সন্তানের ঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে মা–বাবার চিন্তা ও চেষ্টার কমতি থাকে না। এ জন্য অবলম্বন করেন বিভিন্ন উপায়। পরীক্ষার ফলাফল কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও তাঁরা সন্তানকে যুক্ত করেন বিভিন্ন কার্যক্রমে। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের সন্তান বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যাবে। বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকলে শিশু বেড়ে ওঠে যথাযথভাবে, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, গড়ে তুলতে পারে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক। মোটকথা জীবন যাপন করতে পারে পরিপূর্ণভাবে।

বেশ কয়েক বছর ধরে অভিভাবক ও শিশুর সম্পর্কের ওপর গবেষণা চালিয়েছে হাই লাভ প্যারেন্টিং ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট। এই গবেষণায় অংশ নেয় ২০০ অভিভাবক ও শিশু। তাতে দেখা গেছে, যেসব শিশু বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে, তাদের মা–বাবারা সাতটি কাজ করেছেন। কী সেই সাত কাজ?

১.

নীরবতার গুরুত্ব বোঝেন

গবেষণায় অংশ নেওয়া মা–বাবারা সন্তানদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন। সন্তান যাতে মনের বলতে না পারা কথাগুলো তাঁদের কাছে অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে, সেই বিশ্বাস সন্তানের মধ্যে তৈরি করেছেন। সন্তান যখন বিরক্ত হতো, তখন তাঁরা চুপচাপ তাদের পাশে বসে থাকতেন। নিঃশব্দে তাদের সান্ত্বনা দিতেন। ফলে শিশুরা নীরবতাকে গ্রহণ করেছে সহজেই। তারা আবেগগুলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত ও প্রতিফলিত করতে পেরেছে।

২. আবেগগত সচেতন

সন্তানের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার সময় মা–বাবারা তাঁদের আবেগগুলোর ব্যাখ্যা দেন। যেমন তারা সরাসরি বলেন, ‘আমি হতাশ’ কিংবা ‘আমি খুশি’। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে আবেগগত সচেতনতা তৈরি করেন। এতে যেটা হয়, শিশুরা তাদের আবেগকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে শেখে এবং দমন করার পরিবর্তে তারা খোলাখুলিভাবে আবেগের প্রকাশ ঘটাতে পারে।

আরও পড়ুনগর্ভের সন্তানের অটিজম আছে কি না, এ ধরনের টেস্ট কীভাবে করাব?১৯ মার্চ ২০২৫৩. ক্ষমা চাওয়া শেখান

ভুল যে জীবনের একটি অংশ এবং তা কাটিয়ে উঠে দায়িত্ব নেওয়া যে একধরনের শক্তি, সেটা তাঁরা শিখিয়েছেন সন্তানদের। কোনো ভুলের কারণে ক্ষমা চাইলে যে ক্ষতি নেই; বরং সেটা নিজের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে এবং তা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়, এসব মূল্যবোধ ওই মা–বাবারা তাঁদের সন্তানকে শেখান।

৪. জোরাজুরি করেন না

দয়া আর শ্রদ্ধা যে জোর করে আদায় করা যায় না, এটা আদর্শ মা–বাবারা জানেন। তাই তাঁরা কখনো তাঁদের সন্তানদের ‘প্লিজ’, ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘সরি’ বলার জন্য জোরাজুরি করেন না; বরং তাঁরা সন্তানকে শেখার জন্য সময় দেন। তাঁদের সন্তানেরা এসব বলতে ভুলে গেলে তাদের হয়ে নিজেরা বলে দেন। একটা পর্যায়ে সন্তান ঠিকই রপ্ত করে।

৫. শিশুর উদ্বেগগুলো উড়িয়ে দেন না

খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শিশুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারে। যেমন নিজের খেলনা হারিয়ে ফেলা কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হওয়া। এসব সমস্যা হেসে উড়িয়ে দেন না ইতিবাচক মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের আবেগের মূল্যায়ন করেন। এতে শিশুরা বুঝতে পারে যে আবেগ গুরুত্বপূর্ণ। আবেগকে গুরুত্ব দিলে আত্মমূল্যায়ন করা যায়, মানসিক সুরক্ষা মেলে আর নিজের অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়।

আরও পড়ুনসন্তান পালনে পারিবারিক বন্ধন কেন জরুরি১৪ জুন ২০২৩৬. সব সময় সমাধান দেন না

শিশুসন্তান কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তৎক্ষণাৎ সমাধান না করে দিয়ে বরং তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন আদর্শ মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন আমাদের কী করা উচিত বলে মনে করো?’ এমনটা করার কারণে শিশুর ভেতরে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার বোধ দৃঢ় হয়।

৭. একঘেয়েমিকে গ্রহণ করেছেন

ইতিবাচক মা–বাবারা কোনো কিছুতে সন্তানদের বোর হওয়া বা একঘেয়ে লাগার মুহূর্ত তৈরি হওয়ার সুযোগ দেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাঁরা দেখেন, তাঁদের সন্তানেরা একঘেয়ে মুহূর্ত পাশ কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিচ্ছে। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে সৃজনশীলতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করেন। এতে সন্তানেরা তাদের একান্ত নিজের মুহূর্তগুলোতে আনন্দ খুঁজে পায়। যেমন মুঠোফোনের পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকার পরিবর্তে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকারও যে আনন্দ আছে, সেটা তারা বুঝতে শেখে।

যেভাবে সন্তানের মানসিক বুদ্ধিমত্তার লালন-পালন করবেন

সন্তানের কাছ থেকে আপনি যে ধরনের আচরণ পেতে চান, তার সামনে আপনিও সেসবের চর্চা করুন। যেমন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন খোলাখুলিভাবে। কোনো ধরনের ভুল করে থাকলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। অন্যের সঙ্গে চলাফেরার সময় দয়া ও সহানুভূতি দেখান।

আপনার সন্তানের অনুভূতিগুলো যাচাই করুন। সেটা ছোট কিংবা বড় যা-ই হোক না কেন। সেসব সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান না করে বরং তাকে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে দিন।

সব সময় সন্তানের সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এর পরিবর্তে খোলামেলা প্রশ্ন করুন। দেখবেন, সমস্যা সমাধানে সে উৎসাহী হয়ে উঠছে।

একঘেয়েমির মুহূর্তগুলো তাদের অনুভব করতে দিন। এতে তারা সৃজনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করতে শিখবে।

তবে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমন সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া নিরাপদ, মূল্যবান ও উপলব্ধি করার মতো অনুভূতির মধ্য দিয়েই তো বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটে।

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুনআপনি কি পরিবারের মেজ সন্তান? অভিনন্দন! ১৭ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ভ ত প রক শ কর ছ ন র অন ভ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশ থেকে যাত্রীদের সোনা আনায় কড়াকড়ি, যে পরিবর্তন হলো বিধিমালায়

বিদেশ থেকে ফেরার সময় আগে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনা যেত। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো যাত্রী বছরে একবারই শুল্ক দিয়ে একটি সোনার বার আনতে পারবেন। বাজেট ঘোষণার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার জারি করা অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালায় এ কথা বলা হয়েছে।

বিধিমালায় এবার সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে একটি সোনার বার আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। আগে ভরিপ্রতি এই শুল্ক ছিল ৪ হাজার টাকা।

কড়াকড়ি করা হয়েছে সোনার গয়না আনার ক্ষেত্রেও। আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারবেন।

মুঠোফোন আনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশফেরত একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতিবছর একবারই একটি নতুন মুঠোফোন শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়া আনতে পারবেন। আগে দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোনের পাশাপাশি শুল্ক-কর দিয়ে প্রতিবার একটি করে নতুন মুঠোফোন আনা যেত।

আরও পড়ুনদুবাই থেকে অবৈধভাবে এসেছে ৩২ হাজার কোটি টাকার সোনা২০ মার্চ ২০২৫

ব্যাগেজ বিধিমালায় সুবিধা দেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে যাত্রীদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা আসে। ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে পাঁচ বছরে প্রায় ১৪২ টন সোনা আনেন যাত্রীরা। এসব সোনার বার পাচার হয়ে যায় বলে আলোচনা আছে। সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হওয়ার সময় সোনার বার আটকের ঘটনাও ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে এবার ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হলো।

ব্যাগেজে নির্ধারিত পণ্যের বেশি পণ্য আনলে ন্যায় নির্ণয় অনুযায়ী শুল্ক-কর পরিশোধ, অর্থদণ্ড ও জরিমানা গুনতে হতে পারে। অতিরিক্ত পণ্য খালাসের জন্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগবে। তবে আমদানি নিষিদ্ধ বা আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুযোগ নেই।

সোনা আনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি হলেও ব্যাগেজ বিধিমালায় এবার সুযোগসন্ধানী যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন ভুলবশত বা অন্য কোনো কারণে যাত্রী ব্যাগেজ ঘোষণা করা না হলে যাত্রীর আগমনের সাত দিনের মধ্যে নিয়ম মেনে ব্যাগেজ ঘোষণা করার সুযোগ ছিল। এবার এই সুযোগ বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো যাত্রীর শুল্ক-করযুক্ত পণ্য এনে এই ধারা ব্যবহার করে আইন অনুযায়ী ছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনদুবাইফেরত দুই বাংলাদেশির জামাকাপড় পুড়িয়ে চার কেজি সোনা উদ্ধার০৫ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ