গাজায় আবার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসভাবে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আজ মঙ্গলবার আবার একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে তাদের নির্বিচার গুলিতে অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, রাফার একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে নির্ধারিত চলাচলের পথ ছেড়ে চলে যাওয়া কিছু লোককে লক্ষ্য করে তারা গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে।

এর আগে গত রোববার ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে কমপক্ষে ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার আরও তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর আসে।

আজ মঙ্গলবার ত্রাণকেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হতাহতের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল জানিয়েছিল, উত্তর গাজায় লড়াই চলাকালে তাদের তিনজন সেনা নিহত হয়েছেন।

হামাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার ও নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের হামলায় ইতিমধ্যে গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

রয়টার্স স্বাধীনভাবে উত্তর ও দক্ষিণ গাজার এসব প্রতিবেদন যাচাই করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গত সপ্তাহে তাদের প্রথম ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র চালু করেছে। যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজার বেশির ভাগ মানুষই ইতিমধ্যে নিজের ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।

জিএইচএফ জাতিসংঘসহ সেখানে কাজ করা আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে গাজায় ত্রাণ বিতরণ করছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এই পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালা অনুযায়ী নয়।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত এই বেসরকারি গোষ্ঠী বলেছে, তারা মঙ্গলবার সকালেই ২১টি ট্রাকে করে খাবার বিতরণ করেছে এবং এ বিতরণকাজ ‘নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে’ হয়েছে।

তবে রাফা এলাকায় ত্রাণ নেওয়ার জন্য ভিড় করার সময় আবারও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি। গত রোববারের হত্যাকাণ্ডকে তারা ‘হামাসের পাতানো গল্প’ বলে দাবি করেছে।

ত্রাণকেন্দ্রে শিশুদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হাসপাতালে আহত শিশু। ৩ জুন, আল–নসর হাসপাতাল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ব তরণক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ফ্লোটিলার ত্রাণবাহী জাহাজ ঢুকতে দেবে না ইসরায়েল

গাজার অভুক্ত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) ত্রাণবাহী জাহাজ নিজেদের জলসীমায় প্রবেশ করতে দেবে না ইসরায়েল। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ হুমকি দিয়েছে।

রোববার ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে এফএফসির ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলানে’ চড়ে রওনা হয়েছেন গ্রেটা থুনবার্গসহ ১১ মানবাধিকারকর্মী। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে এফএফসি। আগামী শনিবার জাহাজটি গাজা উপকূলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনগাজায় আজ ত্রাণ দিচ্ছে না হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন, যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে জাতিসংঘে ভোটাভুটি৩ ঘণ্টা আগে

দুই মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। এতে গাজায় ওষুধ, খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। মারাত্মক মানবিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে গাজার অভুক্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় এফএফসি।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রিডম ফ্লোটিলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, ‘ইসরায়েলের সামুদ্রিক অঞ্চল ও সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য নৌবাহিনী দিনরাত কাজ করছে। এ ক্ষেত্রেও আমরা প্রস্তুত। গত কয়েক বছরে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং সে অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেব।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে রাজি হননি তিনি।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণকেন্দ্রে আবার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় ২৭ জন নিহত০৩ জুন ২০২৫

এফএফসি ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে। ওই বছর তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ফ্রিডম ফ্লোটিলার কর্মীরা। মাভি মারমারা নামের ওই জাহাজে একপর্যায়ে হামলা চালিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাতে ১০ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছিলেন। এবার ‘ম্যাডলানে’ নামের ছোট একটি জাহাজে গাজাবাসীর জন্য ফলের রস, দুধ, চাল, টিনজাত খাবার ও আমিষজাত খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার এক্সে (সাবেক টুইটার) ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন লিখেছে, ‘আমরা একসঙ্গে গাজার জন্য একটি সামুদ্রিক করিডর খুলে দিতে পারি।’

গত মাসের শুরুতে মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার অভিমুখে থাকা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলা চালানো হয়। হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়েছিল।

গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ বন্ধ

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত বিতর্কিত সহায়তা সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় তাদের সহায়তাকেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। আজ বুধবার এ ঘোষণা দেয় তারা। এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সতর্ক করে জানিয়েছে, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোর পথে যাওয়া রাস্তাগুলো এখন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ আনতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হওয়ার কয়েকটি ঘটনার পর বিতরণকেন্দ্রগুলো বন্ধের ঘোষণা দিল জিএইচএফ। গত কয়েক দিনে তাদের পরিচালিত সহায়তাকেন্দ্রের আশপাশে হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সমালোচনার মধ্যেই আজ ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার গাজা সরকারের জনসংযোগ দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ত্রাণ নিতে গিয়ে আট দিনে ইসরায়েলের হামলায় ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন৬০০ দিন যুদ্ধের পরও গাজায় ইসরায়েল কেন বিজয়ী হতে পারেনি০২ জুন ২০২৫

জাতিসংঘে ভোটাভুটি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণসহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আজ একটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তবে এতে ভেটো দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ফ্লোটিলার ত্রাণবাহী জাহাজ ঢুকতে দেবে না ইসরায়েল
  • গাজায় আজ ত্রাণ দিচ্ছে না হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন, যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে জাতিসংঘে ভোটাভুটি
  • গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের