সুনামগঞ্জে গতকাল রোববার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। এতে নদী ও হাওরে পানি স্থিতিশীল আছে। টানা তিন দিনের অতি বৃষ্টির পর গতকাল রাতে বৃষ্টি কম হওয়ায় মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় (যে স্থানে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়) আজ সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৮৬ মিটার। একই স্থানে গতকাল সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৮৭ মিটার। এখন পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৮০ মিটার।

পাউবো সূত্রে আরও জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ১২৫ মিলিমিটার। চেরাপুঞ্জিতে এই সময় বৃষ্টি হয় ১২২ মিলিমিটার।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সামনে ঈদ। এ সময় বন্যা হলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এমনিতেই গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে মানুষ চিন্তিত। বৃষ্টিতে হাটগুলোতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এখন বৃষ্টি কমলেই ভালো। সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজানের পাহাড়ি ঢল নামলে প্রথমেই জেলার সীমান্তবর্তী ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এই পাঁচ উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে বেশি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানি বাড়ছে, হয়তো আরও বাড়বে। এ জন্য উপজেলার ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’

সুনামগঞ্জে গত ২০ মে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। শুরুতে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হয়। যে কারণে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পানি বাড়তে থাকে নদী ও হাওরে। এতে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। জেলা প্রশাসন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক করেছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর কর্মকর্তাদের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন থেকে বন্যাসংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। এ জন্য জেলা ও উপজেলাগুলোতে ১ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, শুকনা খাবারের জন্য বরাদ্দ আছে ৩৬ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১৫ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আছে ১১ লাখ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী জানান, সুনামগঞ্জে এ সময় বন্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মানুষের মন থেকে ২০২২ সালের সেই ভয়ংকর বন্যার ভীতি এখনো কাটেনি। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক দেখা দেয়। এবারও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢল নামায় সেটি হয়েছে। এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অপপ্রচার আছে। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা দরকার।

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মামুন হাওলাদার বলেছেন, পানি আবারও বাড়তে পারে। ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। তবে বড় বন্যার আপাতত কোনো আশঙ্কা নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ প রস ত ত নদ র প ন পর স থ ত র জন য উপজ ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ