ঠিক ১০ বছর আগে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে বার্সেলোনার পতাকা নিয়ে দৌড়াচ্ছিল পাঁচ বছরের জানা। স্যুট পরা লুইস এনরিকে কাছেই দাঁড়িয়ে কন্যার কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হেসেছিলেন। পরে মেয়েকে পাশে নিয়ে বার্সার লাল-নীল-হলুদ পতাকা মাঠে পুঁতে দিয়েছিলেন। সেদিন আসলে আধুনিক ফুটবলে বাবার শ্রেষ্ঠত্বের নিশান উড়িয়ে ছিল মেয়ে। ছোট্ট জানার মৃত্যুর ছয় বছর পর সেই জার্মানিতেই আবার তার পিতার শ্রেষ্ঠত্বের নিশান উড়ল। অসীমের পথে চলে যাওয়া জানা এবার পিতার কীর্তি দেখতে না পারলেও এনরিকে এবং পিএসজি সমর্থকরা ঠিকই স্মরণ করেছিলেন তাকে।
২০১৯ সালে মৃত্যুর কাছে হার মানে জানা। ৯ বছর বয়সী এই শিশু হাড়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছিল। এনরিকে তখন স্পেন জাতীয় দলের কোচ। সবকিছু ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। পাঁচ মাস চিকিৎসার পর খালি হয়েছিল এনরিকের কোল। জীবন থেমে থাকে না। পাঁচ মাস স্বেচ্ছা একাকী বাস শেষে ফেরেন জীবনের স্রোতে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আধুনিক ফুটবলের চ্যালেঞ্জিং কোচিংয়ে। শনিবার রাতে তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরও একটি মূল্যবান পালক। শুধু সাক্ষী থাকতে পারল না জানা।
এনরিকের কাছে এই পালকের মাহাত্ম্য আলাদা। ১০ বছর আগে বার্সার ম্যানেজার হিসেবে জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার দিন পাশে ছিল মেয়ে। আবার ইউরোপ সেরা হলেন এনরিকে। এবার ইন্টার মিলানকে ৫ গোলে নাস্তানাবুদ করে পিএসজিকে প্রথমবারের মতো দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বাদ। ফাইনালের আগে এনরিকে বলেছিলেন, ‘ফাইনালে আমার মেয়ে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবে না; তবে ও আমার সঙ্গেই থাকবে, মানসিকভাবে থাকবে। এই জন্যই ম্যাচটা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’ কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটা পৃথিবীর প্রতিটি বাবারই জানা। বাবার হার দেখলে মেয়ে যে কষ্ট পাবে! তাই তো মেয়ের হাতে পাঁচ গোলের খেলনা তুলে দেওয়ার পর এনরিকের সে কী আনন্দ!
পিএসজির প্রত্যেক খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো নাচলেন, হাসলেন। আর শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে সীমানার কাছে গিয়ে গ্যালারিতে থাকা একজনের কাছ থেকে একটি টিশার্ট আনেন। মাঠের মধ্যেই পরলেন জানা ফাউন্ডেশনের কালো সেই টিশার্ট। সেটির বুকের ওপর ১০ বছর আগের সেই ছবির মতো বাবা-মেয়ের পিএসজির পতাকা পোঁতার স্কেচ! সে সময় জানা যে শ্রেষ্ঠত্বের নিশান উড়িয়েছিল জার্মানির মাঠে, আবার উড়ল সেই নিশান। এবার তাতে যোগ হলো শুধু ফরাসি সৌরভ।
সেই আবেগ সঞ্চারিত হলো পিএসজির সমর্থকদের মাঝেও। অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ১০ বছর আগের সেই দৃশ্য ফুটিয়ে তুললেন পিএসজি সমর্থকরা। গ্যালারিতে ভেসে ওঠা বিশাল এক টিফোতে দেখা যায়, পিএসজির পতাকা মাঠে পুঁতছেন এনরিকে। পিএসজির আট নম্বর জার্সি পরে পাশে দাঁড়িয়ে জানা। এনরিকের চোখে পড়েছে সেই টিফো। মিক্সড জোনে সমর্থকদের এজন্য কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তিনি, ‘খুব ভালো লেগেছে। সমর্থকরা আমার পরিবারের জন্য যে টিফো করেছে, সেটা খুবই আবেগপূর্ণ ব্যাপার। তবে আমি সবসময়ই মেয়ের কথা ভাবি। জানাকে মনে রাখার জন্য আমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার প্রয়োজন নেই। ও সবসময় আমার সঙ্গে থাকে। বিশেষ করে ম্যাচ হেরে গেলে।’
প্রতিদিন সকালে অনুশীলন শুরুর আগে খালি পায়ে ঘাসের ওপর ১৫-২০ মিনিট হাঁটেন এনরিকে। তখনই দিনের পরিকল্পনাটা সেরে ফেলেন স্প্যানিশ এ কোচ। কয়েক বছর আগেও তাঁর সঙ্গে হাটত জানা। এখনও তাঁর সঙ্গে থাকে জানা। তবে হাঁটে না, থাকে বাবার বুকে সযতনে!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প এসজ এনর ক র প এসজ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা: নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্তের ফেসবুক লাইভ
ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
সোমবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে দায় চাপান বিএনপির নগরকান্দা উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার ওপর। লাইভের পরপরই তিনি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন।
ফেসবুক লাইভে সাগর কাজী বলেন, ‘এখানে রাজনীতি করতেছেন বদিউজ্জামান তারা মোল্যা। তিনি রাজনৈতিক ইস্যু করে ফেলছেন। তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, নিজে সালিশ করেছেন, তাকে অমান্য করে বৈশাখী।’
তারা মোল্যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে এখন চিনে না, আমাকে জড়িয়ে দিচ্ছে। আরে মিয়া আমারে চিনেন না, আপনার সাথে ব্যানার করলাম, বিএনপির যখন ব্যানার করলাম, আপনি তখন চিনেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখন আমি বিপদে পড়েছি, আমাকে চিনেন না। আমার ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা মোল্যা সেদিন বলেছেন, বিএনপির কোনো লোক ছিল না ওখানে, কিন্তু সব তারা মোল্যার লোকজন ছিল। তারা মোল্যা শেল্টার দিয়ে সবকিছু করাইছে।’
এ সময় সাগর কাজী মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আর আব্বু নাকি পিটাইছি, একটা মানুষকে যদি ২০ থেকে ২৫ মিনিট পেটানো হয় তাহলে তার এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকা উচিত। আমাদের পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড নষ্ট করার জন্য মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন আমার বাড়িতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব আসতেছে।’
সাগর আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে নিজে ছিলেন তারা মোল্যা। নিজেই সালিশ করেছেন। এখন বলেন তিনি ছিলেন না। আমি তো তার নির্দেশ অমান্য করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে এখন বলছে, বিএনপির কেউ ছিল না। অথচ তার লোকজনই তো ছিল।’
ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান তারা মোল্যা বলেন, ‘ওতো (সাগর কাজী) আমাকে আর বৈশাখী নিয়ে যেসব কথা বলছে, তাহলে বোঝেন কেমন লোক। কারণ, সাগর যুবলীগ নেতা ফরহাদের লোক। ওরা এখনও চাচ্ছে যে বিএনপিকে কীভাবে হেনস্তা করা যায়। আমার দল করলে অবশ্যই চিনতাম। ওদের আমার দলে মিশিয়ে তো আমি দল থেকে বহিষ্কার হতে চাই না।’
গত ৩০ মে বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দার ভবুকদিয়া গ্রামে বৈশাখীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে সাগর কাজী, তার বাবা সেকেন কাজী, স্থানীয় বিএনপি নেতার সমর্থকদের নাম উঠে আসে।
বৈশাখীর দাবি, তার ছোট বোনকে স্থানীয় শরিফ ব্যাপারী উত্ত্যক্ত করেছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করলে উত্তেজিত হয়ে সাগর ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। বৈশাখী দুটি মামলার বাদী, আর একটি করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শরিফ বেপারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
মারধরের শিকার বৈশাখী বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি। তার মাথা ও গলায় আঘাতের কারণে তিনি চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার নেতৃত্বে আমার ওপর সাগর কাজী ও তার বাবা সেকেন্দার কাজীসহ বিএনপির নেতারা হামলা চালায়।
বৈশাখী বলেন, এ হামলায় যারা অংশ নিয়েছেন তারা এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখন বিএনপি করে। আমার ওপর হওয়া হামলায় যারা জড়িত তারা সন্ত্রাসী, এদের কোনো দল নেই। আমি দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এই সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।