্ত। ওই কারখানার শ্রমিক শিল্পী আক্তার বলেন, তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া। ঈদ বোনাসও পাননি। এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছে। পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় ঘর ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছেন না বলে জানান পারুল আক্তার নামে আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘দোকানদার পর্যন্ত বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমরা কী খাব, কোথায় যাব? বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে। সামনে আবার কোরবানির ঈদ! বেতন-বোনাস না পেলে বাড়িতেও যেতে পারব না।’
শ্রমিকদের দাবি, প্রয়োজনে কারখানা বিক্রি করে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ, পুলিশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান তারা।
পাঁচ ঘণ্টা ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহন আটকা পড়ায় সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটে
চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী-পথচারী। রাত
১১টা পর্যন্ত ওই সড়কে শ্রমিকদের অবস্থানের তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো.
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কারখানার মালিক শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কারখানায় গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাষ্য, আগেও শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় কর্মসূচি পালন করে। তখন তারা মালিককে এনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তখন শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের জন্য মালিক ৫৮ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তা মানেননি। তারা একসঙ্গে সব পাওনা পরিশোধের দাবি তোলেন। কারখানা মালিক দুই ধাপে তা পরিশোধের আশ্বাস দেন। রোববার বিকেলে তা পরিশোধের সময় দেওয়া হলেও সকাল থেকেই তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। রাত ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তায় অবস্থান করছেন। কিছু শ্রমিক চলে গেলেও অনেকে আছেন। তারা বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি তারা বিজিএমইএকে জানিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন পর শ ধ পর শ ধ র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিজম বিলোপে প্রয়োজন সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সক্ষমতার প্রমাণ করতে হবে। ফ্যাসিস্টের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের কালো ছায়া এখনও রয়ে গেছে। ফ্যাসিজমের বিলোপে প্রয়োজন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যার মাধ্যমে একটি ন্যায্য সরকার গঠিত হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
নির্বাচন কীভাবে হবে- প্রশ্ন রেখে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের আমির গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা দিয়েছিলেন। এর ভিত্তিতে একানব্বইয়ের নির্বাচন হয়। যা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে আদালতের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা খতম করা হয়েছিল। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধ্বংস করতে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা খতম করা হয়েছিল। এর পরিণতি বাংলাদেশ ১৫ বছর ভোগ করেছে।
জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অনেক কূটনৈতিক বন্ধু বলেছিলেন, তাদের পরীক্ষা করো- সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় কিনা। জামায়াতের ২৩ প্রার্থীর ১২ জন কারাগারে ছিলেন। তারপরও আগের রাতে ভোট দিয়ে ফেলেছিল আওয়ামী লীগ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। রাজনৈতিক বন্ধুদের অনেকে আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, অতীতে অনেক সরকার আন্দোলনে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের মত কেউ পালায়নি। কী পরিমাণ অপরাধ তারা করেছে এ থেকে আন্দাজ করা যায়। কিন্তু ল্যাংড়া ভূতের মতো ওপাড় থেকে উসকানি দেয়।
দেশে যেমন শিক্ষা দরকার ছিল, তা না থাকায় বেকারত্ব বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, এটা আর শুনতেই চাই না- রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলের পর ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কারো ওপর হামলা হবে।
বাংলাদেশে সমস্যা হলো, জিতলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু, হারলে বলি দুষ্ট। ন্যায়বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। যেখানের জনগণ ভোট দিতে পারবে। কেউ ভোট নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করার দুঃসাহস দেখাবে না।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেছেন, তাদের অবশ্যই তালিকাভুক্ত করতে হবে। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। শুধু সদিচ্ছা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন বলেছে এটা করবে, কিন্তু সদিচ্ছা দেখতে পাচ্ছি না। এক কোটি ১০ লাখ প্রবাসী বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। শুধু ভোটাধিকার নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের আরও যা পাওনা, তা দিতে হবে। এখানে আপসের জায়গা নেই।
বাংলাদেশের ওপর কারো আধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না- জামায়াতের এ অবস্থান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক রক্ষার পক্ষে জামায়াত। বাংলাদেশকে ন্যায্য সম্মান দিতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আশা করছি দ্রুতই নিবন্ধন এবং প্রতীক ফিরে পাবো। ভোজসভায় জামায়াতের প্রতীক খেয়ে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নির্বাচন কমিশন যেন চেয়ারের সম্মান করে জামায়াতকে প্রতীক ফিরিয়ে দেয়। ব্যতিক্রম হলে জামায়াত চুপ থাকবে না।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। বিদ্যমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা- প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত আরও দেখতে চায়। কমিশনের কাজেই প্রমাণ হবে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা। এক্ষেত্রে সুপারিশ হলো, জাতীয় নির্বাচন ভাগ্য নির্ধারণী। ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া স্থানীয় সরকারে আর কোথাও জনপ্রতিনিধি নেই। খুবই জনভোগান্তি হচ্ছে। তাই আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের। স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
বিচার, সুষ্ঠু ভোটার তালিকা, জুলাই সনদ ও ঘোষণাসহ পাঁচটি ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন চান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা একটি সময়সীমা দিয়েছেন, জামায়াতও মতামত দিয়েছে। আগামী রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে। কোনো কারণে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। সময় বেঁধে দিতে চাই না।
শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নেতারা ট্রাইব্যুনালে হত্যার শিকার হলেও, আওয়ামী লীগ ন্যায়বিচার পাক। ন্যায়বিচার হলে তাদের সাজা হবে।
গুমের শিকার এবং আওয়ামী লীগ আমলে বরখাস্ত সাবেক সেনা অফিসাররা সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। বরখাস্ত কর্নেল হাসিন প্রশ্ন করেন, সশস্ত্র বাহিনীর সংস্কার, জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়নে জামায়াতের অবস্থান কী? জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, শুধু সেনাবাহিনী কেন আরও জায়গায় বহু সংস্কার দরকার। সবচেয়ে জরুরি রাজনৈতিক দলের সংস্কার। জামায়াত ন্যায্য সংস্কারের পক্ষে রয়েছে।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে সব আসনে লড়াইয়ের মত সক্ষমতা জামায়াতের আছে কিনা প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, আজকেও যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, জামায়াত ভোটে অংশ নিতে প্রস্তুত।
এক ব্যবসায়ী নেতা প্রশ্ন করেন- জামায়াতের অর্থনৈতিক রোডম্যাপ আছে কিনা। উত্তরে শফিকুর রহমান বলেন, এখন সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নেই। ব্যাংক লুট করে বিদেশে টাকা পাচারের কারণে দেশের আজ এই অবস্থা। জামায়াত এই জায়গায় হাত দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুমসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।