মা-বাবা এই ৭ কাজ করলে বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যায় শিশু
Published: 2nd, June 2025 GMT
সন্তানের ঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে মা–বাবার চিন্তা ও চেষ্টার কমতি থাকে না। এ জন্য অবলম্বন করেন বিভিন্ন উপায়। পরীক্ষার ফলাফল কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও তাঁরা সন্তানকে যুক্ত করেন বিভিন্ন কার্যক্রমে। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের সন্তান বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যাবে। বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকলে শিশু বেড়ে ওঠে যথাযথভাবে, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, গড়ে তুলতে পারে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক। মোটকথা জীবন যাপন করতে পারে পরিপূর্ণভাবে।
বেশ কয়েক বছর ধরে অভিভাবক ও শিশুর সম্পর্কের ওপর গবেষণা চালিয়েছে হাই লাভ প্যারেন্টিং ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট। এই গবেষণায় অংশ নেয় ২০০ অভিভাবক ও শিশু। তাতে দেখা গেছে, যেসব শিশু বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে, তাদের মা–বাবারা সাতটি কাজ করেছেন। কী সেই সাত কাজ?
১.নীরবতার গুরুত্ব বোঝেন
গবেষণায় অংশ নেওয়া মা–বাবারা সন্তানদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন। সন্তান যাতে মনের বলতে না পারা কথাগুলো তাঁদের কাছে অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে, সেই বিশ্বাস সন্তানের মধ্যে তৈরি করেছেন। সন্তান যখন বিরক্ত হতো, তখন তাঁরা চুপচাপ তাদের পাশে বসে থাকতেন। নিঃশব্দে তাদের সান্ত্বনা দিতেন। ফলে শিশুরা নীরবতাকে গ্রহণ করেছে সহজেই। তারা আবেগগুলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত ও প্রতিফলিত করতে পেরেছে।
২. আবেগগত সচেতনসন্তানের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার সময় মা–বাবারা তাঁদের আবেগগুলোর ব্যাখ্যা দেন। যেমন তারা সরাসরি বলেন, ‘আমি হতাশ’ কিংবা ‘আমি খুশি’। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে আবেগগত সচেতনতা তৈরি করেন। এতে যেটা হয়, শিশুরা তাদের আবেগকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে শেখে এবং দমন করার পরিবর্তে তারা খোলাখুলিভাবে আবেগের প্রকাশ ঘটাতে পারে।
আরও পড়ুনগর্ভের সন্তানের অটিজম আছে কি না, এ ধরনের টেস্ট কীভাবে করাব?১৯ মার্চ ২০২৫৩. ক্ষমা চাওয়া শেখানভুল যে জীবনের একটি অংশ এবং তা কাটিয়ে উঠে দায়িত্ব নেওয়া যে একধরনের শক্তি, সেটা তাঁরা শিখিয়েছেন সন্তানদের। কোনো ভুলের কারণে ক্ষমা চাইলে যে ক্ষতি নেই; বরং সেটা নিজের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে এবং তা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়, এসব মূল্যবোধ ওই মা–বাবারা তাঁদের সন্তানকে শেখান।
৪. জোরাজুরি করেন নাদয়া আর শ্রদ্ধা যে জোর করে আদায় করা যায় না, এটা আদর্শ মা–বাবারা জানেন। তাই তাঁরা কখনো তাঁদের সন্তানদের ‘প্লিজ’, ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘সরি’ বলার জন্য জোরাজুরি করেন না; বরং তাঁরা সন্তানকে শেখার জন্য সময় দেন। তাঁদের সন্তানেরা এসব বলতে ভুলে গেলে তাদের হয়ে নিজেরা বলে দেন। একটা পর্যায়ে সন্তান ঠিকই রপ্ত করে।
৫. শিশুর উদ্বেগগুলো উড়িয়ে দেন নাখুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শিশুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারে। যেমন নিজের খেলনা হারিয়ে ফেলা কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হওয়া। এসব সমস্যা হেসে উড়িয়ে দেন না ইতিবাচক মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের আবেগের মূল্যায়ন করেন। এতে শিশুরা বুঝতে পারে যে আবেগ গুরুত্বপূর্ণ। আবেগকে গুরুত্ব দিলে আত্মমূল্যায়ন করা যায়, মানসিক সুরক্ষা মেলে আর নিজের অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়।
আরও পড়ুনসন্তান পালনে পারিবারিক বন্ধন কেন জরুরি১৪ জুন ২০২৩৬. সব সময় সমাধান দেন নাশিশুসন্তান কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তৎক্ষণাৎ সমাধান না করে দিয়ে বরং তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন আদর্শ মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন আমাদের কী করা উচিত বলে মনে করো?’ এমনটা করার কারণে শিশুর ভেতরে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার বোধ দৃঢ় হয়।
৭. একঘেয়েমিকে গ্রহণ করেছেনইতিবাচক মা–বাবারা কোনো কিছুতে সন্তানদের বোর হওয়া বা একঘেয়ে লাগার মুহূর্ত তৈরি হওয়ার সুযোগ দেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাঁরা দেখেন, তাঁদের সন্তানেরা একঘেয়ে মুহূর্ত পাশ কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিচ্ছে। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে সৃজনশীলতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করেন। এতে সন্তানেরা তাদের একান্ত নিজের মুহূর্তগুলোতে আনন্দ খুঁজে পায়। যেমন মুঠোফোনের পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকার পরিবর্তে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকারও যে আনন্দ আছে, সেটা তারা বুঝতে শেখে।
যেভাবে সন্তানের মানসিক বুদ্ধিমত্তার লালন-পালন করবেনসন্তানের কাছ থেকে আপনি যে ধরনের আচরণ পেতে চান, তার সামনে আপনিও সেসবের চর্চা করুন। যেমন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন খোলাখুলিভাবে। কোনো ধরনের ভুল করে থাকলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। অন্যের সঙ্গে চলাফেরার সময় দয়া ও সহানুভূতি দেখান।
আপনার সন্তানের অনুভূতিগুলো যাচাই করুন। সেটা ছোট কিংবা বড় যা-ই হোক না কেন। সেসব সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান না করে বরং তাকে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে দিন।
সব সময় সন্তানের সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এর পরিবর্তে খোলামেলা প্রশ্ন করুন। দেখবেন, সমস্যা সমাধানে সে উৎসাহী হয়ে উঠছে।
একঘেয়েমির মুহূর্তগুলো তাদের অনুভব করতে দিন। এতে তারা সৃজনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করতে শিখবে।
তবে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমন সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া নিরাপদ, মূল্যবান ও উপলব্ধি করার মতো অনুভূতির মধ্য দিয়েই তো বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটে।
সূত্র: এমএসএন
আরও পড়ুনআপনি কি পরিবারের মেজ সন্তান? অভিনন্দন! ১৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ভ ত প রক শ কর ছ ন র অন ভ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে তার ওপর হামলা হয়। নিহত মোস্তফা কামাল একই গ্রামের মৃত মমিন মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তফা কামাল রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে সড়কে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে। তারা তার মাথা ও ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
বান্দরবানে যুবককে পাথর দিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
একজন পথচারী মোস্তফা কামালকে সড়কের পাশে পরে থাকতে দেখে পরিবারের লোকদের খবর দেন। তারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, রাতে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ