পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ ও চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক চারজনের একজন ‘ওয়েল ফেব্রিক্স’ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তরিকুল ইসলাম। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের ভাই।

সোমবার রাত ৯টার দিকে নগরের চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাপড়ের গাড়িসহ এ চারজনকে আটক করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) চান্দগাঁও থানা-পুলিশ।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কেএনএফের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে সন্দেহে ‘ওয়েল ফেব্রিক্স’ কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে গাড়িতে রোল করা কাপড়সহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তরিকুল ইসলামের পরিচয় নিশ্চিত করলেও বাকিদের বিষয়ে কিছু জানাননি ওসি।

গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, জব্দ করা পোশাকগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের ইউনিফর্ম। মহালাসিন মারমা নামের এক ‘সন্ত্রাসী’ ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরি করতে দিয়েছিলেন।

এর আগে ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।

আরও পড়ুন‘কেএনএফের ইউনিফর্ম’ জব্দের মামলায় কারখানা মালিকের রিমান্ড০১ জুন ২০২৫

ফেসবুকে পেজ খুলে দু-তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কেএনএফ। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। সংগঠনটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার। পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘কেএনএফের’ আরও ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ, গ্রেপ্তার ১২৮ মে ২০২৫আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘কেএনএফের’ ২০ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ, গ্রেপ্তার ৩২৫ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ইউন ফর ম ক এনএফ র ল ইসল ম সশস ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বম সম্প্রদায়ের দুজনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান ১৯ নাগরিকের

কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার দুই দিন পর লালসাংময় বমের মৃত্যু এবং কারা হেফাজতে লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুতে আমরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। “সন্ত্রাস দমনে”র নামে বান্দরবানে নির্বিচার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষকে আটক, বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর নারী, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কারাবন্দী রাখার তীব্র নিন্দা জানাই।’

লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি নিরপরাধ বম নাগরিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে বম জাতিগোষ্ঠীর যে কাউকে যখন-তখন গ্রেপ্তার বা হয়রানির নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় নীতির শিকার লালসাংময় বমকে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বিবৃতিতে পরিবারের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নিরপরাধ লালসাংময় বম প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ অবহেলার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে গত ২৯ মে তড়িঘড়ি করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। ৩১ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

লালসাংময় বমের পরিবারের অভিযোগ অমূলক নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরও একজন বম তরুণ জেল হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী তরুণ লালত্লেং কিম বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই লালত্লেং কিম বমের হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কেএনএফের দুর্বৃত্ত কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতির জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন শুরু করে।

বিবৃতিতে সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; অবিলম্বে বম জাতিগোষ্ঠীকে ‘কালেকটিভ শাস্তি প্রদানের’ কৌশল প্রত্যাহার; বম জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসায়িক কাজের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা; সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার সঙ্গে কেএনএফসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলের সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু১৫ মে ২০২৫

বিবৃতিদাতারা হলেন আনু মুহাম্মদ, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেহনুমা আহমেদ, সারা হোসেন, সায়দিয়া গুলরুখ, সায়েমা খাতুন, স্বাধীন সেন, মাহা মির্জা, হানা শামস আহমেদ, কল্লোল মোস্তফা, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গীতি আরা নাসরীন, শহিদুল আলম, খুশী কবির, সামিনা লুৎফা, কামাল চৌধুরী, ফার‍জানা ওয়াহিদ সায়ান, রানী ইয়েন ইয়েন ও পাভেল পার্থ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বম সম্প্রদায়ের দুজনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান ১৯ নাগরিকের
  • নগরকান্দায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার ৪
  • রংপুরে ছিনতাইয়ের কবলে ইরানী দম্পতি, আটক ৪
  • চট্টগ্রামে আ.লীগ নেতার পোশাক কারখানায় অভিযান, আটক ৪
  • 'কেএনএফের' ইউনিফর্ম জব্দ: সাবেক এমপির ভাইসহ গ্রেপ্তার ৪
  • কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দ: সাবেক এমপির ভাইসহ গ্রেপ্তার ৪
  • রংপুরে ইরানি দম্পতিকে আটক করে মারধর, ফোন ও বিদেশি মুদ্রা ছিনতাই
  • গুগল ম্যাপ দেখে ঘুরতে ঘুরতে রংপুরের এক গ্রামে গিয়ে সেনা সহায়তায় ফিরলেন ইরানি দম্পতি, আটক ৪
  • বান্দরবানের ব্যাংক ডাকাতি মামলার আসামির মৃত্যু