কোম্পানির ন্যূনতম কর বাড়ানাের প্রস্তাবে এমসিসিআই হতাশ
Published: 3rd, June 2025 GMT
লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে সাধারণভাবে কোম্পানির টার্নওভার বা মোট বিক্রয়ের ওপর কর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এ ছাড়া কিছু খাতে এ হার ৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। অন্যদিকে কার্যকরী করহার কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। এসব পদক্ষেপে হতাশা ব্যক্ত করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই)।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়ায় এমসিসিআই এমন মত দিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, প্রতিষ্ঠানের টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম কর করনীতির পরিপন্থি। তাই এটি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায় লাভ হলে শুধু করযোগ্য আয়ের ওপর কর প্রযোজ্য হওয়া উচিত। রাজস্ব বা অন্য কোনো তহবিলের ওপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। এমসিসিআই গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এমসিসিআই মনে করে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি বাজার সংকুচিত হওয়া, মন্থর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধাবস্থা এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়ে বাজেট তৈরি অর্থ উপদেষ্টার জন্য একটি দুঃসাহসিক কাজ ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেওয়ার আরও সুযোগ রয়েছে।
এমসিসিআই বলেছে, করহার বৃদ্ধির মাধ্যমে নিয়মিত কর দেওয়া ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের ওপর আরও বেশি করের বোঝা চাপানোর চেষ্টা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। রাজস্ব আয় বাড়াতে করের জাল বাড়ানো জরুরি। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
সংগঠনের প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৯৯,০০০ কোটি টাকা) থেকে ৫ শতাংশ বেশি। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দুই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। প্রথমত, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা বা জনগণকে। এই দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনের জন্য বরাদ্দ থাকা দরকার।
এমসিসিআই বিশ্বাস করে, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো, জ্বালানির অসম বণ্টন ব্যবস্থা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এখনও প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া দুর্বল রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ আমদানি প্রবণতা ও বর্তমান বৈশ্বিক বিপর্যয় অবস্থা বিবেচনা করে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার হস্তান্তর হলে আয়করের হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরের বিষয়টি উল্লেখ আছে। এমসিসিআই মনে করে, অন্য উপায়ে শেয়ার হস্তান্তরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তিযুক্ত। উৎসে করের রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে আগে প্রতিমাসে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল। অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রস্তাবনায় প্রতি ত্রৈমাসিক অন্তর দাখিলের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পদক্ষেপে কোম্পানির সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।
এমসিসিআই আরও বলেছে, প্রান্তিক করদাতাদের ন্যূনতম কর ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় উন্নীত করায় প্রান্তিক করদাতাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর পদক্ষেপকে এমসিসিআই স্বাগত জানাচ্ছে। তবে কর ধাপ ও করহারের পরিবর্তনের ফলে সব স্তরের করদাতাদের করের বোঝা বাড়বে। এ সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী উপকৃত হতো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব করদ ত দ র কর র ব ঝ পদক ষ প ব যবস থ র জন য সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাটজিপিটি ও ইনভিডিও এআইয়ের ছদ্মবেশে ভয়ংকর ম্যালওয়্যার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর জনপ্রিয় মাধ্যম চ্যাটজিপিটি ও ইনভিডিও এআইয়ের নাম ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার। ভুয়া ওয়েবসাইট ও ইনস্টলার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে গোপনে প্রবেশ করছে র্যানসমওয়্যারসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার। এসব ম্যালওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ‘সাইবারলক’, ‘লাকি গোস্ট’ ও নতুন একটি ম্যালওয়্যার ‘নুমেরো’।
সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিসকো ট্যালোস জানায়, বিপণন ও ডিজাইন–সম্পর্কিত কাজে ব্যবহৃত জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুলগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর নাম ও লোগো নকল করে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া ওয়েবসাইট। এসব সাইট থেকে সফটওয়্যার নামাতে গিয়ে ব্যবহারকারীরা নিজের অজান্তেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নোভালিডসএআই ডটকম নামের একটি ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে আসল নোভালিডস প্ল্যাটফর্মের আদলে। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে গুগল সার্চে এই ভুয়া সাইট ওপরে চলে আসে। এতে এক বছরের জন্য বিনা মূল্যে সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রলোভন দেখিয়ে ‘নোভালিডসএআই ডট এক্সই’ নামের একটি ইনস্টলার ডাউনলোড করতে বলা হয়। ইনস্টলারটি চালু করলেই কম্পিউটারে চালু হয়ে যায় ‘সাইবারলক’ নামের র্যানসমওয়্যার।
সাইবারলক একটি পাওয়ারশেল–নির্ভর র্যানসমওয়্যার, যা প্রয়োজন হলে যন্ত্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অনুমতি নিয়ে নিজেই আবার চালু হতে পারে। এটি চালু হলে সি, ডি ও ই ড্রাইভে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ফাইল এনক্রিপ্ট করে দেয় এবং একটি র্যানসম বার্তা রেখে যায়। ওই বার্তায় বলা হয়, তিন দিনের মধ্যে দুটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার না পাঠালে ফাইলগুলো আর ফেরত দেওয়া হবে না। র্যানসম নোটে দাবি করা হয়, সংগৃহীত অর্থ ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, আফ্রিকা ও এশিয়ার শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। সেখানে আরও লেখা হয়, ‘যখন নিরীহ শিশুদের জীবন হুমকির মুখে, তখন এই অর্থ খুব বেশি নয়। মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে না এলে আমাদের আর কোনো পথ থাকে না।’ এই ম্যালওয়্যার উইন্ডোজের ‘সাইফার ডট এক্সই’ টুল ব্যবহার করে ড্রাইভের খালি জায়গাগুলো এমনভাবে ওভাররাইট করে দেয়, যাতে এনক্রিপ্ট হওয়া ফাইলগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হয়।
একইভাবে ছড়ানো হচ্ছে ‘লাকি গোস্ট’ নামের আরেকটি ম্যালওয়্যার। এটি ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়া প্রিমিয়াম চ্যাটজিপিটি ইনস্টলার। এই ইনস্টলারে ‘ডিডব্লিউএন ডট এক্সই’ নামের একটি ফাইল থাকে, যা উইন্ডোজের মূল ‘ডিডব্লিউএম ডট এক্সই’ ফাইলের ছদ্মবেশে কাজ করে। ইনস্টলারে প্রকৃত কিছু ওপেন সোর্স এআই টুলও যুক্ত থাকে, যাতে ব্যবহারকারী সন্দেহ না করেন। কিন্তু ইনস্টলারটি চালু করলেই স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে যায় ‘লাকি গোস্ট’।
এই র্যানসমওয়্যার ১.২ গিগাবাইটের কম আকারের ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট করে এবং সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেমের ভলিউম শ্যাডো কপি ও ব্যাকআপ ফাইল মুছে দেয়। আক্রান্ত কম্পিউটারে রেখে যায় একটি র্যানসম নোট, যেখানে একটি ইউনিক আইডি দিয়ে ‘সেশন’ নামের একটি এনক্রিপ্টেড বার্তা প্রেরণ অ্যাপে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এ ছাড়া ইনভিডিও এআইয়ের ছদ্মবেশে ছড়ানো হচ্ছে ‘নুমেরো’ নামের আরও একটি নতুন ম্যালওয়্যার। এর ইনস্টলারে একটি ব্যাচ ফাইল, একটি ভিজ্যুয়াল বেসিক স্ক্রিপ্ট ও একটি এক্সিকিউটেবল ফাইল থাকে। ইনস্টলার চালু হলেই ব্যাচ ফাইলটি ইনফিনিট লুপে স্ক্রিপ্ট চালিয়ে ‘নুমেরো’কে সক্রিয় করে তোলে।
সি প্লাস প্লাস ভাষায় তৈরি ৩২ বিটের এই ম্যালওয়্যার উইন্ডোজ ডেস্কটপ ইন্টারফেসকে বিকল করে দেয় এবং কম্পিউটার কার্যত অচল করে ফেলে। কম্পিউটারে তখন শুধু ‘১২৩৪৫৬৭৮৯০’ লেখা দেখা যায়। গবেষকদের ধারণা, এটি প্রথম ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কম্পাইল করা হয়।
গুগলের মালিকানাধীন সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যান্ডিয়েন্ট জানায়, ভুয়া লুমা এআই, ক্যানভা ড্রিমল্যাব ও ক্লিং এআইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মের নাম ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট। এসব সাইটে ফেসবুক ও লিংকডইনে বিজ্ঞাপন চালিয়ে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। ম্যান্ডিয়েন্ট জানায়, এই পুরো ম্যালওয়্যার ছড়ানোর পেছনে রয়েছে ভিয়েতনামভিত্তিক হ্যাকার গোষ্ঠী ‘ইউএনসি৬০৩২’। এসব ভুয়া ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের এআই প্রম্পট দিয়ে ভিডিও তৈরি করতে বলা হলেও আসলে ইনস্টল হয়ে যায় ‘স্টার্কভেইল’ নামের রাস্ট ভাষায় লেখা একটি ড্রপার। এটি একে একে ‘গ্রিমপুল’, ‘ফ্রস্টরিফট’ ও ‘এক্সওয়ার্ম’ নামের তিনটি ম্যালওয়্যার কম্পিউটারে সক্রিয় করে। ম্যান্ডিয়েন্ট সতর্ক করে জানিয়েছে, এখন শুধু গ্রাফিক ডিজাইনার নন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যেকোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে আগ্রহী ব্যক্তিরাই বড় ধরনের সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সূত্র: দ্য হ্যাকার নিউজ